আপনার চিন্তা কী আপনার মস্তিষ্কের নিউরাল স্ট্রাকচার, বডি সেল এবং জিন পরিবর্তন করতে পারবে? লিখেছেন- রিসাস, পার্ট-৪২


DNA And The Holographic Universe | Unariun Wisdom








আপনার মস্তিষ্কের চিন্তাগুলির কী এনার্জি আছে?আপনি হাত দিয়ে যেমন একটি ম্যাটারকে একটি লোকেশন থেকে অন্য লোকেশনে স্থানান্তর করতে পারেন ঠিক তেমনি আপনার চিন্তাগুলির পক্ষে কী সম্ভব কোন অবজেক্টকে মুভ করা? মজার ব্যাপার হলো আজকের বিজ্ঞান আমাদের  বলছে, সোলার সিষ্টেমের গ্রহ নক্ষত্রের কক্ষপথকে আমরা শুধুমাত্র মেন্টাল শক্তি দিয়ে পরিবর্তন করতে পারিনা ঠিকই কিন্তু আমাদের চিন্তার পক্ষে সম্ভব আমাদের দেহের রাসায়নিক বিক্রিয়াকে প্রভাবিত করা!শুধু তাই নয় আধুনিক বিজ্ঞানের অন্যতম একটি শাখা এপেজেনেটিক্স আমাদের বলছে বিষ্ময়করভাবে আমাদের মস্তিষ্কের চিন্তা আমাদের দেহের একশত ট্রিলিয়ন সেলকে চেঞ্জ করে দিতে পারে, শুধু তাই নয় আপনি যদি আপনার চিন্তার প্যাটার্ন পরিবর্তন করেন তবে আপনার জেনেটিক্যাল ফ্রিকোয়েন্সিও পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে!!ব্যাপারটা দারুন না?একজন নাস্তিক অথবা মুক্তমনার চিন্তার প্যাটার্ন তার বডি সেল তৈরি করতে পারে , এমনকি তার জেনেটিক্যাল একটিভিটিজ বা এক্সপ্রেসনও পরিবর্তন করে দিতে পারে!!

Every minute of every day, your body is physically reacting, literally changing, in response to the thoughts that run through your mind.
__ Debbie Hampton

ব্যাপারটাকে অবিশ্বাস্য রকমের অসম্ভব মনে হচ্ছে, তাই না?গবেষণায় দেখা গেছে যে, আপনি যখন কোনকিছু নিয়ে চিন্তা করেন তখন সেই অদৃশ্য চিন্তাগুলি আপনার মস্তিষ্কের নিউরো-ট্রান্সমিটার গুলিকে রিলিজ করতে ফোর্স করে, কেমিক্যাল মেসেঞ্জার যার কারণে এটি নিজের সাথে নিজে কমিউনিকেট করতে পারে এবং আপনার নার্ভাস সিষ্টেমের সাথে।নিউরো-ট্রান্সমিটার ভার্চুয়ালি আমাদের সমস্ত বডি ফাংশনকেই কন্ট্রোল করে, হরমোন থেকে শুরু করে ডাইজেশন ,আনন্দের ফিলিংস, বেদনা অথবা চাপ!



এছাড়াও তথাকথিত প্লাসিবো ইফেক্টের উপর গবেষণা করে দেখা গেছে, প্লাসিবো ইফেক্ট আর কিছুই না এটি আমাদের মস্তিষ্কের চিন্তাশক্তির প্রয়োগ মাত্র, যেটাকে অটোসেন্সর হিলিং সিষ্টেমও বলা হয়!একজন রোগীকে উন্নত মাপের চিকিৎসকের মাধ্যমে ফেইক অপারেশন করে তার মনের মধ্যে বিশ্বাস জন্ম দেয়া হয়, যে মানসিক বিশ্বাস তার ‘’  brain chemistry and circuitry ‘’  সাথে এসোসিয়েটেড যা দূর্বল ইমিউন সিষ্টেমকে রিভাইভ করে, হরমোন লেভেল উন্নত করে এবং উত্তেজনার পরিমাণ হ্রাস করে!!


লায়েন এম সি ট্যাগার্ট তার ‘’ In The Intention Experiment: Using Your Thoughts to Change Your Life and the World’’ লিখেছেন-

A sizable body of research exploring the nature of consciousness, carried on for more than thirty years in prestigious scientific institutions around the world, shows that thoughts are capable of affecting everything from the simplest machines to the most complex living beings. This evidence suggests that human thoughts and intentions are an actual physical "something" with astonishing power to change our world. Every thought we have is tangible energy with the power to transform. A thought is not only a thing; a thought is a thing that influences other things.


