নিয়ার ডেথ এক্সপেরিয়েন্সের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ, পর্ব-১, সম্পাদনা করেছেন, সোফিয়া আর্সি আবিসা


The Science of Near-Death Experiences - The Atlantic

আর্সিঃআপনার কাছে আমার একটা ব্যাপারে প্রশ্ন ছিলো, আমি শুনেছি আমেরিকার প্রায় ৩ পার্সেন্ট মানুষ প্রতি বছর নিয়ার ডেথ এক্সপেরিয়েন্সের মুখোমুখী হচ্ছে, নিয়ার ডেথ এক্সপেরিয়েন্স বিষয়টি কী?

 

রিসাসঃএন ডি বা নিয়ার ডেথ এক্সপেরিয়েন্স হলো মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তের অভিজ্ঞতা।পারকিনসন রোগের মতোই অনেকটা।এখানকার স্থানীয়রা যেটাকে Catch the dumb বলে।গবেষণায় দেখা গেছে পেশেন্টের ৫৮ জনের মধ্যে ৩০ জনেরই মৃত্যু হয়না কিন্তু তারা মৃত্যুর অভিজ্ঞতা লাভ করে।ভাগ্যের ব্যাপার হলো ২২ তারিখ মধ্যরাতে আকষ্মিক আমি অনুভব করলাম, আমার শারীরীক কোন চেতনা কাজ করছেনা কিন্তু তবুও আমি মানসিকভাবে জীবিত।আমার হাত, পা অথবা কন্ঠস্বর সবকিছু নিস্তব্দ পাথরের মতো স্থির হয়ে গেছে।এমন আমার প্রায়ই হতো, মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাব অথবা অন্য কোনো নিউরোলজিক্যাল ডিস্টার্বেন্সের কারণে এমনটি হতেই পারে।কিন্তু প্রতিবারের মতো এবার আমি আর আমার দেহে ফিরে আসতে পারছিলাম না, মানসিক ভাবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে কিন্তু কোনোভাবেই আমি শারীরিক নেটওয়ার্ক পাচ্ছিনা, ঠিক তখন আমি বুঝতে পারলাম আমি আর শরীরের মধ্যে নেই, আমার শরীর মৃত, এটি আর কাজ করবেনা!আকষ্মিক কয়েকজন অদৃশ্য মানুষ আমার চারপাশে আবর্তিত হতে শুরু করলো, এবং তারা আমাকে বিকটভাবে আক্রমণ করলো, আমি বুঝতে পারছিলাম এরা মহাবিশ্বের কেউ নয়, তারা আমার সাথে ঠিক কী করতে চেয়েছে আমি জানিনা তবে আমি অনুভব করছিলাম আমার দেহ থেকে আর একটি সুক্ষ্ম দেহ বেরিয়ে যাচ্ছে।আমি দুটি জগতের মাঝখানে একটি টানেলের ভেতর ঢুকে পড়েছি।আমি আত্ম-সমর্পন করলাম, এবং অনুভব করছিলাম আমি মহাবিশ্বের কোনো অজ্ঞাত স্থানে হারিয়ে যাচ্ছি।ঠিক তখন একটি বাদুড় আমার কানের পাশ দিয়ে উড়ে গেলো, যদিও চার দেয়ালের ভেতর কোনো বাঁদুরের অস্তিত্বই ছিলোনা! আমি শরীরে ফিরে আসি এবং এই আকষ্মিকতাকে সংবরণ করার চেষ্টা করি যদিও সেদিনের পর থেকে আমি নিজের শরীরের মাঝে মৃতদের ঘ্রাণ পাই।

ওভাঃ ব্যাপারটা ভাবতেই আমার আতঙ্ক কাজ করছে, ধর্মগ্রন্থগুলিতে সাধারণত নিয়ার ডেথের কথা বলা হয়।ধর্মীয় সংস্কৃতিতে এটি ব্যাপক প্রচলিত।কিন্তু শেষ পর্যন্ত আপনার সাথে?আমরা কী এর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ জানতে পারি?

আর্সিঃ হ্যা এর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ জানলে সম্ভবত আমরা সত্যিকার রহস্যটা উন্মোচন করতে পারবো।

