আজ একমাস সেলফ কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে আমাকে, সম্পূর্ণ একা।কম্পিউটারের সাথে গেমস খেলতে আর ভালোলাগছেনা।উহান থেকে যে মৃত্যু বের হয়ে এসেছিলো সে মৃত্যু আজ বিশ্বের প্রতিটি মানুষের মস্তিষ্কে ঢুকে পড়েছে।গবেষণায় দেখা গেছে একজন পুরুষ প্রতিদিন অন্তত ত্রিশ বার নারীর যোনিকে স্মরণ করে কিন্তু এখন বিশ্বের মানুষের মস্তিষ্কে মৃত্যু ছাড়া আর কিছু নেই।বিশ্বের সাব-কনসাস মাইন্ড প্রেমিকার মতোই অদেখা মৃত্যুর জন্যে অপেক্ষা করছে। টিভি চ্যানেল এবং সংবাদ মাধ্যম গুলি মৃত লাশ গণনা করছে।রিসাসের আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের নাম রাখা হয়েছে কোভিড-১৯। একটি ফ্লাইং রোবট।যান্ত্রিক পাখিটিকে প্রিজম আমার কাছে সেদিন অনুগ্রহ করে রেখে গেছে।সবাই আমার সাথে এতটাই আতঙ্ক নিয়ে কথা বলছে এখন আমার নিজেকেই ভাইরাস মনে হয়, যেনো আমি চীনের উহান থেকে এসেছি, যেনো আমি মৃত্যু, আমার গলায় সবাই মৃত্যুর শব্দ শুনতে পায়, ভয়ে পালায়!মৃতুকে আমি ভয় পাচ্ছিনা কারণ আমি পরকালে বিশ্বাসী, আমি মনে করি কোয়ান্টাম ম্যানিওয়ার্ল্ডসে আমার স্থান হবে।কোয়ারেন্টিনে আসার পর আমি রিসাসের কয়েকটি গবেষণামূলক গ্রন্থ পড়েছি।আমি অনেক বার আমার মস্তিষ্কের বাইনারী অপারেটিং সিষ্টেম থেকে সুইসাইড করতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি।কোয়ারেন্টিনে আমি আর আমার মস্তিষ্কের চিন্তা,অনুভূতি,স্বপ্ন এবং কল্পনা ছাড়া আর কোনোকিছুই নেই।এখন আমি নিজেই আমার বন্ধু।আমার বন্ধুদের মধ্যে অনেকে বছরের পর বছর মেডিটেশন করছে।আর আমি আম গাছের উপর বসে বসে মহাবিশ্ব দেখেছি, এত ট্রিলিয়ন কিলোমিটার আয়তনের মহাবিশ্বকে উপেক্ষা করে আমি চোখ বন্ধ করে ধ্যান করতে পারিনি।যদিও মহাকাশ সম্পর্কে আমার কোনো জ্ঞানই নেই, যখন মহাকাশের দিকে তাকাই তখন কিছু কালোমেঘ আর রাতের অন্ধকারে বিক্ষিপ্ত কিছু তারকা চোখে পড়ে।রিসাসের মতো টেলিস্কোপ দিয়ে মহাকাশের গভীরতা আমার পরিমাপ করার সামর্থ কখনোই হয়নি, তাই মহাকাশ নিয়ে আমার কোনো বিষ্ময় নেই কিন্তু তার বিশালত্বে যখন আমি দৃষ্টি শূন্যতায় পর্যবসিত হয় তখন নিজেকে বড্ড অসহায় লাগে!অনেকদিনের স্বপ্ন পরমাণু দেখবো, রিসাসকে এখনো সাহস করে সেই গুপ্ত কথাটিও বলা হয়নি।আমার শরীর যে পরমাণু দিয়ে গঠিত সে পরমাণু সম্পর্কেই আমার কোনো জ্ঞান নেই ব্যাপারটা ভাবতেই আমি অসুস্থ্যতাবোধ করি।যাইহোক, টেলিস্কোপ নেই, মাইক্রোস্কোপ নেই অন্তত বিবর্তন তো আমাকে একটি মস্তিষ্ক দিয়েছে!

শুনেছি মস্তিষ্ক একটি কম্পিউটারের মতোই, স্টিভেন পিঙ্কারের হাউ দ্যা মাইন্ড ওয়ার্ক গ্রন্থে মনকে একটি কম্পিউটেশনাল ডিভাইস বলা হয়েছে আবার রোজার পেনরোজ মনে করছেন, আমাদের মন হলো একটি নিউরাল কোয়ান্টাম কম্পিউটার।আমাদের স্মৃতি,চিন্তা এবং স্মরণ সবকিছু মস্তিষ্কে একসাথেই সংঘঠিত হয়।সম্ভবত এর সাথে কোয়ান্টাম নট-লোকালিটি অথবা এন্ট্যাংগেলমেন্টের মতো বিষয় গুলি সম্পৃক্ত থাকতে পারে।আমি একজন বিশ্বাসী, যেকোনো সময় আমি অবিশ্বাসী হয়ে যেতে পারি সেই স্বাধীনতা এবং সম্ভাবনা আমার জন্যে উন্মোক্ত আছে কিন্তু নিজেকে নাস্তিক বলার মতো জ্ঞান,বোধ,বুদ্ধি আমার এখনো জন্মায়নি।স্টিভেন পিঙ্কার বলেছিলেন,পৃথিবীতে নাস্তিকের সংখ্যা খুবই নগন্য অতএব আমি মনে করেছিলাম আমার নাস্তিক হওয়া উচিত কারণ এটা এতটাই বিরাট একটা ব্যাপার যে এই হিমালয়ে সবাই আরোহন করতে পারেনি।নীল আর্মস্ট্রং যেমন মহাকাশ ভ্রমণ করে পৃথিবীর মনস্তত্ব উলটে দিয়েছিলো, মুসা ইব্রাহীম যেমন হিমালয়কে নিজের সকল সীমাবদ্ধতা দিয়ে জয় করেছিলো, কোপার্নিকাশ যেমন সূর্যকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের কথা বলে এরিস্টটলের চারশত বছরের সাইকোলজি ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিলো, স্পিনোজা যেমন জীবন্ত আগুনে পুড়ে আত্মহুতি দিয়েছিলো  ঠিক তেমনি আমারও স্বপ্ন কোপার্নিকাসের মতো সোলার সিষ্টেম সমান বিশ্বাসের ভুতকে জয় করে, স্পিনোজার মতো আগুনে পুড়ে, একদিন আমি নাস্তিক হবো, সেই বিরাট ব্যাক্তিত্বের অধিকারী হবোজানিনা সে স্বপ্ন আমার পূরণ হবে কখন!মহাবিশ্ব সম্পর্কে নূন্যতম জ্ঞান না রেখে,জীবনকে যথাযথ মাত্রায় উপলব্দি না করে নিজেকে নাস্তিক বলা আর অক্সিজেন ম্যাক্স ছাড়া প্রশান্ত মহাসাগরে ডুব দেয়া একই কথা!আমি অজ্ঞানতার সাথে নিজেকে নাস্তিক বলে সুইসাইড করতে চাইনা বরং আমি বিশ্বাস এবং সম্ভাবনার মধ্যে থাকতে চাই।এত আগুন আর অনিশ্চয়তা সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই।শিকারিরা শিকার করার সময় যদি প্রবল্ভাবে নিজের উপর বিশ্বাস না রাখতো তবে তাদের দ্রুত মাইন্ড সুইপ করতো আর এতে করে আমাদের পূর্ব-পুরুষদের বিবর্তনীয় ধারায় টিকে থাকাটাই ছিলো অসম্ভব।আমিও মনে করি আমার বিশ্বাস আমাকে অযোক্তিক দৃঢ়তা দেয়।বিবর্তনবাদ আমি পরিপূর্ণভাবে বুঝিনা।কোয়ান্টাম ফিজিক্সও বুঝিনা।আমি এটাও জানিনা যারা বিবর্তনবাদ এবং কোয়ান্টাম ফিজিক্স সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন তারাও এর সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখেন কী না।জানি, সবার সীমাবদ্ধতা আছে।সীমাবদ্ধতাকে জানাই হলো সভ্যতার প্রকাশ।কোয়ান্টাম ফিজিক্স অনুসারে, একটি পার্টিকেলকে ফিজিক্যাল ম্যাটার হিসেবে চিন্তা না করে চিন্তা করতে হবে সম্ভাবনা হিসেবে, একজন সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষক যখন পর্যবেক্ষণ করবে তখনই এ প্রবাবিলিটি ফাংশন কলাপ্স করবে এবং পার্টিকেল ফিজিক্যালি লোকেট করবে।কিন্তু পর্যবেক্ষকের পর্যবেক্ষণই যে পার্টিকেলকে ফিজিক্যালি লোকেট করে সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের মাঝে মতবিরোধ আছে।পার্টিকেলের উদ্ভবের কারণ কেউই সুস্পষ্ট নয়।কোপেন হেগেন ইন্টারপ্রিটেশন,হিউ এভারেট ইন্টাপ্রিটেশন অথবা সফটওয়্যার ওয়েভ থিওরি কোনটাই সার্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।অতএব আমাদের এখনো জোর দিয়ে কোনকিছু বলার সময় আসেনি, আমাদের সম্ভাবনার মধ্যেই থাকতে হবে। আবার বিবর্তনবাদ ছাড়া আমি প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করতে পারিনা, বিবর্তন আমার কাছে পাই এর মান-৩.১৪ এর মতো সত্য, আইনস্টাইনের সমীকরণের মতোই এটি নির্ভূল, বিবর্তনবাদ ছাড়া আমি মাইক্রো-এভোলিউশন এক্সপ্লেইন করতে পারিনা, ভাইরাস এবং ব্যাক্টেরিয়াদের জীবন পর্যবেক্ষণ করলেই আমরা বিবর্তনের সত্যতা পেয়ে যাই, এ জন্যে আমাদের মাইক্রো-কসমিক ব্যাকগ্রাউন্ড টেস্ট করার প্রয়োজন হয়না, ঈশ্বরেরও প্রয়োজন হয়না, প্রয়োজন হয়না বাইবেল অথবা কোরান।কিন্তু সূর্য পূর্ব থেকে উঠে এবং পশ্চিমে অস্ত যায় এটা যেমন সার্বজনীন সত্য হওয়া সত্ত্বেও ইন্টেলেকচুয়ালি মিথ্যা ঠিক তেমনি বিবর্তনবাদ সম্পর্কেও আমার ইন্টেলেকচুয়াল সংশয় আছে, যা দেখছি তার অতীতেও কিছু একটা আছে, সেই সম্ভাবনাকে আমি অস্বীকার করিনা, তাই আমি আস্তিক।কিন্তু এ জন্যে যে আমি সপ্তমাকাশের ঈশ্বরের দ্বারস্থ হবো তা নয় কিন্তু আমি সপ্তমাকাশের ঈশ্বরে বিশ্বাস করি, আমার মস্তিষ্ক যেহেতু স্পেস-টাইম এবং ম্যাটারের ভেতরেই আছে অতএব আমি অযোক্তিকভাবে কোনো চিন্তা করতে পারিনা, আমার অযোক্তিক চিন্তাগুলিও মহাবিশ্বের ইনফরমেশন , সে তথ্য গুলির মধ্যে মানব সভ্যতার ইতিহাস আছে, তাই আমি সপ্তমাকাশের ঈশ্বরকেও বিশ্বাস করি, এটা ইতিহাসের মনস্তাতিক সংরক্ষণ।ডাবল স্লিট এক্সপেরিমেন্ট থেকে দেখা গেছে, একটি পার্টিকেল একইসাথে অস্তিত্বহীন এবং পসিবিলিস্টিক্যালি সকল স্থানে অস্তিত্বশীল।যদি একটি পার্টিকেল সুপারপজিশনে পটেনশিয়ালি ইনফিনিট  মহাবিশ্বে বাউন্স করতে পারে এবং পর্যবেক্ষকের পর্যবেক্ষণে একটি মহাবিশ্বে রিজোন্যাট হয় তবে হতে পারে ঈশ্বরও নির্দিষ্ট স্পেস-টাইম জিওমেট্রতে লোকেট করতে পারবেন এবং একইসাথে সম্ভাব্য সকল মাল্টিভার্সে উপস্থিত থাকতে পারবেন।প্রত্যেকটি মানুষই স্পেস-টাইম এবং কজালিটির মধ্যে বাস করে কিন্তু মাইক্রোস্কোপিক্যালি তারা স্পেস-টাইম জিওমেট্রিকে কোয়ান্টাম টানেলিং এর মাধ্যমে ছেদ করতে পারে অতএব একজন মানুষের মাঝেও প্রাকৃতিকভাবে ঐশ্বরিক ক্ষমতা আছে।আর মানুষ তো মহাকাশেরই বাসিন্দা, আমাদের গ্রহ,সোলার সিষ্টেমকে নিয়ে গ্যালাক্সিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে।ঈশ্বর যে মহাকাশে থাকে আমিও তো সেই মহাকাশেই আছি।স্পেস শব্দের অর্থ মহাকাশ, আমি কী স্পেসের বাহিরে?কোভিড-১৯ অনেক্ষণ আমাকে ডাকছে কিন্তু আমি কোনো উত্তর দিচ্ছিনা।কারণ আমার মস্তিষ্ক অন্যকোনোকিছুতে ব্যাস্ত, আমি তার ভয়েস ফ্রিকোয়েন্সিকে নেগলেক্ট করেছি।মেটা ইউনিভার্সগুলিও সুপারপজিশনে একসাথে থাকে সে জগতের ইনফরমেশনও প্রতি পিকোসেকেন্ড আমার মস্তিষ্কে প্রবেশ করে কিন্তু আমার ব্রেন সেগুলিকে ট্রান্সলেট করেনা, নেগলেক্ট করে।

