কেনো মহাবিশ্বের উদ্ভবের জন্যে ঈশ্বরের কোনো প্রয়োজন নেই? লিখেছেন-রিসাস (part-3)
পার্ট-৩
মহাত্মা গান্ধী
বলেছিলেন, ‘’ঈশ্বর ইউনিভার্স এবং আমাদের সৃষ্টি করেছেন কিন্তু তার কোনো
সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বর নেই, আর যার কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই তিনি তার অস্তিত্বের
জেনেসিস হিসেবে কোনো ঈশ্বরকে বিশ্বাস করবেন না, অতএব ঈশ্বর একজন নাস্তিক ,আর যদি
মহাবিশ্বের ঈশ্বর নাস্তিকই হয়, তবে অবশ্যই তার অসীমত্বের অন্তঃর্ভূক্ত প্রতিটি
অস্তিত্বকে ঈশ্বরের নাস্তিকত্বে বিশ্বাস স্থাপন করা উচিত।‘’ প্রাকৃতিক ভাবে
প্রতিটি মানুষের মাঝে এ নাস্তিকতা বিদ্যমান আছে।গতকিছুদিন পূর্বে একজন শিশু আমাকে
বলেছিলো, ঈশ্বর শুধু একজন এবং ঈশ্বর যদি কয়েকজন হতো তবে তারা ফিজিক্সের সুত্রগুলি
নিয়ে কোয়ালিশনে যুক্ত হতো।আর এতে করে মহাবিশ্বের অস্তিত্বই হয়ে উঠতো অসম্ভব।আমি
তাকে প্রশ্ন করেছিলাম- এই কক্ষে আমরা কতজন?সে বলল, হ্যা এটা ঠিক এ কক্ষে আমরা
তিনজন কিন্তু আমরা তো ঈশ্বর না!আমি তাকে বললাম, আচ্ছা।বলো তো, তিনজন শিক্ষিত এবং
সভ্য মানুষ কী কখনো ঝগড়া করবে?সে বললো, না, সভ্য মানুষরা কখনোই ঝগড়া
করবেনা!’’তাহলে এখন বলো, তিনজন ঈশ্বর কী আমাদের সাধারণ শ্রেণীর মানুষেদের মতো
নিরক্ষর এবং অশিক্ষিত যে তারা ফিজিক্সের সুত্র নিয়ে একে অপরের সাথে তর্কবিতর্ক
করবে? ‘’শিশুটি নিস্তব্দ হয়ে গেলো!এছাড়াও ধার্মিকরা প্রায়ই বলে থাকেন, ঈশ্বর
আমাদের সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু তাকে কেউ সৃষ্টি করেননি, তার অস্তিত্বের পেছনে কোনো
লজিক নেই, কোনো প্রমাণ ব্যাতীতই বিশ্বাস করতে হবে যে ঈশ্বর নিজে নিজেই সৃষ্টি
হয়েছেন, হ্যা ঠিক আছে, মেনে নিলাম যে ঈশ্বর যুক্তিতর্কের অতীত, তার কোনো ঈশ্বর
নেই, তাকে প্রমাণ করা অসম্ভব, তাহলে তোমরাও শুনে নাও, মহাবিশ্ব নিজে নিজেই তৈরি
হয়েছে যুক্তির অতীত শূন্যতা থেকে, যদি ঈশ্বরের জন্যে প্রমাণের বাধ্যবাধকতা না থাকে
তবে আমার অস্তিত্বের জন্য ঈশ্বর দায়ী নয় এক্ষেত্রেও কোনো প্রমাণের বাধ্যবাধকতা
নেই!
ঈশ্বরের অস্তিত্বের
সাপেক্ষে একটি বিখ্যাত যুক্তি ছিলো ফ্রেড হোয়েলের ‘’আল্টিমেট বোয়িং ‘’৭৪৭’’।ফ্রেড
হোয়েল বলেছিলেন, স্ক্র্যাপ ইয়ার্ড থেকে প্রচন্ড ঘূর্ণিজড়ে আকষ্মিক একটি আস্ত বোয়িং
৭৪৭ হেলিকপ্টার তৈরি হয়ে নিজে নিজেই উড়তে থাকা ঠিক যতটা অসম্ভব ঠিক তেমনি অসম্ভব কোনোপ্রকার
ডিজাইনার ব্যাতীত মহাবিশ্ব এবং জীবনের উদ্ভব!আপনার কী মনে হয় স্ক্র্যাপইয়ার্ড থেকে
পুরাতন যন্ত্রপাতিগুলি এমনি এমনিই একে
অপরের সাথে ট্যাকনোলজিক্যালি সংযুক্ত হয়ে একটি টাইম মেশিন প্রস্তুত হবে এবং নিজে
নিজেই অতীতের মহাবিশ্বে ছুটে চলবে?