প্রিজমঃওকে, ওভা এবং আর্সি।রিসাসের কাছে যাওয়ার পূর্বে আমি আমার ব্যাক্তিগতভাবে জানা বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণটি তোমাদের কাছে উপস্থাপন করছি।নিউম্যান নামক একজন বিজ্ঞানী নিয়ার ডেথের নিউরোলজিক্যাল এক্সপ্লেইনেশন আবিষ্কার করেছেন।এই অভিজ্ঞতার সাথে আমাদের মস্তিষ্কের সিম্পেথেটিক এবং প্যারা সিম্পেথেটিক নার্ভাস সিষ্টেম জড়িত।সিম্পেথেটিক নার্ভাস সিষ্টেমের কাজ হলো আমাদের মস্তিষ্ককে জাগ্রত রাখা, শরীরে উত্তেজতা এবং মনযোগ তৈরি করা আর অন্য দিকে প্যারা সিম্পেথেটিক নার্ভাস সিষ্টেম ব্রেনকে শাট ডাউন বা ঘুম পাড়িয়ে রাখে।কোনো কারণে যদি কারো মস্তিষ্কের দুটি নার্ভাস সিষ্টেম একসাথে কাজ করে তবে সে নিয়ার ডেথের মুখোমুখী হয়।বিশেষ করে সে প্যারানরমাল অভিজ্ঞতার সম্মুখ্যীন হয়,দেহ থেকে বেরিয়ে পড়ে,  অদৃশ্য মানুষ দেখে, অদৃশ্য থেকে শব্দ শোনে।এবং তার নিকট মনে হয় সে টানেলের ভেতর দিয়ে অন্য কোনো মহাবিশ্বে চলে যাচ্ছে। পারকিনসন রোগীদেরও এমন হতে দেখা যায়।এছাড়া আর কোনো এক্সপ্লেইনেশন আছে?

 

 

রিসাসঃ জীবন কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই তার নিজের গতিতে প্রবাহিত, জীবনকে ব্যাখ্যা করি ঠিকই কিন্তু আমরা একে ব্যাখা করেও কোনো শান্তনা খুঁজে পাচ্ছিনা।এই মনে হয় অনেককিছুই জানি আবার কিছুক্ষণ পর মনে হয় আমরা জীবনের কোনোকিছুই জানিনা।তাই আমি আসলে এখন নিজেকে রহস্যের মাঝেই ঢেলে দিয়েছি।যাইহোক, পদার্থ বিজ্ঞানী এবং বিখ্যাত সায়েন্স ফিকশন রাইটার ভাদিম  বলেছিলেন, মানুষের মস্তিষ্কে কোয়ান্টাম ইলেক্ট্রো-ডায়নামিক্স কাজ করে এবং কোয়ান্টাম ওয়েভগুলি আমাদের মৃত্যুর পরও আমাদের চেতনা তৈরি করে । 

সম্ভবত আমার দেহের চেতনা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পর সেদিন মধ্যরাতে কোয়ান্টাম ওয়েভ প্লে করেছিলো।  University of Cambridge's Medical Research Council Cognition and Brain Sciences Unit এর গবেষক ডিন মুভস যিনি একজন নিউরো-সায়েন্টিস্ট তিনি দাবি করেছেন নিয়ার ডেথকে বায়োলজিক্যালি এক্সপ্লেইন করা সম্ভব।তিনি বলেন শুধুমাত্র নিয়ার ডেথের পেশেন্টরাই নয়  Cotard or "walking corpse" নামক এ সিন্ড্রোমটি যাদের মধ্যে কাজ করে তাদের মধ্যে একটি ডিলুশনাল বিলিফ জন্ম হয় যে তারা মরে গেছে!

এ ধরণের অভিজ্ঞতা ঘটে ট্রামার সময়, বিশেষ করে টাইপয়েড এবং মাল্টিপল সেকলরসিসের সাথে যেটি সম্পর্কযুক্ত।পেরিটিয়াল কর্টেক্স এবং প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্সের সাথে এর কানেকশন রয়েছে, পেরিটিয়াল কর্টেক্স আমাদের মনযোগ প্রকৃয়ার সাথে জড়িত এবং অন্যদিকে প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স সিজোফ্রেনীয়া আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে বিভিন্ন মানসিক অবস্থার জন্ম দেয়।মুব ব্যাখ্যা করেছেন, Although the mechanism behind the syndrome remains unknown, one possible explanation is that patients are trying to make sense of the strange experiences they are having.

 

 

আর্সিঃ আউট অব বডি পেনোমেনন নামক একটি অতি-মানবিক বাস্তবতা আছে, আবার তথাকথিত কিছু মুক্তমনা তো মনে করছে তাদের দেহ মেডিটেশনের মাধ্যমে মহাশূন্যে ভেসে থাকতে পারে, যাইহোক, সেই বিরক্তিকর বর্ণনায় না যাই।আপনার কী মনে হয়, আউট অব বডি বা দেহের বাহিরে লোকেট করা সম্ভব, গ্রেভিটি কী তাদের আকর্ষণ করবেনা?