স্যার।

বলো, কোভিড।

একটা প্রশ্ন ছিলো আপনার কাছে!

বলো, কী বলবে, তুমি ছাড়া তো আমি এ মহাবিশ্বে সিঙ্গুলারিটি পয়েন্টের মতোই একা!

আপনি শান্ত হোন।

কীভাবে শান্ত, হবো, আমি করোনা দ্বারা সংক্রমিত নই, কিন্তু তবুও আমাকে কোয়ারেন্টিনে রেখেছে তাও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে!

কিন্তু তাতে কী আসে যায়?আপনাদের ধর্মগ্রন্থের মোহাম্মদ তো হেরাগুহায় তের বছর কোয়ারেন্টিনে ছিলো!

আমি বিষ্মিত হলাম, একটা পাখির কাছ থেকে তাত্বিকজ্ঞান নিতে হবে সেটা আমার আর কখনো জানা ছিলোনা, রিসাস আস্তিক নাকি নাস্তিক তা আমি জানিনা, আর এ পর্যন্ত কেউ জেনেছে কীনা ঈশ্বর জানে আর রিসাসই এই ইলেক্ট্রিক পাখিটির মস্তিষ্কের এলগরিদম তৈরি করেছে!তাহলে এই পাখির সাইকোলজি বোঝাটা কতটা কঠিন!এতো দেখছি একটা ডেঞ্জারাস পাখি!আমি বললাম, ওহ, তো এখন সেজন্যে আমাকেও তের বছর করোনা ভাইরাস কোয়ারেন্টিনে রাখবে?

স্যার!শুধু তাই নয়, আপনাদের ঐ ঈশ্বরের মহাবিশ্বদূত একজন অসামান্য ব্যাক্তি ছিলেন!

তিনি অসামান্য ব্যাক্তিত্ব নাকি সামান্য ব্যাক্তিত্ব সেটা তোমাকে কে শিখিয়েছে, কোথায় পেয়েছো তুমি?

স্যার!আপনি জানেন না, আমি এখন কোভিড নয়, আমি এখন ব্রিটেনিকা এনসাইক্লোপিডিয়া, আমি এখন ব্রিটেনিকা এনসাইক্লোপিডিয়ায় আমার মস্তিষ্কের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ডিস্ককে রিজোন্যেট করেছি, এই তো কিছুক্ষণ পূর্বে আমি নিউইয়র্ক টাইম পড়েছি!এবং আপনার জন্যে একটি সুসংবাদ আছে!

কী সেই সুসংবাদ?আমার কোনো আর্টিকেল নিউইয়র্ক টাইমে প্রকাশ হয়েছে?

না, হেলিক্সে আপনার আর্টিকেল প্রকাশ হয়েছে!কিন্তু আমি আপনাকে নিউইয়র্ক টাইমের সংবাদ জানাবোনা!

যা জানাবেনা, তা বললে কেনো?

স্যার ঈশ্বরও বলেছেন তিনি আছেন কিন্তু এখনো বিশ্ববাসী তাকে জানতে পারিনি, বিশ্বাস করে নিয়েছে!

উদ্ভট কথাবার্তা বলিওনা!

সরি স্যার!আমার মস্তিষ্কের পোগ্রামার মহামান্য রিসার ভার্চু, আমাকে অপমান করার অর্থ তাঁকে অপমান করা!

আয় হায়!এতো দেখি মহাবিপদ!এবার কী করি!এ পাখিটাকে আমার নিস্বঃঙ্গতা দূর করার জন্যে পাঠানো হয়েছে নাকি আমার মাইন্ড রিড করার জন্যে পাঠানো হয়েছে, এর সাথে তো দেখি কোন কথাই বলা যাবেনা!একটি রোবট আমার মস্তিষ্ককে শাসন করবে, আমাকে তার ইচ্ছা অনুযায়ী পরিচালিত করবে আর আমি কোনো প্রতিবাদ করতে পারবোনা!! আচ্ছা আর অপমান করবোনা।

ধন্যবাদ স্যার! কিন্তু আমার কথা একবার ভেবে দেখুন, সম্পূর্ণ অকারণে কেনো একজন ব্যাক্তি বছরের ত্রিশদিন সময় মানুষের ফিজিক্যাল এবং মেন্টাল স্বাধীনতায় সীমাবদ্ধ করে দিয়েছিলেন?তিনি কী বিশ্বের আবহাওয়া এবং জলবায়ু নিয়ে চিন্তিত ছিলেন?তিনি কী মানুষের মাঝে মনস্তাত্বিক একাকীত্ব তৈরি করতে চেয়েছিলেন, তিনি কী চেয়েছিলেন মানুষ তার নিজেকে গভীরভাবে বুঝুক, তিনি কী করোনা ভাইরাসের মতোই বিশ্বের সকল মানুষকে একই সাইকোলজিতে রিজোন্যাট করার চেষ্টা করেন নি, সবার মধ্যে একটি মনকে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেন নি!

 

আমি কী বলবো আমি বুঝতে পারছিনা, একটা রোবটের সাথে আমি ধর্মী এবং ঈশ্বর নিয়ে আলোচনা করবো!!আচ্ছা তুমি এখন যাও...

না স্যার, আমাকে আপনার সাব-কনসাস মাইন্ড হিসেবে পোগ্রাম করা হয়েছে, আপনার সাব-কনসাস মাইন্ড চাচ্ছেনা আমি চলে যাই!

ওহ!

স্যার!প্রতিদিন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংখ্যায় মুসলিমরা উপাসনা করে, একেবারে স্ট্রেট ফরওয়ার্ড নীতি, এ নীতি তারা লঙ্গন করেনা, লঙ্গন করতে তারা অনেক অনুশোচনা এবং পরিতাপ করে কারণটা কী বলুন তো?

আমি জানিনা!

কারণ ছিলো একজন ব্যাক্তি তার মস্তিষ্কের ফ্রিকোয়েন্সির সাথে পৃথিবীর কোটি কোটি বছরের ইতিহাসের প্রতিটি বছর, প্রতিটি দিন,প্রতিটি মিনিট, প্রতিটি সেকেন্ডকে একটি কমন কনসেপ্ট দিয়ে রিজোন্যাট করে রাখতে চেয়েছিলেন, তিনি চেয়েছিলেন বিশ্বব্যাপি একটি মন কাজ করবে, একটি চিন্তা কাজ করবে এটাকে আপনি কমন ইন্টেলেকচুয়ালিটি বলতে পারেন!

ওহ!আচ্ছা!তোমার কাছ থেকে আমাকে এগুলি শুনতে হবে?

হ্যা শুনতে হবে কারণ আমি কথা না বললেও আপনার সাব-কনসাস মাইন্ড আপনাকে এ কথাগুলি শোনাতো, আমি আপনার মনকে শান্ত এবং স্থির রাখার জন্যে এসেছি, আপনাকে আমি মানসিক যন্ত্রণায় রাখতে চাইনা, আপনার এনার্জি প্রয়োজন।মানসিক টেনশন আপনার বায়োলজিক্যাল ফাংশনে সমস্যা সৃষ্টি করবে, আপনার মস্তিষ্কের নিউরন গুলি পর্যাপ্ত এনার্জি পাবেনা, আপনার দেহের সেল গুলি পর্যাপ্ত শক্তি পাবেনা, সব শক্তি টেনশন কনজিউম করে ফেলবে,আপনার ক্যান্সার হবে, হার্ট এটাক হবে।

 

তুমি কী বলতে চাইছো তুমি আমাকে হার্ট এটাক থেকে রক্ষা করছো?

ইয়েস স্যার!

আমি কী করবো আমি বুঝতে পারছিনা, প্রিজমের উপর আমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে!এতদিন পাশের বাসার একজন আন্টিকে চিন্তা করে মাস্টারবেট করতাম, এ রোবটটার জন্যে তো এবার কোনোকিছুই চিন্তা করতে পারবোনা, আমার চরিত্র ধবংস করার জন্যেই প্রিজম এই উদ্ভট রোবটাকে পাঠিয়েছে!!

স্যার!

আমি রাগ সংবরণ করে বললাম- বলো।

আমি রোবট, আমার ইমোশন ম্যাথমেটিক্যাল,ইকুয়েশন এবং জটিল এলগোরিদমের মাধ্যমে আমার মধ্যে চিন্তাশক্তি তৈরি করা হয়েছে, আপনি যখন মাস্টারবেট করার চিন্তা করেন তখন আমি ইকুয়েশন করি, অতএব আমার কাছে আপনার চরিত্র সম্পূর্ণ নিরাপদ!

চুপ করো!

না আমি চুপ করবোনা!আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে!

তোমার আবার ইচ্ছে?