চিন্তা কী ব্রেন নিউরাল স্ট্রাকচার তৈরি করতে পারে?


প্রত্যেকটি চিন্তাই আমাদের ব্রেনে নিউরো-ক্যামিক্যাল পরিবর্তন নিয়ে আসে  কিছু কিছু পরিবর্তনের ডিউরেশন একেবারেই কম আবার এমন অনেক পরিবর্তন তৈরি করে যা দীর্ঘকালীন।উদাহরণস্বরুপ, যারা কৃতজ্ঞতার চর্চা করে তাদের মস্তিষ্কে ডোপামিপের মতো নিউরোট্রান্সমিটার ঢেউ বেড়ে যায়,তারা সধারণ সতর্কতা এবং ব্রাইটনেস অনুভব করে।হয়তো এর সাথে আরো অনেক নিউরোকেমিক্যাল নরপাইনপ্রাইন জড়িত থাকতে পারে!



''In one study, college students deeply in love were shown pictures of their sweeties, and their brains become more active in the caudate nucleus, a reward center, giving them that in-love swoon. When they stopped looking at the pictures, their reward centers went back to sleep.''



এমনকি আমাদের মস্তিষ্কর চিন্তাগুলি নিউরাল স্ট্রাকচার স্থায়ীভাবেও পরিবর্তন করতে পারে।আপনার মনকে চিন্তা করুন ইনফরমেশনের মুভমেন্ট হিসেবে যা আপনার নার্ভাস সিষ্টেমের ভেতর প্রবাহিত হয়।আমরা জানি চিন্তাগুলি এক একটি ইলেক্ট্রিক্যাল সিগনাল যা সামনে এবং পেছনে রান করে।এবং অধিকাংশ ইলেক্ট্রিক্যাল সিগনাল আমাদের মধ্যে অবচেতনভাবেই সংঘঠিত হয়।যখন মস্তিষ্কে ইনফরমেশন ট্রাভেল করে তখন নিউরনগুলি ফায়ার হয়।এক এক ধরণের চিন্তার প্যাটার্ন এক এক রকম নিউরাল ফায়ারিং তৈরি করে।এবং এই চিন্তার প্যাটার্নগুলি নাকি আসলেই আমাদের নিউরাল স্ট্রাকচার পরিবর্তন করতে পারে!

যদি আসলেই আমাদের থট প্যাটার্ন আমাদের মস্তিষ্কের নিউরাল স্ট্রাকচার চেঞ্জ করতে পারে তবে নিশ্চয় আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের নিউরাল স্ট্রাকচার এবং সক্রেটিসের ব্রেন নিউরাল স্ট্রাকচার সম্পূর্ণ আলাদা হবে!তাইনা?এক্সপেরিমেন্টালি এটা জানা গিয়েছে যে আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের নিউরাল স্ট্রাকচার আসলেই আলাদা!!ব্বাহ!তাহলে তো, আস্তিক এবং নাস্তিকদের নিউরাল স্ট্রাকচারও সম্পূর্ণ আলাদা হওয়ার কথা!হ্যা আসলেই তাই, সাতোজি কানাজাওয়ারের একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নাস্তিকদের আই কিউ গড়পড়তা আস্তিকদের চাইতে পয়েন্ট বেশি!কিন্তু কেনো!! তার উত্তর সম্ভবত ‘’এখানেই’’!!সম্ভবত নাস্তিকদের নিউরাল স্ট্রাকচার আস্তিকদের চাইতে কোন না কোন ভাবে অনেক উন্নত!
সোশাল কোয়ার্টারলি জার্নালে ২০১০ সালে প্রকাশিত ‘’হোয়াই লিভারেল এন্ড এথিস্ট আর মোর ইন্টিলেলিজেন্ট’’ নামক একটি গবেষণাপত্রে, ঈশ্বরের বিশ্বাসী ধার্মিকদের তুলনায় নাস্তিকদের আউ কিউ গড়পড়তা পয়েন্ট বেশি থাকে।আবার রক্ষনশীলদের থেকে উদারপন্থি এবং প্রগতিশীল ব্যাক্তিদের আই কিউ বেশি থাকে ১২ পয়েন্ট।ধার্মিকদের প্রকোপ যত বাড়ে তার সাথে সঙ্গতি রেখে আই কিউ হ্রাস পায় যেমনঃ চরম নাস্তিকদের গড়পড়তা আই কিউ পাওয়া গেছে ১০৩. পার্সেন্ট।আবার চরম আস্তিকদের আই কিউ ৯৭.১৪।গড়পড়তা অন্তত পয়েন্ট কমে থাকে।




