মেট্রোফনিক ছন্দ এবং ঈশ্বরের অস্তিত্বের অসম্ভাব্যতা! লিখেছেন- রিসাস (পার্ট-৪)
মেট্রোফনিক
ছন্দ এবং ঈশ্বরের অস্তিত্বের অসম্ভাব্যতা !
মনে করুন ,সোলার
সিষ্টেমে অসীম ক্ষুদ্র একটা চায়ের পট আছে
বলে কেউ একজন প্রপোজ করলো এখন আপনি কি সেই পটের অস্তিত্ব নিশ্চিত হতে পারবেন? সেটাকে আপনি
ভুল বলতে পারবেন না আবার সঠিকও বলতে পারবেনা!বাট্রান্ড রাসেলের মতে ঈশ্বরও নাকি
একটা কাল্পনিক মহাজাগতিক চায়ের পট যাকে মানুষ অপ্রমাণ করতে না পেরে অযথাই
বিলিফ করছে। আমি যদি বলি মহাবিশ্বে অসীম ক্ষুদ্র একটি এলিয়েন আছে তখন উইথ
আউট এক্সপেরিমেন্ট কেউই তো তার অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারবেনা, আর বাস্তবে এটি
এক্সপেরিমেন্ট করা আদৌ সম্ভব না!তার মানে কি আমরা তাকে বিলিফ করে নে্বো?তার মানে কি
ঈশ্বর সত্য?
এলিয়েনের অস্তিত্বের সম্ভ্যাব্যতা প্রসঙ্গে আসা যাক!ডকিন্স
বলেছিলেন,কার্ল
স্যাগানকে ধন্যবাদ দেয়া উচিত এই জন্যেই যে তিনি মহাকাশে এক্সট্রা-টেরিস্টিয়াল
প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে আনুমানিক অনুভূতিমূলক সিদ্বান্ত নেয়ার প্রচেষ্টাকে অস্বীকার
করেছেন।কিন্তু আমাদের পক্ষে এমন একটি সম্ভাবনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করার জন্যে এমন
সকল ইনফরমেশন জানা প্রয়োজন যা দ্বারা আমরা তাদের অস্তিত্বের একটি সংযমী মূল্যায়ণ
করতে সক্ষম হবো।আর এটা শুরু হতে পারে এক্সট্রা-টেরিস্টিয়াল প্রাণীদের সম্পর্কে
আমাদের অজানা ইনফরমেশন গুলির একটি তালিকা প্রস্তুতের মধ্য দিয়ে।বিখ্যাত ড্রেক
সমীকরণ যা পল ডেভিসের ভাষায় সম্ভাবনা সংগ্রহ করে।সমীকরণটির মূল বক্তব্য হলো, স্বতন্ত্রভাবে
বিবর্তিত কোন সভ্যতার সংখ্যা পরিমাপ করার জন্যে আমাদের সাতটি সংখ্যাকে কন্সিডারেশনে
নিতে হবে।এদের মধ্যে রয়েছে,
নক্ষত্রের সংখ্যা, নক্ষত্রগুলিতে
পৃথিবীর মতো বাসযোগ্য গ্রহের সংখ্যা, এবং
এর সম্ভাবনা, এগুলি যার প্রত্যেকটি উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই, কিন্তু আমি
যা বুঝানোর চেষ্টা করছি তা হলো এই সকল কন্সিডারেশন অজানার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়
এবং অনেক বেশি অনুমান নির্ভর।যখন অনেক সংখ্যাই হয় অজানা তখন তা পরিমাপ করতে হয়
বিশাল মাপের ভ্রান্তিকে অনুমোদন দিয়ে।আর তাই ভিন্ন গ্রহের ভিন্ন কোনো মানব সভ্যতার
অস্তিত্বের সম্ভাব্য সংখ্যায় এত বিশাকৃতির ভুল থাকে যে এক্ষেত্রে এগনষ্টিসিজমকেই
মনে হয় অধিক যুক্তযুক্ত;
যদিও এটাই একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য অবস্থান নয়।