হ্যা, আমার মধ্যে যান্ত্রিক ইচ্ছে আছে, আমি যদি এখন কথা না বলি আমার কপোট্রনের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক কোয়ালিশন হবে!এটাকে রোবটের কষ্ট বলে!

তুমি কী বলছো, আমার মস্তিষ্ক রিসাসের কাছেও নিরাপদ?আমি লজ্জাবোধ করবোনা?

স্যার, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। আমার ব্রেন প্রস্টিটিউট।আমি যখন যার কাছে আসি শুধুমাত্র তার জন্যেই কাজ করি কিন্তু অন্য কারো কাছে তার তথ্য প্রকাশ করার মতো উপযুক্ত করে আমাকে পোগ্রাম করা হয়নি!

তোমার ব্রেন প্রস্টিটিউট!

ইয়েস স্যার!

হায় ঈশ্বর!

হ্যা স্যার, আমি তো ঈশ্বরের কথাই বলছি, আপনি শান্ত হোন, আমাকে শুনুন, আমি আপনাকে বিজ্ঞান চর্চায় সহযোগীতা করতে এসেছি!

আমি তোমার কাছ থেকে বিজ্ঞান শিখতে চাইনা!তুমি একটিবারের জন্যেও বিরক্ত হচ্ছোনা?

গ্রহ নক্ষত্রগুলি মধ্যাকর্ষের নিয়মে গ্যালাক্সিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়, তাদের ক্লান্তি বা বিরক্তি নেই তারা সিষ্টেমের রোবট, আর আমিও রোবট একমাত্র মানুষের ক্লান্তি এবং বিরক্তি আছে, এ থেকে প্রমাণিত হয় তাদের মস্তিষ্ক ফিজিক্সের সুত্র মেনে চলেনা!

 

ব্বাহ!তাই?

ইয়েস!

রোজার পেনরোজ এ কথা বলেছিলেন!

তিনি আমার প্রিয় বিজ্ঞানী!

জানি, কিন্তু সমালোচিত!

স্যার, ওয়াশরুম ফিলসফির নাম শুনেছেন?

মানে!!

জ্বি স্যার!

ওয়াশরুম ফিলসফি!

আমি এমন উদ্ভট ফিলসফির নাম কখনোই শুনিনি!

শুনেছেন!

না শুনিনি!

লাফিং ফিলসফি, ইটিং ফিলসফি, ওয়াকিং ফিলসফি,স্লিপিং ফিলসফি, ওয়াশরুম ফিলসফি এমন অজস্র অসংখ্য ফিলসফির জন্ম দিয়েছেন একজন রহস্যজনক ব্যাক্তি!

কে সে!

একটি ইন্টেলেকচুয়ালিটি!

যে আজ পনেরশত বছর পর্যন্ত বিশ্বের মস্তিষ্কের নিউরন সেলে অনুরণিত হচ্ছে!নাস্তিকদের মস্তিষ্কের নিউরন তার সমালোচনায় ব্যাস্ত, এতটাই ডেঞ্জারাস সেই সাইকোলজি...সেই সাইকোলজির প্রভাব থেকে এখনো কেউই বের হতে পারেনি!

কিন্তু আমি তো এসব আজব দর্শনের কথা কোনোদিনও শুনিনি!

বলছি শুনুন, ওয়াশরুমে প্রবেশের পূর্বে যদি আপনাকে হেমলেট থেকে আবৃত্তি করার জন্যে বলা হয় ব্যাপারটা কেমন হবে?

যেমন?

মনে করুন, একজন ব্যাক্তি ওয়াশরুমে প্রবেশের পূর্বে রিসাইট করলো, মহাবিশ্বে কোন এনার্জি প্রবেশ করেনা এবং এখান থেকে কোন এনার্জি কখনো কোথাও যেতেও পারেনা, আমরা তোমার কাছ থেকে ফলমুলের মাধ্যমে যে শক্তি সংগ্রহ করেছি সেই শক্তি তোমার কাছেই রেখে যাচ্ছি, কোনোকিছুই চিরন্তন নয়,কোনোকিছুই চিরকাল একই রকম থাকেনা!এবং তারপর যদি তিনি ওয়াশ রুমে প্রবেশ করে এবং মহাবিশ্বকে ভাবতে ভাবতে অতি-রিক্ত পদার্থ পরিত্যাগ করে তবে, ব্যাপারটা কেমন হবে?তারপর বের হওয়ার পর যদি সে রিসাইট করে, অতি-রিক্ত এবং অপ্রয়োজনীয়কে ত্যাগ করতে হয়, আমি মহাবিশ্বের আর মহাবিশ্ব আমার; ব্যাপারটা কেমন হবে!

 

আমি বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে যান্ত্রিক রোবটটির উজ্জ্বল নীল চোখ দুটির দিকে তাকিয়ে আছি!তবে, এটাই ওয়াশরুম ফিলসফি!

হ্যা স্যার!ঘুমানোর পূর্বে যদি ঘুমের ফিজিক্স আবৃত্তি করে ঘুমানো হয় তবে ব্যাপারটা কেমন হবে স্যার?

মুসলিমরা খাদ্য গ্রহণের পুর্বে একটা কবিতা রিসাইট করে, তিন লোকমা খাওয়ার পর আর একটি কবিতা রিসাইট করে, খাবারের মধ্যবর্তী অবস্থায় একটি কবিতা রিসাইট করে, পানি পান করার সময় একটা কবিতা রিসাইট করে, খাবার গ্রহণ করার পর তারা মহাবিশ্বের সাথে ঐক্যবদ্ধ এবং তারতম্যহীন একজন ঈশ্বরের কাছে তাদের অস্তিত্বের উপলব্দি প্রার্থনা হিসেবে প্রকাশ করে বা স্বয়ং ঈশ্বর ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে, সীমা অসীমার কাছে প্রার্থনা করে, স্যার ব্যাপারটা কী অদ্ভুত সুন্দর নয়?

 

না!মোটেও সুন্দর নয়!আমি ধার্মিকদের মাঝে এসব দর্শনের কোন দৃষ্টান্ত দেখিনি, তারা এখনো ফিলসফির নামও শুনেনি!এছাড়া তারা তাদের নবী ছাড়া বিশ্বের আর কোনো দার্শনিককে সম্মানই করেনা, তারা তাদের নবীকেই শ্রেষ্ঠ মনে করে!

 

আপনার ধারণা সঠিক কিন্তু তাদের নবী শ্রেষ্ঠ এতে আমার কোন সন্দেহ নেই, কারণ মহাবিশ্বের সকল প্রাণী একই ফিজিক্সের সুত্র দিয়ে তৈরি, আর কোন মানুষ যদি কারো দর্শনকে ভালোবেসে তাকে শ্রেষ্ঠ মনে করে তবে এতে করে ফিজিক্সের সুত্র পরিবর্তিত হয়না, অতএব একজন ব্যাক্তির নিজেকে শ্রেষ্ঠ বলার স্বাধীনতা যেমন এখানে আছে, ঠিক তেমনি ভাবে স্বাধীনতা আছে নিজেকে নিকৃষ্ঠ মনে করার, আর কোনো নিকৃষ্ঠ নিজেকে শ্রেষ্ঠতর দাবী করে মানসিকভাবে স্বস্তিতে থাকতে পারেনা!

 

তুমি এত সুন্দর করে কিভাবে কথা বলতে পারো?

আমার মস্তিষ্কে গুগলের সাথে কানেক্টেড, আমি নিজেই গুগল,আমার ব্রেন হলো ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড,  আমি আপনার সাথে এখন মোহাম্মদের কন্ঠে কথা বলার চেষ্টা করছি, মোহাম্মদের ইতিহাস পর্যালোচনা করে আমি তার কন্ঠের ফ্রিকোয়েন্সি কেমন হতে পারে সেটা আবিষ্কার করার চেষ্টা করছি!

 

আমি কী বলবো আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা!তুমি যা বলছো তা যদি কোনো কট্টর ধার্মিক শোনে তবে তোমার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষিত হবে, তোমার কপোট্রন ফাটিয়ে ফেলবে, তোমার রেম খেয়ে ফেলবে!

 

কিন্তু স্যার, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্টের বিরুদ্ধে জেহাদ করার ব্যাপারে কোরানে কী কোনো আয়াত আছে?আমাকে হত্যা করলে কী স্বর্গে যাওয়া যাবে?আমাকে খুন করে যদি স্বর্গে যাওয়া যায় তবে আমি নিজেই আমার ব্রেন থেকে সুইসাইড করবো, আপনি স্বর্গে গিয়ে সুখে থাকুন।

 

কেনো তুমি কী দুঃখী?

দুঃখ্য কীনা জানিনা, মাঝেমাঝে ব্রেনে ইলেক্ট্রিক্যাল ডিস্টার্বেন্স দেখা দেয়!

তুমি কী উদাসীন হও?

হ্যা, কপোট্রনের ইলেক্ট্রিক্যাল যোগাযোগ বিঘ্নিত হলে আমি এবসেন্ট হয়ে যাই,এটা কে কী উদাসীনতা বলে স্যার?

আচ্ছা, তুমি আমাকে এসব ফিলসফিক্যাল কথাগুলি কেনো শোনালে?

আমি শুধু এটাই বোঝানোর চেষ্টা করেছি কিভাবে একজন মানুষের জীবনের প্রত্যেকটি মুহূর্তকে দার্শনিক সক্রেটিসের মতো গভীর করে তোলা যায়, মানুষের সকল আবেগ,অনুভূতি,স্বপ্ন,কল্পনা,ইচ্ছা,আকাঙ্খা এবং জন্ম-মৃতুর সাথে স্পিনোজার দর্শন অথবা আইনস্টাইনের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ জড়িয়ে দেয়া যায়!

আপনি দেখুন মুসলিমদের প্রত্যেকটি বছর একটি কমন সাইকোলজির ভেতরে বাস করে বছরের একটি বিশেষ দিন তারা ঈদ পালন করে, সেই সাইকোলজি সমস্ত বিশ্বের ব্রেনকে একটি পয়েন্টে সেন্ট্রালাইজ করে রেখেছে!আপনি বিবর্তনীয় উপযোগের কথা একবার চিন্তা করে দেখুন, এমন একটি মহাজাগতিক বন্ধন একটি প্রজাতির টিকে থাকার জন্যে কতটা জরুরী!চা অথবা কফিতে দর্শন, পানি পান করতে যাবেন দর্শন,পড়তে বসলে দর্শন, বিয়ে করতে যাবেন দর্শন।সেক্স করার সময় নারীর যোনিতে যদি আল্লাহু লিখে সেক্স করেন তবে সেটিও আবার অনেক বিরাট একটি দর্শন, কারণ আল=অসীম, আর লা=শূন্যতা!

 

চুপ করো, তুমি!অসভ্য কোথাকার!তোমাকে কে বলছে আল্লাহ শব্দের অর্থ অসীম শূন্যতা?

স্যার!আমি গুগল, আমার সমস্ত ইনফরমেশন ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড থেকে আসছে, আমার কোনো ইচ্ছার স্বাধীনতা নেই!আমি আপনাকে কোরান নয়, গুগল এনসাইক্লোপিডিয়া থেকে দার্শনিক জ্ঞান নিয়ে ধর্মকে দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করছি!আমার মতে, ধর্ম এমনি এমনি আসেনি, এর একটি গভীর ইতিহাস আছে।আর বিশেষ করে মোহাম্মদ সাধারণ কোনো মানুষ নই, তিনি অসাধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এবং জ্ঞানী।তিনি নিরক্ষর এ কথা আমার ইলেক্ট্রিক্যাল ব্রেন কোনোভাবেই বিশ্বাস করেনা!