থিওরি অব রিলেটিভিটি এবং কোয়ান্টাম ফিজিক্স নিয়ে গবেষণার  পূর্বে আপনার নিউরাল স্ট্রাকচার এক্সপেরিমেন্ট করুন এবং তার পর আর একবার!যদি আমাদের চিন্তার পক্ষে নিউরাল স্ট্রাকচার পরিবর্তন করা সম্ভব হয় তবে অবশ্যই দুটো এক্সপেরিমেন্টের মধ্যে পার্থক্য পাওয়া যাবে, তাই নয় কী?

এছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে, মস্তিষ্কের যে অংশটি অনেক বেশি ব্যাস্ত থাকে সেখানে নতুন ধরনের ব্রেন কানেকশন তৈরি হবে, এবং বিদ্যমান সাইনাপ্স, নিউরনের মধ্যকার নেটওয়ার্ক আরো বেশি শক্তিশালী হবে, এবং ক্রমবর্ধমানভাবে তাদের মধ্যে সেনসিটিভিটি দেখা দেবে, তৈরি হবে নতুন রিসেপ্টর।নতুন ধরনের সাইনাপ্স গঠিত হবে!যাইহোক বিশদ আলোচনা না যাই। 


চিন্তার এপিজেনেটিক্সঃ



 "How Your Thoughts Program Your Cells" নামক একটি আর্টিকেলে লিখা হয়েছে,

''আমাদের দেহে প্রতিটি কোষে হাজার হাজার রিসেপটর রয়েছে। প্রতিটি রিসেপ্টর একটি পেপটাইড বা প্রোটিনের সাথে সুনির্দিষ্ট। আমাদের যখন রাগ, দুঃখ, অপরাধবোধ, উত্তেজনা, সুখ বা নার্ভাসনেসের অনুভূতি থাকে, তখন প্রতিটি পৃথক আবেগ তার নিজস্ব স্নায়ুবিক উদ্দীপনা প্রকাশ করে। এই পেপটাইডগুলি শরীরের মধ্যে দিয়ে যায় এবং সেই রিসেপ্টরগুলির সাথে সংযোগ স্থাপন করে যা প্রতিটি কক্ষের গঠনকে পুরোপুরি পরিবর্তন করে।''

তার মানে একজন বিবর্তনবাদীর মস্তিষ্কের বডি সেল এবং সৃষ্টিতত্বে বিশ্বাসীর বডি সেলও সম্পূর্ণ আলাদা হবে।কারণ তাদের চিন্তার প্যাটার্ন তাদের বায়োলজিক্যালি মোডিফায়েড করে দেবে!আমাদের চিন্তার প্যাটার্ন আমাদের জীবন যাপনের পরিবেশ পরিবর্তন করে, পরিবর্তন করে আমাদের স্বভাব এবং জীবন যাপনের পদ্ধতি যা আমাদের বায়োলজিক্যাল মিউটেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে!

আচ্ছা এটা কেমন হবে যদি আপনার চিন্তা আপনার জিনের সাথে কথা বলতে পারে?দাঁড়ান!একটা জিনিস খুব ভালো করেই মনে রাখতে হবে আমরা এখানে চিন্তাকেও ফিজিক্যাল এবং বায়োলজিক্যাল ম্যাটার হিসেবে বিবেচনা করছি!এপিজেনেটিক্সই সর্বপ্রথম আমাদের বলেছে, আপনি হলেন সে সকল বিষয়ের সমষ্টি যা আপনার জীবনে ঘটছে, আপনার জীবনে সংঘঠিত ঘটনার বাহিরে আপনার কোন অস্তিত্ব নেই, অতএব আপনি তা যা আপনার জীবন এবং এটি আপনার জিনের অপারেটিং সিষ্টেমই পরিবর্তন করে দিতে পারে!
স্টিফেন হকিংসের একটি কথা এক্ষেত্রে না বললেই নয়, তিনি তার গ্রাউন্ড ব্রেকিং বুক গ্র্যান্ড ডিজাইনে লিখেছিলেন, প্রতিভাবানদের জেনেটিক্যাল ম্যাটার সাধারণ মানুষ থেকে আলাদা,আর তাই তাদের চিন্তাগুলি সমাজে আধিপত্য বিস্তার করে এবং হাজার হাজার বছর পর্যন্ত অন্যদের চিন্তা-চেতনার সাথে বিবর্তনীয় প্রতিযোগীতায় উত্তীর্ণ হয়ে টিকে থাকে!তিনি বলেন,  সম্ভবত তাদের মধ্যে ভিন্ন ধরণের জেনেটিক্যাল পদার্থ আছে যা তাদের চিন্তার প্যাটার্নে প্রতিফলিত হবে!! আবার আধুনিক এপেজেনেটিক্সও কিন্তু অনেকটা সেরকমই সিদ্ধান্তে এসেছে তাদের মতে আমাদের চিন্তার প্যাটার্নই বলে দেবে আমাদের জেনেটিক্যাল এক্সপ্রেসন কেমন হবে!!এমন একটি মর্মান্তিক কথা শোনার পর কয়েক বিলিয়ন ওয়াও এক্সপ্রেসন ছাড়া আর কিই'বা থাকতে পারে!!