১৯৬১ সালে যখন ডিরাক সমীকরণটি প্রথম লিখা হয়েছিলো এবং
সমীকরণে সাতটি সংখ্যাকে সংযুক্ত করা হয়েছিলো সেই সংখ্যাগুলি কিন্তু ১৯৬১ সালের
তুলনায় আমাদের কম অজানা, আমরা
এখন সেগুলিকে আরো সুস্পষ্টভাবে জানি।যা আমাদের এক্সট্রা-টেরিস্টিয়াল প্রাণীর
অস্তিত্বের সম্ভাবনার সংখ্যাকে সংকটমুক্ত করবে।
তখন এই সোলার সিষ্টেমটিই ছিলো, আমাদের জানা
একমাত্র সোলার সিষ্টেম,আমরা
মহাবিশ্বের অন্য কোনো সোলার সিষ্টেমকে জানতাম না।ডকিন্সের ভাষায়, ‘’আমি ১৯৬১ সালের
কথা বলছি, যখন
মনে করা হতো একটি মাত্র সোলার সিষ্টেম যা কেন্দ্রীয় একটি নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে
আবর্তিত হচ্ছে, এছাড়া ছিলো বৃহস্পতি আর শনির উপগ্রহ সদৃশ কিছু দৃষ্টান্ত, মহাবিশ্বে
এ ধরণের সোলার সিষ্টেম সম্পর্কে আমাদের সবচেয়ে উন্নত ধারণা দিয়ে থাকে আমাদের
থিওরিটিক্যাল মডেলগুলি...যার মধ্যে রয়েছে একটি আনুষ্ঠানিক থিওরি যাকে বলা হয়
সাধারণত্বের মূলনীতি বা প্রিন্সিপাল অব মিডিওক্রিটি যা আমাদের বলে, আমরা
ঘটনাক্রমে যে সোলার সিষ্টেমে বসবাস করি তার মাঝে কোনোপ্রকার অসাধারণত্ব নেই, আমরা
কবিত্বহীন একটি সোলার সিষ্টেমে ঘূর্ণনরত’’।কিন্তু
দুর্ভাগ্যক্রমে প্রিন্সিপাল অব মিডিওক্রিটিকে দুর্বল করে দিয়েছে দ্যা এনথ্রেইপিক
প্রিন্সিপাল যার মূল তাৎপর্য হলো এই যে, আমরা যে সোলার সিষ্টেমে বাস করি সেই সোলার সিষ্টেম যদি শুধু
মহাবিশ্বে একটিই হয় তবে এটি এ জন্যেই যে আমরা মানব সম্প্রদায় এই সোলার সিষ্টেমে
আছি, যাদের
মস্তিষ্কের নিউরাল এক্টিভিটিজ মহাবিশ্বকে রিয়েলাইজ করতে পারে এবং আমরা আমাদের
অস্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ব করতে পারি।সরল কথায় এনথ্রেইপিক প্রিন্সিপাল অনুসারে- যদি
আমাদের সোলার সিষ্টেম মহাবিশ্বে একটাই হয় তবে তা এ জন্যেই যে আমরা মহাবিশ্বে আছি।
ঈশ্বরের ডেফিনিশনের সাথে সুপারন্যাচরাল শব্দটি কানেক্টেট
কিন্তু আমরা কথা বলছিলাম এক্সট্রা-টেরিস্টিয়াল প্রাণীদের অস্তিত্বের প্রাকৃতিক
সম্ভাবনা নিয়ে।সুপার ন্যাচরাল আর ন্যাচরালের মধ্যে যদি আমরা তারতম্য
সৃষ্টি করতে চাই তবে কল্পনা করুন,
সেটি [SETI] বা
সার্চ ফর এক্সট্রা-টেরিস্টিয়াল
ইন্টিলিজেন্স সত্যি সত্যি মহাশূন্যে রেডিও
টেলিস্কোপের মাধ্যমে একটি সিগনাল ডিটেক্ট করতে সক্ষম হলো, এই মহাবিশ্বে
আমরা সিঙ্গুলারিটি পয়েন্টের মতো একা নই।প্রসঙ্গক্রমে এ ধরণের সিগনাল সংগ্রহ করলেই
কিন্তু আমরা অনুভব করতে পারি যে আমাদের রেডিও টেলিস্কোপ দ্বারা সংগৃহীত সিগনালটি