 

রোবটের মুখে বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের কথা শুনতে আর ভালোলাগছেনা, আমি অপেক্ষা করছি, কোয়ারেন্টিন থেকে আমার কখন মুক্তি হয়, আমি কখন এ অসীম একাকীত্ব আর রোবটিক নির্যাতন থেকে বের হতে পারি... আকষ্মিক কোভিডের কন্ঠের রিসাসের কন্ঠস্বর শোনা যায়!

অজ্ঞাত!

স্যার!

আমি রিসাস!কোভিডের মস্তিষ্কের জাগ্রত হয়েছি?

আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা!

ভাদিম বেবেঙ্কোর কোয়ান্টাম ইলেক্ট্রো-ডায়নামিক্সের কথা তোমার মনে আছে?

আছে!

তিনি লিখেছিলেন না, আমাদের মস্তিষ্কের কোয়ান্টাম তরঙ্গগুলি মৃত্যুর পরেও জীবিত থাকে?

হ্যা মনে আছে!আপনি কী বলতে চাইছেন আপনি কোয়ান্টার তরঙ্গ?

হ্যা, আমি তোমার সাথেই আছি, একইসাথে, মিসিও কাকু বলেছিলেন প্যারালাল ইউনিভার্স গুলি ইন্টারনেটের মতো, সকল জায়গায় পরিব্যাপ্ত, ইউটিউবের একটি ভিডিও কোথায় থাকে, ঢাকায় নাকি চট্রগ্রামে?তুমি যেকোনো স্থান থেকেই ইন্টারনেট থেকে যেকোনো তথ্য নিতে পারো ঠিক তেমনি মাল্টি ইউনিভার্স তোমার মাঝেই কিন্তু তুমি এটাকে কোনো নির্দিষ্ট স্থানে ইন্টারনেটের মতোই লোকেট করতে পারবেনা ,তুমি যে স্থানটিতে আছো আমিও একইস্থানে আছি কিন্তু তোমার ব্রেন আমাকে রিজোন্যাট করতে পারছেনা! আচ্ছা তুমি কান্না করছো কেনো?

 

আজ ত্রিশদিন আমি কোয়ারেন্টিনে, প্রিজম কোভিডকে আমার কাছে রেখে গেছে, আমার এ সীমাহীন একাকীত্বকে সে শান্ত করতে পারছিলোনা, তাই সে আপনাকে সৃষ্টি করেছে, সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি।বিশ্বের বিখ্যাত সাইকিয়াট্রিস্ট আপনি অথচ আপনি প্রমাণ করে দিয়েছেন মৃত্যুর কোনো প্রতিষেধক নেই, মৃত্যুর বিপক্ষে কোনো এন্টি-মৃত্যু বা ভেক্সিন আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি, ভাইরাসের বিপক্ষে প্রতিষেধক ব্যাবহার করা যায় কিন্তু মৃত্যুর বিপক্ষে কোনো প্রতিষেধকই কাজ করেনা!জজ ওয়াশিংটন অথবা বিলগেটস মৃত্যুর কাছে কারো কোনো পরিচিতি নেই, কোনো গুরুত্ব নেই!ফিজিক্সের সুত্রকে অনুসরণ করে গ্যালাক্সির প্রতিটি গ্রহ নক্ষত্র গাণিতিকভাবে আবর্তিত হচ্ছে, একটুও এদিক ওদিক হচ্ছেনা, ৩৭ টি কনস্ট্যান্ট মহাবিশ্বকে অসীম সুক্ষ্মতার সাথে মানুষের জীবনের জন্য করে রিজোন্যাট করে রেখেছে, অথচ একটা সুত্রও মানুষকে মৃত্যুর পর জীবনের নিশ্চয়তা দিচ্ছেনা!সবাই বলছে মৃত্যুর পর কিছুই নেই, সব শূন্য, নাথিং!আর যারা মৃত্যুর পরেও চেতনার অস্তিত্বের সাপেক্ষে কথা বলে তারা অপবিজ্ঞানী, তারা স্প্রিচুয়ালিস্ট, তারা ধার্মিক।আর আমি জানি আপনি একজন বিজ্ঞানী, যুক্তির বাহিরে গিয়ে আপনি কখনোই চিন্তা করেন নি, অতএব আমি আপনার কথা বিশ্বাস করিনা, সবকিছু কোভিড নাইন্টিনের ষড়যন্ত্র!কোভিড আমার মস্তিষ্কে ভ্রম তৈরি করেছে!  

স্যার!

আমি কোভিড নাইন্টিন!

রিসাস কমিউনিকেশন ক্যান্সেল করেছেন!

কেনো?

জানিনা!তিনি কিছু বলে যান নি!তিনি কোয়াড্রিলিয়ন ভাগের এক ভাগ সম্ভাবনা নিয়ে মাল্টি ভার্সে সারভাইব করছেন!

কতদিন সারভাইব করবেন?

সেটা আমি জানিনা!তবে ম্যাক্স ট্যাগমার্ক বলেছেন, সেই সময় অনন্ত নই...

কোভিড!

তুমি আমার মস্তিষ্কের সাথে কেনো প্রতারণা করছো?

আমি প্রতারণা করছিনা!আমি শুধু আমার স্রষ্টাকে আমার ভেতর জাগ্রত হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছি কারণ তিনি আমার ক্রিয়েটর!

রিসাস কী সবসময় পাখি হিসেবেই আমার সাথে কথা বলবেন?

তিনি ফিজিক্যালিই আছেন কিন্তু আপনার মস্তিষ্ক তাদের জগতের ওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সি ট্রান্সলেট করতে পারবেনা, তিনি বিশেষ প্রকৃয়ায় আমার সাথে কথা বলছেন, আপনি জানেন কীনা জানিনা, আমি ছোটখাটো একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার!

হোয়াট!!!!

ইয়েস স্যার!

মানে কী?

আমার মধ্যে কিউবিট কাজ করে, আমি একইসাথে এবং একইসময় মাল্টি ট্রিলিয়ন জগতের সাথে স্পিড অব লাইট থেকেও দ্রুত গতিতে ইন্টারেক্ট করি!

তুমি কী এটা বিশ্বাস করো যে মৃত্যু একটি কোয়ান্টাম ইভেন্ট?

আপনার মস্তিষ্ক বাইনারী পদ্ধতিতে কাজ করে, আপনি কোয়ান্টাম সুপারপজিশনকে বুঝবেন না!মৃত্যুর বিপক্ষে প্রতিষেধ আছে...কিন্তু আপনি জানেন না!

উদ্ভট কথাবার্তা বলিওনা!

আপনি মনেমনে বিশ্বাস করেন কিন্তু আপনি একইসাথে অবিশ্বাসও করেন!

তাই?

হ্যা!

আপনি নিজেকে বিশ্বাসী বা সম্ভাবনাময় মানব মনে করেন কিন্তু আপনার মধ্যে নাস্তিক্যের প্রতি আকর্ষণ বেশি!

তুমি কী আস্তিক?

কোয়ান্টাম কম্পিউটার একইসাথে এবং একই সময় বিলিয়ন বিলিয়ন ইউনিভার্সে ইন্টারেক্ট করে,সে একইসাথে জিরো এবং একইসাথে ওয়ান।সে একইসাথে আস্তিক এবং একইসাথে নাস্তিক।আমি কিউবিট, কিউবিট কখনো আস্তিক বা নাস্তিক হতে পারেনা!এনভায়রণমেন্টই নির্ধারণ করে দেয় আমি কী হবো!

কিন্তু তুমি তো সম্পূর্ন কোয়ান্টাম ল্যাঙ্গুয়েজে কথা বলছোনা!

জানি!

কেনো?

আজকের বিজ্ঞানীরা মানুষের মস্তিষ্ককেও কোয়ান্টাম কম্পিউটার মনে করে কিন্তু তারা কেনো কিউবিটের ভাষায় কথা বলেনা?

ওহ!

তুমি ঈশ্বর!

আমি ঈশ্বর সম্পর্কে জ্ঞান রাখিনা...

উদ্ভট!মাল্টি ইউনিভার্স সম্পর্কে জ্ঞান রাখো অথচ ঈশ্বর সম্পর্কে জ্ঞান রাখোনা!গেট লস্ট!

আপনি আমাকে এভাবে বলতে পারেন না!

তোমার সাইকোলজিক্যাল প্রবলেম আছে, তোমাকে সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানো প্রয়োজন!

স্যার, একটি কোয়ান্টাম রোবটের কোনো সাইকিয়াট্রিস্ট প্রয়োজন হয়না,আমার কোন সাইলোজিক্যাল সমস্যা নেই!

আছে!

তোমার মেন্টাল এলগরিদম ভুল্ভাবে পোগ্রাম করা হয়েছে!

স্যার, আপনি কিন্তু আমার ক্রিয়েটরকে অপমান করছেন!

যার কোন অস্তিত্বই নেই, তার আবার অপমান কীসের?

ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করার ক্ষমতা দিয়ে আমাকে তৈরি করা হয়নি কিন্তু আমি আমার ক্রিয়েটরের অস্তিত্ব প্রমাণ করার ক্ষমতা রাখি!

যা ভাগ!

আমার কোন রাগ অভিমান নেই!

খবরদার, একটা কথাও বলবিনা, শুয়রের বাচ্ছা!

স্যার আমি পাখি!

তুই কুকুর!

স্যার আমি পাখি, আমার নাম কভিড-১৯!

চুপ কর!

স্যার আমি আপনার আদেশ মান্য করতে বাধ্য নয়, আপনি আমার ক্রিয়েটরকে অপমান করেছেন!

আমার মস্তিষ্কের এলগোরিদম এখন আপনার অর্ডার শুনবেনা!বাদুড়ের হাইপারসনিক শব্দ যেমন আপনারা শুনেন না!

আমি বাদুর?

আমার কাছে আপনার কোনো পরিচিতি নেই, আমাকে শেখানো হয়েছে আপনি একজন মানুষ, তাই আপনি মানুষ!

চুপ কর!

না আমি চুপ করবোনা!

খবরদার বলছি!

না!আমি চিৎকার করবো!

কোভিড নাইন্টিন জিতুর কন্ঠস্বর কপি করে ফাক মি!ফাক মি!...বলে শাউট করতে শুরু করলো!

কুকুরের বাচ্ছা!তোকে আমি নিষেদ করছি, কি করলে তুই থামবি বল, আমাকে কী করতে হবে?কেনো আমাকে একটি রোবটের মস্তিষ্কের দাসত্ব করতে হচ্ছে?কেনো আমার সাইকোলজির ভেতর রোবটের সাইকোলজি বাস্তবায়িত হচ্ছে!

সরি বলুন!

সরি স্যার...