যাইহোক, জেনেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা মনে করেন, শুধুমাত্র পার্সেন্ট জিন মিউটেশন সরাসরি আমাদের হেলথ ইস্যুর সাথে জড়িত। আর অবশিষ্ট ৯৫ পার্সেন্ট জিন বিশৃংখল কার্যপ্রণালীর সাথে জড়িত যা কোন না কোনভাবে এনভায়রণমেন্ট দ্বারা প্রভাবিত হয়,যা আমাদের লাইফ ফ্যাক্টরের সাথে সম্পৃক্ত!এটা সত্য যে অসংখ্য জিন আমাদের নিয়ন্ত্রনের বাহিরে, বিশেষ করে জন্মগত ইভেন্টের সাথে যেগুলি সম্পৃক্ত কিন্তু কিছু কিছু জিন সম্পূর্ণ আমাদের নিয়ন্ত্রণে, যেমন- ডায়েট, এক্সারসাইস, স্ট্রেজ ম্যানেজমেন্ট অথবা ইমোশনাল স্টেট!

যাইহোক, Debbie Hampton বলেন, আপনার জীববিজ্ঞান আপনার ভাগ্য বানান করে না এবং আপনি আপনার জেনেটিক মেকআপ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হন না। পরিবর্তে, আপনার জেনেটিক ক্রিয়াকলাপটি মূলত আপনার চিন্তাভাবনা, মনোভাব এবং উপলব্ধি দ্বারা নির্ধারিত হয়। এপিগনেটিক্স দেখিয়ে দিচ্ছে যে আপনার উপলব্ধি এবং চিন্তাভাবনাগুলি আপনার জীববিজ্ঞান নিয়ন্ত্রণ করে, যা আপনাকে ড্রাইভারের আসনে রাখে। আপনার চিন্তাভাবনাগুলি পরিবর্তন করে আপনি নিজের জেনেটিক রিড-আউটকে প্রভাবিত করতে এবং আকার দিতে পারেন। আপনার জিনগুলি কী ইনপুট গ্রহণ করবে তা নির্ধারণে আপনার একটি পছন্দ আছে। ইনপুটটি যত বেশি ইতিবাচক, আপনার জিনের আউটপুট তত বেশি ইতিবাচক। এপিজেনেটিক্স জীবনযাত্রার পছন্দগুলি সরাসরি জেনেটিক স্তরে সনাক্ত করতে দেয় এবং মনের দেহের সংযোগকে অপরিবর্তনীয় প্রমাণ করে। একই সাথে এপিগনেটিক্সের গবেষণাও ইতিবাচক মানসিক স্ব-যত্নের অনুশীলনগুলি কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা জোর দিয়ে চলেছে কারণ তারা সরাসরি আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে।


তথ্যসুত্রঃ
১.How Your Thoughts Change Your Brain, Cells and Genes
২. বিবর্তনীয় মনবিজ্ঞান [অভিজিত রায় ]
৩. সেলফিস জিন [রিচার্ড ডকিন্স]
৪. হাউ দ্যা মাইন্ড ওয়ার্ক [ স্টিভেন পিঙ্কার] 






Comments

Popular posts from this blog

হিগস ফিল্ড ফিবোনিশি,গোল্ডেন রেশিও সাপেক্ষে ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনার একটি পরিসংখ্যান!, লিখেছেন- রিসাস, পার্ট-১০

I am Planck

টাইম প্যারাডক্স এবং ঈশ্বরের অস্তিত্বের অসম্ভাব্যতা!, লিখেছেন-রিসাস, পার্ট- ২১