হয়তোবা কোনো বুদ্বিমাণ প্রাণীর সৃষ্টি।একটি সিগনাল তো ভীন্ন কোনো গ্রহ থেকে এমনি
এমনি আমাদের রেডিও টেলিস্কোপে ধরা পড়তে পারেনা যদি সেই সিগনালটি কোনো
ইন্টেলেকচুয়াল প্রাণী তৈরি না করে?এটি কিন্তু
নেহাত তুচ্ছ প্রশ্ন নয়!এখন প্রশ্নটাকে একটু ভিন্ন রকমভাবে বিবেচনা করি।আমরা
মহাবিশ্বের কোনো ইন্টিলিজেন্ট প্রাণীর কাছে নিজেদের বুদ্বিমত্তার সংবাদ কিভাবে
সেন্ড করতে পারি ? অথবা
তাদের সাথে আমরা কি করতে পারি?ছন্দময়
পালস সেন্ড করতে পারি নিশ্চয়ই যা দ্বারা তারা আমাদের ইন্টেলেকচুয়ালিটির পরিচয় পেতে
পারে!জোসেলিন বেল বার্নেল রেড়িও জ্যোতিঃবিজ্ঞানী যিনি ১৯৬৭ সালে পালসার তারকা
আবিষ্কার করেন।পালসার তারকাটির ঠিক ১.৩৩ সেকেন্ডের নিয়মিত পর্যায়ক্রমটি জোসেলিনকে
বিষ্মিত করে,তিনি
অবাক হয়ে এর নাম রেখেছিলেন এলজিএম[ Little
Green man Signal ]।
পরবর্তীতে তিনি আরো একটি পালসার তারকা আবিষ্কার করেন যার
পর্যায়ক্রম ছিলো ভিন্ন।যা এলজিএম হাইপোথেসিসকে মিথ্যা প্রমাণ করে।মেট্রোফনিক ছন্দ
তৈরি করতে সক্ষম হলেই মহাজাগতিক কোনো অবজেক্ট ইন্টিলিজেন্ট হিসেবে প্রমাণিত হয়না
বা তা মহাবিশ্বে ইন্টেলেকচুয়ালিটির উপস্থিতির প্রমাণ নয়।অনেক প্রাণহীন অবজেক্টই
মেট্রোফনিক বা পর্যায়ক্রমিক ছন্দ বা পালস তৈরি করতে পারে।যেমনঃ দোল খাওয়া গাছের
ডাল,ফোটা
ফোটা পানির বিন্দু অথবা কক্ষপথে ঘূর্ণনরত মহাজাগতিক বস্তুকণা।আমাদের ছায়াপথে হাজার
হাজার পালসার আছে এবং এখন এটা স্বীকৃত যে তারা আসলে ঘূর্ণায়মান নিউট্রন
নক্ষত্র।যারা বাতিঘরের আলোর মতো চারপাশে বেতার তরঙ্গ নিঃস্বরণ করে।
এমন একটি নক্ষত্রের কথা কল্পনা করা খুবই কষ্টকর যা প্রতি
সেকেন্ডেই নিজ কক্ষপথে ঘুরছে।যাইহোক নিউট্রন নক্ষত্র সম্পর্কে আমরা যা কিছুই এ
পর্যন্ত জেনেছি সবকিছুই বিষ্ময়কর।পালসার বা মেট্রোফনিক ছন্দ কোন ইন্টেলেকচুয়াল
প্রাণীর সৃষ্টি নয়।এটি ফিজিক্সের সাধারণ ঘটনা।ঠিক তেমনি ঈশ্বরের অস্তিত্বও সুপার
ন্যাচরাল কোনো রিজন নয়,
সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এবং সাধারণ কিছু রিজনের উপর ভিত্তি করে মেট্রোফনিক ছন্দের
স্রষ্টা এক্সট্রা-টেরিস্টিয়াল প্রাণীদের মতো আমরা ঈশ্বরকেও মহাবিশ্বের ক্রিয়েটর
হিসেবে দায়ী করি,কিন্তু
মেট্রোফনিক ছন্দের পেছনে যেমন কোনো এক্সট্রাটেরিস্টিয়াল ইন্টিলিজেন্টের হাত নেই
ঠিক তেমনি মহাবিশ্বকে ঈশ্বর নামক কোনো পদার্থ বিজ্ঞানী তৈরি করেন নি।মহাবিশ্ব
মেট্রোফনিক ছন্দের মতো ফিজিক্সের একটি সাধারণ ঘটনা।
তথ্যসুত্রঃ [ গড ডিলুশন, এথিস্ট ইউনিভার্স ]
তথ্যসুত্রঃ [ গড ডিলুশন, এথিস্ট ইউনিভার্স ]
Comments
Post a Comment