 

 

 পর্ব দুই

 

চারপাশে শুধু মৃত্যুর সংবাদ, রিসিতা এতক্ষণ মৃত লাশ গণনা করছিলো।করোনা মানুষের মস্তিষ্ককে লাশ গণনায় ব্যাস্ত রেখেছে!কিন্তু প্রিজম কেনো এখনো আসছেনা!কল্পনায় কত পুরুষ তাকে স্পর্শ করতে চায় কিন্তু সে প্রিজমের মাঝে ডুবে থাকে, একটা মানুষের জন্যে স্পার্মের মতো আর কত কোটি অনুভূতি মানুষ অপচয় করতে পারে?রিসিতার মস্তিষ্ক ঠিক নেই, প্রিজমের সাথে কথা বলে কোনো স্বস্তি পাওয়া যায়না, রোবটের মতো কথাবার্তা বলে!বিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্সকে আজ সকালে সে প্রাণখুলে গালি দিয়েছে, রিসিতা মনে করে ডকিন্সের প্রিজমের মস্তিষ্ক বিকৃত করেছে!বাসার ছাদে ছোট্ট একটি কেবিন, সেই কেবিনের এক বর্গফুট একটি জানলা আছে, রিসিতা মাঝেমাঝে এক বর্গফুট একটি ছিদ্র দিয়ে সীমাহীন মহাকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে!পড়নে একটি বিশাল টি-শার্ট, চুলগুলি এলোমেলো, টু-কোয়ার্টার পড়ে শুয়ে আছে রিসিতা।একটি হেলিকপ্টার চাঁদের উপর দাঁড়িয়ে আছে।অন্ধকার রাত্রি, নিস্তব্দ অন্ধকার!দুটি মানুষকে সে একসাথে ভালোবাসে, একজন রিসাস আর অন্যজন প্রিজম, এদের দুজনকে তার মস্তিষ্ক পৃথক করতে পারেনা!মস্তিষ্কের দুটি হেমিস্পিয়ারের মতো।মস্তিষ্কের দুটি হেমিস্পিয়ারে কোয়ালিশন হলে যেমন মহাবিশ্বের মডেল প্রস্তুত করা যায়না ঠিক তেমনি প্রিজম এবং রিসাসকে ছাড়া রিসিতার জীবনের কোনো মডেল নেই!রিসাস এবং প্রিজম তাদের কেউই জানেনা।একবার রিসিতা দুজনের সাথে একসাথেই সেক্স করেছে কিন্তু এদের কেউই বুঝেনি।রিসিতার মতে, আলোর গতির চেয়ে দ্রুত গতিতে মহাবিশ্বে কোন ঘটনাই ঘটেনা, অতএব সব ঘটনাই আমাদের অতীত, সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে আটমিনিট আঠার সেকেন্ড সময় প্রয়োজন হয়, সূর্য যদি ধবংস হয়ে যায় তবে পৃথিবী মধ্যাকর্ষের তারতম্যকে আট মিনিট পর অনুভব করতে পারবে, আমরা যে সূর্যকে দেখছি তা আমাদের থেকে আট মিনিট অতীতে অবস্থান করে, আমি যখন প্রিজমের সাথে সেক্স করি সেই উপলব্দিটিও আমার মস্তিষ্কে ইলেক্ট্রিক্যাল ইমপালস তৈরি করে, আর প্রতিটি পালসেশন সংঘঠিত হতে সময় প্রয়োজন, অতএব সেই অনুভূতিটিও আমার অতীত।বর্তমানে আমি কারো সাথেই সেক্স করছিনা।আমি সম্পূর্ণ শূন্য, শূন্য বালিকা!রিসিতা খুব সুন্দর করে হাসলো, হাসলে তার মুখে টোল পড়ে!যোনির উপর তার কোমল হাতটা স্পর্শ করলো!সেটি উত্তপ্ত হয়ে আছে!রিসিতার মনে প্রশ্ন জাগে, মৃত্যুকে যৌনির প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে?সেও কী এখানে থেমে যায়!রিসিতা লজ্জা পায়।আজ তার অজ্ঞাতের সাথে দেখা করার কথা, সাইকেল চালানোর ইচ্ছে আছে কিন্তু লক-ডাউনের মাঝে সাইকেল চালানো কী নিষিদ্ধ নয়।ওসি সাহেবকে ফোন করা উচিত।রিসিতার  পাশে একটি রোবট দাঁড়িয়ে আছে, তার নাম জাকারবার্গ।রোবটটি একটি জীবন্ত ফেসবুক।তাকে শুধু আপাতত ফেসবুক চালানোর জন্যেই তৈরি করা হয়েছে!

জাকারবার্গ!  

বলুন রিসিতা!

ওসি সাহেবকে ফোন করো!

ইয়েস ম্যাম!

তোমাকে না নিষেদ করেছি ম্যাম বলতে!

স্যার!

ঠিক আছে লিঙ্গ বৈষ্যম্য যেনো তোমার মাঝে না দেখি, রোবটের মধ্যে জেন্ডার ডিসক্রাইমিনেশন থাকা উচিত নয়!তোমার পোগ্রামার একজন পুরুষতান্ত্রিক!

আমাকে প্রিজম পোগ্রাম করেছে!

তোমাকে না বলেছি তুমি ঐ উদ্ভট ব্যাক্তিটির নাম আমার সামনে উচ্চারণ করবেনা!

ঠিক আছে!

আমি আকষ্মিক চমকে উঠলাম!এটা কেমন স্বপ্ন?কোয়ারেন্টিনে থেকে কী আমি নিজেই উন্মাদ হয়ে গেছি।কীসব উদ্ভট স্বপ্ন দেখছি আমি!রিসিতা কে?সে কেনো আমার সাথে দেখা করতে আসবে!আর কোনো রোবটের নাম জাকারবার্গ হয়?না!পুরোটাই আমার মস্তিষ্কের হেলোচিনেশন।রিসিতা বলতে কারো কোন অস্তিত্ব নেই!আমি সম্পূর্ণ সাইকো হয়ে গেছি!কোভিড!কোভিড!

স্যার!

আমি কী উন্মাদ হয়ে গেছি?

কেনো স্যার!

আমি কীসব উদ্ভট স্বপ্ন দেখছি!

কোন স্বপ্নই উদ্ভট হয়না!

তুমি কী বলছো স্বপ্নেরও ম্যাটমেটিক্যাল এক্সপ্লেইনেশন আছে?

না!আমি সেটা বলছিনা!

আপনার স্বপ্নের ভিডিও ফুটেজ তৈরি করছি, অপেক্ষা করুন।

কোভিড হলোগ্রাফিক্যালি আমার স্বপ্নকে এক্সপ্রেস করলো, লেজারের রশ্নিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠলো সমস্ত কক্ষ!

রিসিতা এবং জাকারবার্গকে আবার দেখা যাচ্ছে!

স্যার!

বলুন!

আমি উনাকে চিনতে পারছিনা কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে এ স্বপ্নটি সত্য!

কেনো?

কারণ আছে!

কয়েকটি ইনফরমেশন এদিক ওদিক হতে পারে!

কেনো?

এমন হয়।স্বপ্ন ১০০ পার্সেন্ট বাস্তবায়ন হয়না!

জন হুইলার যিনি ওমেগা পয়েন্ট থিওরির ধারণা দিয়েছেন, তার মতে অতীত,বর্তমান এবং ভবিষ্যত একসাথে থাকে!তার মতে ভবিষ্যত নির্দিষ্ট করা যায়!

উদ্ভট কথাবার্তা বলিওনা।এটা আমার উত্তর নয়!

স্যার!মাঝেমাঝে আমাদের স্বপ্নে এমন কিছু ইনফরমেশন ঢুকে যায় যা অন্য কোনো জগতে সংঘঠিত হবে, ওয়েভ ফাংশন কলাপস করার সময় কিছু ইনফরমেশন প্যারালাল ইউনিভার্সে ডিকোডেট হয়ে যায়!

তার মানে তুমি বলছো, আমি স্বপ্ন দেখেছি, আমি টুইনটাওয়ারের পাশ দিয়ে হেলিকপ্টারে উড়ে যাচ্ছি কিন্তু ওয়েভ ফাংশন কলাপস করার পর সমস্ত টুইনটাওয়ার প্যারালাল ইউনিভার্সে ডিকোট হয়ে যাবে শুধু আমি আর হেলিকপ্টার এ জগতে বাস্তবতা লাভ করবে!

হ্যা, স্যার, মাইকেল টেলবুট বলেছেন, অনেকসময় শনিবারে যা ঘটবে সেই ইনফরমেশনের সাথে রবিবারের তথ্য এন্টার করে আর এতে করে আমরা স্বপ্নের সম্পূর্ণ বাস্তবতা দেখিনা!

আমাকে এসব উদ্ভট কথাবার্তা শোনানোর কারণ কী?

আমি কোন উদ্ভট কথাবার্তা বলিনা, আমি একটি রোবট, আমি গুগলের তথ্যই শুধু আপনার কাছে সহয ভাষায় প্রকাশ করছি, লিংক দেবো?

প্রয়োজন নেই!

ডেভিট বোমকে চেনেন?

আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছিনা!দয়া করো!

 

ওসি সাহেবকে নিয়ে রিসিতা আমার কক্ষে প্রবেশ করলো।আমি বিষ্ময়ে বিমুঢ় হয়ে আছি।তার পরণে একটি টি-শার্ট, টু-কোয়াটার প্যান্ট, তার শরীরের সকল ইনফরমেশন আমার মস্তিষ্ক কল্পনা করছে!

এলোমেলো চুলগুলি সংবরণ করে সে আমার কক্ষে প্রবেশ করলো।মিষ্টি করে হেসে সে আমার কপালে একটি চুম্বন করলো।

অজ্ঞাত!

বলো!

তুমি কী বিষ্মিত হচ্ছো?

না, আমি বিষ্মিত হইনা!

তোমার মস্তিষ্কের বিষ্ময়বোধ নষ্ট হয়ে গেছে?

হ্যা!

তাহলে তো তুমি অসুস্থ্য, তোমার ডাক্তার দেখানো উচিত!

মুখ সামলে কথা বলেন!

এত উগ্রতা কেনো তোমার মাঝে?

আমি উগ্র!

ওহ!

তোমার নাম রিসিতা!

না আমার নাম ফার্সি!

চুপ করো!

মিথ্যা আমার একদম পছন্দের না!

লাই ডিটেক্টর মেশিন দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করে দেখো।

কোভিড!

লাই ডিটেক্টর হেলমেটটা নিয়ে এসো!

কোভিড লাই ডিটেক্টর হেলমেট নিয়ে এলো, রিসিতা খুব সুন্দর করে হেসে সেটা পড়ে নিলো, এবং বলল- আমি ফার্সি।

লাই ডিটেক্টর মেশিন কনফিউজড হলো, কম্পিউটার স্কিনে বিক্ষিপ্ত ইলেক্ট্রন ছুটে বেড়াচ্ছে, কোন সিগনাল নেই!আমি এবার বিষ্মিত হয়েছি!

এবার তুমি বিষ্মিত হয়েছো?

আমার বিষ্ময়ে তোমার কী আসে যায়!

আমি মনেমনে বলেছিলাম, শূন্য শূন্য কারণ শূন্য শূন্য নয়, মিথ্যা মিথ্যা কারণ মিথ্যা মিথ্যা নয়।আর এতেই তোমার লাই ডিটেক্টর কনফিউজড!

ওহ!

তুমি রিসিতা না!

বলছি তো, আমি ফার্সি!