যদি আমরা এমনি এমনি
ক্রিয়েটর ব্যাতীত একটি টাইমমেশিন অথবা
বোয়িং ৭৪৭ এর অস্তিত্বকে চিন্তা করতে না পারি তাহলে আটাশ গিগাপার্সেস
আয়তনের এই মহাবিশ্ব যেটি মহাকাশে মেটা ইউনিভার্সদের সাথে স্পেস-টাইম
ফেব্রিককে বক্র করে অনন্তের জানলা
উন্মোক্ত করে আছে কিভাবে তার সম্পর্কে
ভাবতে পারি ,এটি নিজে নিজেই সৃষ্টি হয়েছে?রিচার্ড ডকিন্স একই
প্রশ্ন করেছিলেন ঈশ্বরের অস্তিত্বের ক্ষেত্রে!তার মতে যদি আমরা
কিছুক্ষণের জন্যে মেনেও নেই যে একজন পরিকল্পকের হস্তক্ষেপ ব্যাতীত মহাবিশ্বের
অস্তিত্ব একেবারেই অসম্ভব ঠিক যেমনি অসম্ভব স্ক্যাপইয়ার্ড থেকে একটি বোয়িং ৭৪৭ এর
উদ্ভব, তবে ঈশ্বরের অস্তিত্বের পেছনে কেনো
কোনো ডিজাইনার থাকবেনা?পরিকল্পক বা উৎস ব্যাতীত ঈশ্বরের অস্তিত্বও কী আল্টিমেট বোয়িং
৭৪৭ নয় যা চুড়ান্তভাবেই অসম্ভবাতাকে নির্দেশ করে?
আমি এ গ্রন্থে ঈশ্বর
এবং ধর্মের শুধু সমালোচনা অথবা অবাস্তবতা নয়, একইসাথে আমি তুলে ধরবো নাস্তিকতার
সীমাবদ্ধতা এবং কেনো একজন ঈশ্বরের অস্তিত্ব আসলেই সম্ভব!সে ঈশ্বর কেমন?তার
যোক্তিকতা কতটুকু!ধর্ম কী পুরোপুরিই অযোক্তিক!আমি ব্যাক্তিগতভাবে এ গ্রন্থে অজ্ঞাত
রাশির মতোই আচরণ করবো, আমি আপাতত হ্যা অথবা না কোনো পক্ষে সমর্থন করবোনা কিন্তু
যেহেতু প্রচলিত অর্থে বা জনসাধারণের ভাষায় আমি একজন নাস্তিক সেহেতু নাস্তিকতার
প্রতি আমার সহযাত আকর্ষন এবং পক্ষপাত থাকবে, যেহেতু আমরা পর্যাপ্ত দর্শন এবং
যুক্তির ভেতর দিয়েই সিদ্ধান্ত উপনিত হতে ভালোবাসি নিতান্ত বিশ্বাসের উপর ভর না
করে!
যুক্তি দিয়েই কী সবকিছু
পরিমাপ করা সম্ভব?যুক্তির কী সীমারেখা নেই?শব্দের সীমারেখায় কী ঈশ্বরের অস্তিত্বকে
অসম্ভব করা যায়!হ্যা!যুক্তির সীমারেখা আছে!সীমারেখা আছে শব্দের!যুক্তির
সীমাবদ্ধতাকে আমরা অস্বীকার করছিনা!শব্দের সীমাবদ্ধতার অনেক উদাহরণ আছে!একবার আমার
একজন ইউনিভার্সিটির বন্ধুকে আমি প্রশ্ন করেছিলাম, মৃত্যুর পর কি আমরা থাকবো? তার
উত্তর ছিলো, মৃত্যুর পর কিছুই নেই, সবকিছুই ‘’নাথিং’’!তারপর আমি তাকে পালটা প্রশ্ন
করি, তুমি যা বলছো তা কতটুকু লজিক্যাল?এটি কী গাণিতিকভাবে তুমি সত্যায়ন করেছো?