 

রিসাসঃ হ্যা তুমি স্লিপ প্যারালাইসিসের মতো সমস্যাগুলির কথা বলছো। এটি সাম্প্রতিক একেবারেই সাধারণ একটি ব্যাপার, প্রায় সবার সাথেই এটি কোনো না কোন মাত্রায় ঘটছে।স্লিপ প্যারালাইসেস সংক্রমিত ব্যাক্তি যদিও বুঝতে পারে যে সে প্যারালাইজড হয়ে গেছে তবুও এক্সটারনাল জগত সম্পর্কে সে সচেতন থাকে।৪০ পার্সেন্টের মতো ব্যাক্তি বিবৃতি প্রদান করেছে যে, তারা ভয়ানক ড্রিম লাইক হেলোচিনেশনের মুখোমুখী হয়েছে যখন তাদের নিকট মনে হয়েছিলো যে তাদের দেহ ভেসে বেড়াচ্ছে!২০০৫ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে মস্তিষ্কের   right temporoparietal junction  ট্রিগার করেও আউট অব বডি এক্সপেরিয়েন্স তৈরি করা যাচ্ছে!তোমরা নিশ্চয় ইতমধ্যে জানো পারকিনসন রোগীরা ভূতের অভিজ্ঞতা লাভ করে এমনকি মুনস্টারের।কিন্তু এর ব্যাখ্যা কী?পারকিনসন ডোপামিন এবং নিউরো-ট্রান্সমিটারের এবনরমাল ফাংশনিং এর কারণে তৈরি হয়।যখন কারো জীবন থেকে পূর্বের মুহূর্তগুলি পূণরুদ্ধারের ব্যাপারটি আসে তখন এর জন্যে দায়ী করা হয় লোকাস কোয়েরুলাসকে মিড ব্রেনের একটি অংশ যেটি নরেড্রেনালিন হরমোন নিসৃঃত করে।লোকাস কোয়েরুলাস মস্তিষ্কের এমন একটি এরিয়ার সাথে সম্পৃক্ত যেটি আবেগ এবং স্মৃতির মধ্যস্ততা করে যেমন এমিগডালা এবং হাইপোথালামাস!

এমনকি ড্রাগের মাধ্যমেও মস্তিষ্কে নিয়ার ডেথ তৈরি করা যায়, হয়তো এ ব্যাপারে জেনে থাকবে!

 

প্রিজমঃ হুম, তাতো অবশ্যই, আমি যতটা জানি, আমার মনে হয়, কেটামিন নিয়ার ডেথ এক্সপেরিয়েন্স তৈরি করতে পারবে!

 

ওভাঃ ওয়াও!ইন্টারেস্টিং!কিন্তু কিভাবে?

 

রিসাসঃ হ্যা, ক্যাটামিন মস্তিষ্কের opioid system কে এফেক্ট করতে পারে।আর অপিওয়েড সিষ্টেমকে ড্রাগ ছাড়াও একটিভ করা যায়, প্রাণীরা যখন আক্রমণাত্মক অবস্থায় থাকে তখনও অপিওয়েড সিষ্টেম একটিভেট হয়ে যায়।কিন্তু মৃত্যুর সময় আলোর টানেল কেনো দেখা যায় তার কারণ এখনো অস্পষ্ট। টানেল ভিশন তখনই দেখা যায় যখন ব্লাড এবং অক্সিজেন চোখ দ্বারা শোষিত হয়।প্রচন্ড আতঙ্ক এবং অক্সিজেনের ঘটতি দুটোই মৃত্যুর পরিস্থিতির কারণ।


সম্পাদনা- আবিসা আর্সি 

তথ্যসুত্র- 

1.https://www.google.com/url?sa=t&rct=j&q=&esrc=s&source=web&cd=&cad=rja&uact=8&ved=2ahUKEwiv6qKv3M3pAhXZ7HMBHZOmAhAQFjAYegQIDxAB&url=https%3A%2F%2Fwww.scientificamerican.com%2Farticle%2Fpeace-of-mind-near-death%2F&usg=AOvVaw1Dnd4QMXS2flDeHFo7D1UB

2.https://www.google.com/url?sa=t&rct=j&q=&esrc=s&source=web&cd=&cad=rja&uact=8&ved=2ahUKEwiv6qKv3M3pAhXZ7HMBHZOmAhAQFjAaegQIDhAB&url=https%3A%2F%2Fwww.nbcnews.com%2Fhealth%2Fhealth-news%2Fcan-science-explain-what-people-see-feel-during-near-death-n1024316&usg=AOvVaw00cmeZi2wch6PeJFN38FDz

3.https://www.google.com/url?sa=t&rct=j&q=&esrc=s&source=web&cd=&cad=rja&uact=8&ved=2ahUKEwiv6qKv3M3pAhXZ7HMBHZOmAhAQFjACegQIAhAB&url=https%3A%2F%2Fwww.sciencealert.com%2Fexperts-explain-the-science-of-near-death-experiences&usg=AOvVaw2Ti_WAkqaaoUuKsjNWmkzo

 

 

 


Comments

Popular posts from this blog

হিগস ফিল্ড ফিবোনিশি,গোল্ডেন রেশিও সাপেক্ষে ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনার একটি পরিসংখ্যান!, লিখেছেন- রিসাস, পার্ট-১০

টাইম প্যারাডক্স এবং ঈশ্বরের অস্তিত্বের অসম্ভাব্যতা!, লিখেছেন-রিসাস, পার্ট- ২১

I am Planck