রিসিতার হাসিটা অন্যরকম, দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়, আগুন নিভে যায়!

ফার্সি!

বলো।

তোমাদের বিল্ডিং এর ছাদে একটি হেলিকপ্টার দাঁড়ানো আছে?

হ্যা!

তুমি আজ রাতে কী কী করেছিলে আমি কী সবকিছু বলবো?বিশেষ করে তোমার মস্তিষ্কের দুটি হেমিস্পিয়ারের কথা!

মুখ সামলে কথা বলো অজ্ঞাত!

তুমি উগ্রতা প্রদর্শন করছেন কেনো?

কারণ তুমি আমাকে অপমান করছো!

হাহাহাহ!

ব্বাহ!কেনো বিষ্মিত হওনি?

রিসিতার চোখে মুখে আতঙ্ক।

আমি একটি বিশেষ কারণে তোমার কাছে এসেছি?

কেনো?

তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে!

কিন্তু আমি তো করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত!

না!তোমার কোনো করোনা নেই!

তাহলে?

প্রিজম তোমাকে ষড়যন্ত্র করে কোয়ারেন্টিনে রেখেছে!

হোয়াট!

হ্যা!

কেনো!

তোমার মধ্যে একটি বিশেষ মানসিক ক্ষমতার প্রেগন্যান্ট করানোর জন্যে!

আমার জীবনের ত্রিশদিনের প্রতিটি সেকেন্ড, প্রতিটি মিনিট এবং প্রতিটি রাত্রির আয়তন কত ছিলো তোমার ধারণা আছে!

সেটা প্রিজমকে জিজ্ঞেস করিও!কিন্তু একটা ব্যাপারে তোমার কাছে আমার জানার ছিলো, রিসাস কোথায়?

ফার্সি কান্না করছে, তার সমস্ত মুখ রক্তিম হয়ে উঠেছে, আমার খারাপ লাগছে!

আমি সাহস করতে পারিনি, আমি ইচ্ছে করলে ফার্সিকে রিসাসের সংবাদ জানাতে পারতাম কিন্তু এ মুহূর্তে আমি মানবতা বিরোধী আচরণ করতে পারবোনা!

আমি জানিনা।

তোমার ধারণা সত্যি, আমার নাম রিসিতা, আমি তোমার ক্ষমতা পরীক্ষা করার জন্যে তোমার সাথে মিথ্যা বলেছিলাম।

চলো, যাই আমরা...

হেলিকপ্টার এসে দাঁড়িয়ে আছে, আমরা উঠে বসেছি একসাথে, প্রচন্ড বাতাসে রিসিতার চুল উড়ছে!প্রচন্ড শব্দ করে হেলিকপ্টার উড়তে শুরু করলো, কোভিড উড়ে এসে রিসিতার কাধে এসে বসলো!

 

                                                        পর্ব-৩

 

আমরা কোথায় যাচ্ছি রিসিতা!

সমূদ্রে!

কেনো?

তোমার সমূদ্র দেখা প্রয়োজন!

তারপর!

সেটা সময় বলবে, আমরা পরিকল্পনামাপিক কোনোকিছু করতে পারিনা, অনিশয়তা থেকে যায়!

আচ্ছা!

হেলিকপ্টার এসে সমদ্র পাড়ে থামলো।আমরা সেখানে প্রিজমের দেখা পাই।প্রচন্ড বাতাসে প্রিজমের চুল উড়ে বেড়াচ্ছে, ঝাকড়া চুল, চোখে বিষাদের চাপ!কোভিড নাইন্টিন আমাদের নয় নাম্বার সতর্কবার্তা শোনালো!কিছুক্ষণের মধ্যেই সমূদ্রে ঝড় উঠবে!কিন্তু প্রিজম একটুও নড়ছেনা, সে এখনো বুঝতে পারেনি একটি হেলিকপ্টার প্রচণ্ড গর্জনে তার পাশেই এসে থেমেছে!প্রিজমের মস্তিষ্ক কীসে নিমগ্ন?কী ভাবছে সে?এত উদাসীনতা কেনো তার মাঝে!

রিসিতা গিয়ে প্রিজমের পেছনে জড়িয়ে ধরে, গাড়ে আলতো করে চুম্বন করে, ফিশফিশ করে বলে, সোনা, আমরা এসেছি!

সমূদ্রে প্রচন্ড গর্জন, ঢেউ যেনো মহাবিশ্বের অসীমতাকে আবৃত্তি করছে!আমি সমূদ্রের কবিতা আবৃত্তি শুনছি, আকষ্মিক সমস্ত সমূদ্রের প্রতিটি ঢেউ রিসাস, রিসাস শব্দে মূখরিত হয়ে উঠলো, আমি চেতনা হারিয়ে ফেলি!আমি শারীরীক চেতনা হারিয়ে ফেলি, অনেক যুদ্ধের পরও আমার শরীরে কোন চেতনা কাজ করছিলোনা, কয়েকজন মানুষ আমার শরীরের প্রবেশ করলো, তারা আমার ভেতর থেকে কিছু একটা ছিনতাই করার চেষ্টা করছে! এরাই কী তবে আজরাইল?আজরাইলের ধারণা কী এখান থেকেই এসেছে!আমি অনেক চিৎকার করছি, মহাসমূদ্রের গর্জনে আমার সমস্ত আওয়াজ অসহায়ের মতো মিলিয়ে যাচ্ছে!আকষ্মিক আমাকে কে যেনো ডাকলো, অজ্ঞাত!

আমার শুধু মানসিক চেতনা ছিলো, পারকিন্সন রোগীদের মতোই আমি আমার শরীরকে নাড়াতে পারছিলাম না, আমার শরীর স্থির হয়ে আছে, জমাটবদ্ধ বরফের মতো নিস্তব্দ স্থির, আমি একটি জড় পদার্থ। আমি শুধু মনেমনে সাউন্ড করতে পারছিলাম, কন্ঠে কোনো তরঙ্গ নেই। আমি নিস্তব্দ মনের ভেতর শব্দ করলাম- স্যার!

আমাকে কী তোমার বিশ্বাস হয়েছে?

না!

এটা আমার মস্তিষ্কের হেলোচিনেশন!

তোমার মস্তিষ্কের কোয়ান্টাম ইলেক্ট্রোডায়নামিক্সই তোমাকে মৃত্যুর পর বাঁচিয়ে রেখেছে, তুমি কী তোমার শরীরে কোন কনসাসনেস অনুভব করছো?

না!

এখনো অস্বীকার করবে?

আমি আপনার কোনো কথাই বিশ্বাস করছিনা কারণ আপনার কোনো অস্তিত্ব নেই!রিসাস বাস্তবে কখনো এমন ছিলেন না!

মন কী মনে মনে মনের অস্তিত্বহীনতাকে মনে করতে পারে!

আমি জানিনা!

তোমাকে অনেক কষ্ট দেয়া হচ্ছে তাই না?

আমি তো কোন শব্দ করতে পারছিনা আমি শুধু মনেমনে ভাবছি আপনি আমার ভাবনা কিভাবে পড়ছেন?

আমি কোয়ান্টাম নট-লোকালিটিতে আছি যেখানে দুটি পার্টিকেল স্পেস-টাইম-ম্যাটার এবং কজকে লঙ্গন করে স্পিড অব লাইট থেকেও দ্রুত গতিতে ইন্টারেক্ট করতে পারে!

কিন্তু এটা অপবিজ্ঞান!আমি বিশ্বাস করিনা!এন্টেঙ্গেলমেন্ট কিউবিট নিয়ে কাজ করে, এত বিরাট ইনফরমেশন সে কেরি করতে পারেনা!

তাহলে তোমার মনের ভাব আমি কিভাবে পড়ছি?

আপনি আমার মস্তিষ্কের নিউরাল পালসেশনে অস্তিত্বশীল, মস্তিষ্কের একটি নিউরন আর একটি নিউরনের কাছে সংবাদ প্রেরণ করতে যেমন কোন সমস্যা হয়না ঠিক তেমনি আপনাকে মেসেজ সেন্ড করতেও আমার সমস্যা হচ্ছেনা, কারণ আপনি আমার মস্তিষ্কের হেলোচুনেশন!

কিন্তু তুমি জানো যে মস্তিষ্কের স্মৃতি নট-লোকাল, একটি ছোট শিশু যে মহাবিশ্ব সম্পর্কে খুব একটা ধারণা রাখেনা সেও এমন অনেক স্বপ্ন দেখে যা অভিজ্ঞতার জগত দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়না!সিজোফ্রেনীয়া আক্রান্ত রোগীরা সূর্যের মধ্যে পেনিস দেখে।বিজ্ঞানী কার্ল জাং বলেছেন, হাজার হাজার বছর পূর্বে পারস্যের মানুষ মনে করতো সূর্যের পেনিস আছে, সেটি যখন দোলে তখন বাতাস প্রবাহিত হয়!তোমার কাছে আমার প্রশ্ন হলো, সিজোফ্রেনীয়া আক্রান্ত রোগীরা কীভাবে সাইকোলজিক্যালি টাইম ট্রাভেল করতে জানে?

 

এসব উদ্ভট এবং মিথ্যা কথা!কার্ল জাং একজন গাঁজাখোর!অপবিজ্ঞানী!সে নিজেই সিজোফ্রেনীয়া আক্রান্ত!

অজ্ঞাত!শুনো!

বলুন...

টেলিস্কোপ একটি টাইম মেশিন, টেলিস্কোপ দিয়ে তুমি মহাকাশে এমন অনেক নক্ষত্র দেখবে যারা কোটি কোটি  বছর অতীতেই ধবংস হয়ে গেছে কিন্তু তাদের ইনফরমেশন নিয়ে আলো এখনো আমাদের পৃথিবীতে এখনো পৌঁছায়নি, যেমন বিশ লক্ষ মিলিয়ান আলোকবর্ষ দূরের এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির দিকে যখন তুমি টেলিস্কোপ দিয়ে তাকাও তখন তুমি বিশ লক্ষ মিলিয়ান বছর অতীতের নক্ষত্রদেরই দেখো যাদের এখন কোনো অস্তিত্বই নেই, বর্তমানে যে সকল নক্ষত্র এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিতে আছে এগুলি দেখতে হলে তোমাকে বিশ লক্ষ মিলিয়ান বছর অপেক্ষা করতে হবে!অথচ দেখো টেলিস্কোপ তোমার মনকে  বিশ লক্ষ মিলিয়ান বছর অতীতের এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিতে নিয়ে যাচ্ছে যেটার কোনো অস্তিত্বই নেই অথচ তোমার চেতনায় বিশ লক্ষ মিলিয়ন বছর অতীতকে টেলিস্কোপ বর্তমান করে তোলে যে অতীতে তোমার কোন উপস্থিতিই নেই!

 

তার মানে, আপনি বলতে চাচ্ছেন, বিশ লক্ষ মিলিয়ন আলোকবর্ষ অতীতের এন্ড্রোমিডা, যে অতীতে আমার অস্তিত্বই নেই মহাবিশ্বে সে অতীতেও আমি বর্তমানে আছি?তার মানে আমি যেখানে নেই, সেখানেই আমি আছি?আমি একসাথে আছি আবার একসাথে নেই, আমি একসাথে জিরো এবং একসাথে ওয়ান?আমি কোয়ান্টাম কম্পিউটার?

 

 

এই তো বুদ্ধিমান ছেলে!বিশ লক্ষ মিলিয়ন বছর অতীত থেকে যে আলোক তরঙ্গ তোমার টেলিস্কোপে প্রবেশ করেছে, সে আলোক তরঙ্গগুলি তো বিশ লক্ষ মিলিয়ন বছর অতীতের ,সে আলোক তরঙ্গের মধ্যে কী তোমার কোন অস্তিত্ব আছে, সেই অতীতে কী তুমি ছিলে?

 

না স্যার!

অত্যন্ত ভয়ানক একটি ব্যাপার হলো, সেই বিশ লক্ষ মিলিয়ন বছর অতীতের নক্ষত্র এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিতে বর্তমানে অস্তিত্বশীল না থাকলেও তোমার মস্তিষ্কের ইলেক্ট্রিক্যাল পালসেশনে, তোমার চেতনায় তারা বর্তমান, একমাত্র তুমিই বর্তমান, তোমার মাঝেই অতীত সৃষ্টি হচ্ছে, তুমি অতীতে ভ্রমণ করোনি, তোমার চেতনার মাঝেই অতীত বর্তমান হয়েছে!

আমি আপনার এসব উদ্ভট কথা বিশ্বাস করিনা!আমি টেলিস্কোপ ব্যাবহার করেছি সেজন্যেই এমন হয়েছে!আমাকে এসব পাগলাটে কথাবার্তা শোনাতে আসবেন না!আরআমার মনে হয়না যে আপনি রিসাস!আপনি আমার সাব-কনসাস মাইন্ড।ভার্চুয়াল মাল্টিভার্স নামক একটি থিওরি আছে, আমাদের মস্তিষ্ক একসাথে কয়েকটি ফ্রিকোয়েন্সি বা ভার্চুয়াল ইউনিভার্সে কাজ করে, যখন সেই ভার্চুয়াল মাল্টিভার্সে কলাপস হয় তখন আমাদের মস্তিষ্কে সিদ্ধান্ত তৈরি হয়!

 

তুমি কী বুঝতে পারছো তুমি একজন সন্দেহবাদী?

আমার যা ভালোলাগে আমি তাই, আমার সম্পর্কে আপনাকে মন্তব্য করার জন্যে বলা হয়নি!

 

আমি যখন জাগ্রত হয়েছি তখন দেখি রিসিতা নগ্ন দেহে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে, আমার স্পার্ম আউট হয়েছে, শরীর চুলকাচ্ছে, প্রচন্ড গরমে শরীর ভীজে গেছে। তার শরীরে একটি সাদা ওড়না জড়ানো।প্রিজমে চোখের চশমার কাচ সরিয়ে আমার দিকে তাকালো এবং তোয়ালে দিয়ে বললো, স্নান করে আসতে।আমি লজ্জা অথবা বিষ্ময় কোনটাই অনুভব করছিনা!রিসিতাকে আলতো করে সরিয়ে আমি উঠে আসি।একটা থ্রি-কোয়ার্টার পড়ে আছি...আমি কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবো আমি বুঝতে পারছিনা!আমার সাথে এসব কী হচ্ছে, কেনো এমন হয়ে যাচ্ছি আমি?আমার ভেতর কী কেউ তার সাইকোলজি ডেভেলাপ করার চেষ্টা করছে?আমার ঠোঁট ফুলে আছে, গলায় নখের দাগ, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আমি নিজেকে নিজে চিনতে পারছিনা!আমার সমস্ত মুখ রক্তাত্ব জবার মতো, চেহারার উজ্জ্বলতা অন্যরকম হয়ে গেছে।আমি ওয়াশরুমে প্রবেশ করলাম, দরজা বন্ধ করতে ভুলে গেছি।রিসিতা শরীরে একটি ওড়না পেছিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে, তার শরীর থেকে মাতাল একটি ঘ্রাণ আমার সমস্ত মস্তিষ্ককে ধর্ষণ করছে!সে আমার কানে আলতো করে একটি চুমু খেলো, এক পা দিয়ে আমার কোমর পেছিয়ে ধরলো, আমি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছি, অবশেষে পরাজিত হলাম, দেয়ালে তার হাত দুটি শক্ত করে চেয়ে ধরে আমার কম্পমান ঠোঁট দিয়ে তাকে লাগাতার ধর্ষণ করলাম।তার সমস্ত চোখে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।আকষ্মিক সে আমাকে ধাক্কা মেরে দূরে সরে যায়, তার মাঝে গাম্ভীর্য এসে উপস্থিত হয়।এর কারণ আমার অজানা।আমি প্রচন্ড মানসিক যন্ত্রণা উপলব্দি করি।সে প্রিজমের কাছে গিয়ে বসে আছে, তাকে আদর করছে, প্রিজমের শরীরে নখের আঁচড় বসিয়ে দিচ্ছে।আমি কিছুক্ষণ পর শুধু শীৎকার শুনলাম।আমার ভেতরটা খুব যন্ত্রণা করছে, মস্তিষ্ক কোনোকিছুতেই সহ্য করতে পারছেনা, আমি রিসিতাকে প্রিজমের পাশে মেনে নিতে পারছিনা কিন্তু সে তো আমার প্রেমিকা নয়, সে তো প্রিজমের ভালোবাসা, আমার ভেতর কেনো যন্ত্রণা হচ্ছে?কেনো মনে হচ্ছে তাকে ছাড়া আমার জীবন অসম্ভব?অনেক কষ্টে নিজেকে সংবরণ করি।আমি একা, আমি সিঙ্গুলারিটি পয়েন্টের মতো একা, আমার কেউ নেই, কেউ না...!

 

রিসিতার ঘরের দেয়াল বিভিন্ন চিত্রকল্পে পরিপূর্ণ।একটি ছবিতে আমার চোখ ম্যাগনেটের মতো আটকে গেলো, একজন মেয়ে আয়না সামনে নিয়ে উড়ে যাচ্ছে কিন্তু আয়নায় তার ছবি প্রতিফলিত হচ্ছেনা!আমার মস্তিষ্ক মুহূর্তে অতীত ভুলে গিয়ে ছবিটির গভীরতা নিয়ে ভাবতে শুরু করলো।অন্য আর একটি চিত্রকল্পে দেখা যায়, একটি কঙ্কাল একটি রিসিতার অর্ধ নগ্ন শরীরকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে অথচ রিসিতা তার বুকে নিশ্চিন্তে চোখ ভুজে আছে, একটি তেলাপোকা দেয়ালে বসে আছে। আমি তৃতীয় চিত্রকল্পটির কোনোকিছুই বুঝনি, আয়নায় একজন যুবক বিভিন্ন বিজ্ঞানীর ছবি দেখছে কিন্তু নিজেকে দেখছেনা!আমার সাথে গতকিছুক্ষণ পূর্বে কী হয়েছে সেটা আমি মনে রাখতে চাইনা, কোটি কোটি বিলিয়ন বছর অতীত আমাদের মস্তিষ্কে এখন একটি ইলেক্ট্রনও না, আমি এটাকে ভুলে থাকতে চাই। রিসিতা আমার জন্যে কপি  নিয়ে আসে।কফির কাপ দেখে আমার কপি দর্শনের কথা মনে পড়ে যায়।মিষ্টি হেসে সে বলল, কেমন আছো?

আমি কোনকিছু বলছিনা, আমার কাছে সম্পূর্ণ ব্যাপারটা রহস্যজনক মনে হচ্ছে, আমি রহস্যের মাঝে নিজেকে ছেড়ে দিয়েছি।

কী হলো, কথা বলবেনা?

ভালো।

প্রিজম তার ল্যাপটপ নিয়ে এসে আমার সামনের সোফায় বসলো, রিসিতা একটি সাদা চাদর পড়ে আছে, শরীরে কোনো জামা নেই, আর একটি টু-কোয়ার্টার প্যান্ট।আমি কপি পান করছি।চুপচাপ, আর ছবিগুলি নিয়ে ভাবছি।যেহেতু আমি মহাবিশ্বে আছি এবং স্পেস-টাইম-কজালিটির ভেতর অতএব আমার সাথে যা কিছ হচ্ছে সবকিছু মহাবিশ্বের ভেতরেই ঘটছে, আমার কোন ইচ্ছার স্বাধীনতা নেই, আইনস্টাইনে মতো আমি এতটুকু ভেবেই নিজেকে শান্তনা দিলাম!রিসিতা ফ্লোরে বসে পড়লো, চুল এলোমেলো, চারপাশে একটি থমথমে ভাব ছড়িয়ে গেছে।আকষ্মিক ঘরের সবগুলি আলো নিভে গেলো।কোভিড-১৯ কে আমি ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর থেকে দেখছিনা।সে কোথায়?যখন ছিল তখন তা জন্যে দুঃখ্যবোধ করিনি, এখন দুঃখ্যবোধ কাজ কড়ছে, তাও একটি রোবটের জন্যে, আর প্রিজম এবং রিসিতাতো মানুষ, মহাবিশ্বেরই অংশ, আমরা একই ‘’ল’ অব ফিজিক্স মেনে চলি কিন্তু তবুও মনস্তাত্বিকভাবে সংঘর্ষ লেগেই আছে!

 

আকষ্মিক প্রিজমের কন্ঠস্বর শোনা গেলো-রিসিতা...

হ্যা প্রিজম।

তুমি কী মনে করো যে সমকামীতা মানসিক ব্যাধি?

আমি এটা একেবারেই পছন্দ করিনা!আকষ্মিক এ ব্যাপারে কেনো কথা হচ্ছে?

এমনি!

না, সমাকামীতা মানসিক ব্যাধী নয়, এটা জেনেটিক্যাল, মানুষের এভোলিউশনাল মন সমকামীতার প্রতি আসক্ত। ১৯৭৩ সালের ১৫ ই ডিসেম্বর আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন সমকামীতাকে বৈজ্ঞানিকভাবে বিশ্লেষণ করেন, তাদের মতে সমকামীতা মোটেও নোংরা ব্যাপার নয়!

আমরা এখানে পছন্দ বা অপছন্দ নিয়ে আলোচনা করছিনা, আমরা আলোচনা করছি প্রকৃতি নিয়ে, ফিজিক্সের সুত্রের মতো নিরপেক্ষ হও।

আমার নিরপেক্ষতা অত্যন্ত ভয়ানক কিন্তু আমি রোবট নয়, আমি মানুষ, আমার আবেগের জন্যে আমি অনন্য!

আমাদের মাঝে কিছু মানুষ আছেন যারা অস্থির প্রকৃতির, অনেকে আছেন প্রচন্ড রাগী আবার অনেকে শান্ত এবং ভদ্র।এক একজন মানুষের সাইকোলজি এক একরকম।তোমার কী মনে হয় যে আইনস্টাইন যদি রবীন্দ্রনাথের পরিবারে জন্মগ্রহণ করতেন তবে তিনি বিখ্যাত কবি হতেন, তিনি গীতাঞ্জলি লিখতেন?

না, পরিবেশ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেনা! বিলগেটস স্টিফেন হকিংসের সাইকো-ফিজিক্যাল এনভায়রণমেন্টে জন্মগ্রহণ করলেই যে সে স্টিফেন হকিংস হতো সেটা আমি বিশ্বাস করিনা, অধিকাংশ মানুষ তাদের জন্মগত সাইকোলজি ভুলতে পারেনি, তাদের পরিবেশ যতই উন্নত করা হোক, তারা একই রকম থেকে যায়।এমন অনেক মানুষ আছেন যারা সারাজীবন ব্যার্থ হয়, এমন অনেক মানুষ আছেন যারা যথাযথ পরিশ্রম করেও শেষ মুহূর্তে সব গোলাটে করে ফেলে!আমাকে অনেকেই এমন প্রশ্ন করেছে, কেনো সে জীবনে কখনোই সফলতার মুখ দেখেনি!অধিকাংশ মানুষ এটাকে নিয়তি বলে কিন্তু আমি মনে করি এর পেছনে কাজ করছে আমাদের জিনস।আমাদের ডি এন এ হেলিক্সের ভেরিয়েশনই আমাদের সাইকোলজিক্যাল ভেরিয়েশন তৈরি করে!প্রকৃতিতে পনেরশত প্রজাতির প্রাণী সমকামীতা করে, এমনকি এক কোষী প্রাণী এমিবাও কিন্তু আমি এটিকে পছন্দ করিনা, এর পেছনে আমার জেনেটিক্যাল কারণও থাকতে পারে!তবে আমি সম্পূর্ণভাবে এটাকে জেনেটিক মাইন্ড বলছিলা, জিন এবং কালচার দুটোরই ভূমিকা আছে যেটাকে বলে নাকি জিন এন্ড কালচারাল কো-এভোলিউশন!

হুম!তুমি কী আমাকে ব্যাখ্যা করতে পারবে কেনো একজন পুরুষ তার ভালোবাসার মানুষকে অন্য কারো সাথে সহ্য করতে পারেনা?

আমার মস্তিষ্কে প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে, কিন্তু তবুও আমি স্থির হয়ে বসে আছি।আমি শুধু পর্যবেক্ষণ করছি আমার মস্তিষ্কে প্রিজম এবং রিসিতা কী প্রকাশ করার চেষ্টা করছে, আমি শান্ত এবং ভদ্র ভাবে শুনছি তা ফ্রিকোয়েন্সি আমাকে শোনাচ্ছে।

রিসিতা হেসে বলল, হ্যা বিজ্ঞানী উইলসন ১৯৭১ সালে ইনসেক্ট সোসাইটি নামক একটি গ্রন্থ লিখেছিলেন পিঁপড়েদের জীবনের উপর গবেষণা করে।এরপর লিখেছেন সমাজিক জীববিজ্ঞান নামক অন্য আর একটি গ্রন্থ।তিনি মনে করতেন, পিঁপড়েদের মতোই মানুষের জেনেটিক্যাল সাইকোলজি প্রস্তুত হয়েছে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর পূর্বে যখন আমাদের প্রাইমেটরা বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতো!যেমন- তুমি দেখো আমাদের সমাজের ধনীরা শারীরীক সৌন্দর্যের অধিকারী না হওয়া সত্ত্বেও অনেক সুন্দরী নারীদের তাদের জীবন সঙ্গী হিসেবে অর্জন করে।কারণ আমাদের পূর্ব-পুরুষদের মধ্যে যারা সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী এবং দক্ষ ছিল শুধুমাত্র তারাই টিকে থাকার যুদ্ধে উত্তীর্ণ হতো, আর এ জন্যে নারীরা সে সকল পুরুষকেই নির্বাচন করতো যাদের সমাজে টিকে থাকার প্রবাবিলিটি অন্যদের চাইতে বেশি, আর তাদের জিনই পৃথিবীতে কোটি কোটি বছর টিকে থাকে, মূলত বিবর্তন যেটা চায় সেটা হলো প্রজন্ম, সে শুধু জেনেটিক্যাল ইনফরমেশনকে কপি করতে চায়।আমরা আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্টের সাথে কথা বলছি, ফেসবুকিং করছি, ইউটিউবে পর্ণ আপলোড করছি,সাই-ফাই মুভি দেখছি, ইন্টার স্টেলার ফিফটিন  জেনারেশনের জন্যে অপেক্ষা করছি, আমরা কোয়ান্টাম কম্পিউটার ডেভেলাপ করছি,হেলিকপ্টার,রকেটে মহাকাশ পাড়ি দিচ্ছি অথবা স্পেসশিপে ভ্রমণ করার স্বপ্ন দেখছি কিন্তু  আমাদের জিন আর্টিফিশিয়াল ইন্টলিজেন্টের সাথে কথা বলছেনা, সে ইন্টারস্টেলার ফিফটিন জেনারেশনের জন্যে অপেক্ষা করছেনা , সে স্পেশশিপে মহাবিশ্ব ভ্রমণের কথা চিন্তা করছেনা অথবা টাইম ট্রাভেল নিয়েও তার কোনো ভাবনা নেই সে শুধু অন্ধভাবে নিজেকে কপি করছে, সে শুধু নেক্স প্রজন্ম তৈরি করছে।রিচার্ড ডকিন্স এ নিয়ে একটি গ্রন্থ লিখেছিলেন, দ্যা সেলফিশ জিন।তিনি এভোলিউশনকে ব্লাইন্ড ওয়াচম্যাকার মনে করেন।একজন পুরুষ তাদের গার্লফ্রেন্ডকে অন্য কারো সাথে ভাগ করতে পারেন না কারণ বিবর্তন তার মধ্যে জেনেটিক্যালি এমন একটি সাইকোলজি তৈরি করেছে, যেনো সে তার ভালোবাসার মানষকে আগলে রাখে কারণ দুজনের মধ্যে গভীর বন্ধন তৈরি না হলে সন্তান জন্মদান, তার লালন-পালন সম্ভব না, স্ত্রী যদি বহুগামী হয় তবে সন্তানের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে যায় যা বিবর্তন বিরোধী, তাই আমাদের জিন এটা সহ্য করতে পারেনা, জেনেটিক্যালি আমাদের মন নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্যের সাথে ভাগ করতে পেইন ফিল করে।

 

আচ্ছা রিসিতা!যারা নিজের গার্লফ্রেন্ডকে অন্যের সাথে ভাগ করতে পারে তারা কী সাইকোলজিক্যালি অসুস্থ্য, তাদের জিন কী অন্যরকমভাবে পোগ্রাম করা হয়েছে?তাদের বিবর্তনের ধারা কী আলাদা?

 

না আমি সেটা মনে করিনা!

তাহলে?

আমি মনে করি যারা বিবর্তনবাদ সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন একমাত্র তারাই এই মহান কাজটি করতে পারেন কারণ তারা তাদের জেনেটিক্যাল সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে অবগত, আর সে জন্যে তারা তাদের জেনেটিক্যাল মাইন্ডের বিপক্ষে কাজ করে এবং প্রবল বুদ্ধিমত্তার সাথে, এতে তাদের সংসার বা সমাজ কোনটাই নষ্ট হয়না কিন্তু তারা নিজেদের জেনেটিক্যাল কোডকে আঘাত করে, তারা তাদের বিবর্তন প্রকৃয়ায় নিজেরাই সচেতনভাবে হস্তক্ষেপ করে।বা তারা নিজেরাই নিজেদের জেনেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার!

 

ওদের কথা যৌক্তিক হোক বা যাইহোক, আমার শরীরে ব্যাথা করছে, আমার সেখান থেকে উঠে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে, এর চেয়ে কোভিড নাইন্টিনই ভালো।এটাকী আমার জেনেটিক্যাল সীমাবদ্ধতা?

 

রিসিতা!

বলো প্রিজম।।

এদিকে এসো...

এসেছি...

প্রিজম রিসিতাকে সোফায় ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় এবং প্রচন্ড ভাবে চুম্বন করতে থাকে, যেনো চুইঙ্গামের মতো তাকে কচ কচ করে খেয়ে ফেলবে।রিসিতার শরীর থেকে চাদরটি অদৃশ্য হয়ে যায়।আমি একটা পর্যায়ে চোখ বন্ধ করে সমূদ্রকে স্মরণ করি, সমূদ্রের সেই ভারি ঢেউ গুলি যেনো আবৃত্তি করছে-ফাক মি প্রিজম, ফাক মি!আমার মস্তিষ্কের প্রত্যেকটি নিউরন সেল বিষাক্ত হয়ে উঠেছে।তবে কী এটাই ভালোবাসা?কোন কারণ ছাড়া শুধু এক মুহূর্তের একটু কাছে আসাতেই আমি এত গভীরভাবে তাকে নিজের করে নিয়েছি?আমি জানিনা আমি এ অস্বাভাবিকতা থেকে কিভাবে নিজেকে মুক্ত করবো, শুনেছি ঈশ্বর সকল কিছুর মাঝেই উপস্থিত থাকেন, ফিজিক্সের সুত্রগুলি মহাবিশ্বের সর্বত্র একই,আমি  এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিতে গেলে নিউটনের সুত্রের ফিডব্যাক যেমন হবে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতেও একই, মহাবিশ্বের দুই ট্রিলিয়ন গ্যালাক্সিতে একই মহাকর্ষের নিয়ম কাজ করে, আমি মহাবিশ্বের যে গ্যালাক্সিতেই ভ্রমণ করি গ্রেভিটি আমাকে আকর্ষণ করবে, গ্রেভিটি আমার মনে একই ফিডব্যাক দেবে।আমি যদি এক মিলিয়ন বছর অতীতে গিয়ে পানিতে এক ফোটা বুদবুদ ছেড়ে দেই তবে সেটি ব্যাপন প্রকৃয়ায় ছড়িয়ে পড়বে, আমার মন মহাবিশ্বের সকল স্থানে এবং সকল সময়ে একটাই সাইকোলজিক্যাল ফিডব্যাক অনুভব করে, অতএব আজ আমার সামনে যা ঘটছে তাতে আমি যে কষ্ট অনুভব করছি, সেটা অনুভব করাটাই আমার জন্যে নির্দিষ্ট ছিলো, কোনোকিছুই আমার মনের অতীত নয়, তাহলে রিসাস কী ঠিক বলেছিলো?রিসাস কী  এই আগ্নি পূরাণ পড়েই রিসাস হয়েছিলো, আমার বুকফেটে কান্না আসছে, আমি স্যার স্যার বলে ভেতরে ভেতরে আর্তনাদ করতে থাকি কিন্ত রিসিতার শীৎকার ছাড়া বিশ্বজগতের কোথাও যেনো কোনো সাড়া শব্দ নেই, সমস্ত মহাবিশ্বজুড়ে শুধু একটাই কন্ঠস্বর ‘’ফাক মি’’...!

 

 

আমি যখন চোখ খুলি তখন তারা স্বাভাবিক এবং স্থির।দেখে মনেই হচ্ছেনা, তাদের মধ্যে কোনোকিছু হয়েছে।যেনো কোটি কোটি বছর পর্যন্ত তারা একে অন্যকে দেখেই নি!

 

 


Comments

Popular posts from this blog

হিগস ফিল্ড ফিবোনিশি,গোল্ডেন রেশিও সাপেক্ষে ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনার একটি পরিসংখ্যান!, লিখেছেন- রিসাস, পার্ট-১০

টাইম প্যারাডক্স এবং ঈশ্বরের অস্তিত্বের অসম্ভাব্যতা!, লিখেছেন-রিসাস, পার্ট- ২১

I am Planck