সে কড়াভাবে জবাব দিয়েছিল,
অবশ্যই লজিক্যাল!...’’ওহ!তার মানে মৃত্যুর পর সবকিছুই ‘’নাথিং’’ এটাও একটি
লজিক্যাল ‘’থিংস’’?যাইহোক!এটাই ল্যাঙ্গুয়েস্টিক ডুয়ালিটি।ঈশ্বরকে যদি আপনি হ্যা
বলেন তবে একইসময় আপনাকে না বলার জন্যেও
প্রস্তুত থাকতে হবে!অনেকটা টাইম প্যারাডক্সের মতো!এবার আসুন যুক্তির সীমারেখায়।একটি স্পেসশিপের
পক্ষে কী একইসাথে এবং একইসময় অতীত এবং ভবিষ্যতের দিকে ভ্রমণ করা
সম্ভব?যোক্তিকভাবেই একটি বস্তুর পক্ষে একটি নির্দিষ্ট সময় নির্দিষ্ট একটি লোকেশনেই
অবস্থান করা সম্ভব।কিন্তু কিছুকিছু ক্ষেত্র আছে যেখানে, একটি বস্তু একইসাথে দুটি
জায়গায় থাকতে পারে যেমন আপনি আপনার কিচেনের ভেতরে একটি পা রাখতে পারেন এবং বাহিরে
আর একটি!কিন্তু তার বাহিরে কী আপনার মস্তিষ্ক চিন্তা করতে পারে?আপনি হয়তো একটি
নির্দিষ্ট সময় কিচেনের ভেতরে থাকতে পারবেন অথবা কিচেনের বাহিরে পৃথিবীর অন্য কোথাও
বা কিচেনের ভেতরে এবং বাহিরে
একসাথে।কিন্তু এ তিনটি অপশনের বাহিরে আপনার পক্ষে কী অন্য কোনোভাবে অস্তিত্বশীল
হওয়া সম্ভব অথবা আপনার মস্তিষ্কের যুক্তিতে এ তিনটি অপশন ছাড়া আর কোনো অপশন আপনার
জন্যে উন্মুক্ত আছে?না নেই!এখানেই আপনার যুক্তিবিদ্যার সমাপ্তি!বিষ্ময়ের ব্যাপার
হলো, যেখানে আপনার যুক্তির সমাপ্তি সেখানেও মাইক্রোস্কোপিক বাস্তবতা কাজ করে, একটি
পার্টিকেল কোয়ান্টাম টানেলিং এর ভেতর দিয়ে এ তিনটি অপশনকে অতিক্রম করতে পারে!
তার মানে কী
দাঁড়ালো?যুক্তি কখনোই বাস্তবতা নয়, যুক্তি বাস্তবতাকে বুঝা বা ব্যাখ্যা করার একটি
ল্যাঙ্গুয়েস্টিক পদ্ধতি।একটি ছোট শিশুকে হাতের আঙ্গুল দিয়ে ঈশারা করে সর্বপ্রথম
দেখাতে হয় যে কোনটি সূর্য, কিন্তু যখন শিশুটি সূর্যকে চিনে যায় তখন তার চোখের
সামনে বারবার আঙুল উঠাতে হয়না!ভাষা,সংকেত এবং যুক্তি বাস্তবতাকে রিপ্রেজেন্ট করে
কিন্তু এগুলি কখনোই সামগ্রিক বাস্তবতাকে অবধারণ করেনা, বাস্তবতা ভাষা,যুক্তি এবং সংকেতের
অনেক উদ্ধে!অনেক মূর্খ আছেন যারা আমার এ বক্তব্যকে বিকৃত করে সমাজে অপপ্রচার করবে
যুক্তির কোনো ভিত্তি নেই, অতএব ঈশ্বর যুক্তির অতীত, তিনি মাইক্রোস্কোপিক জগতের
মতোই এমন একটি বাস্তবতা যা যুক্তিকে অতিক্রম করে আছে কারণ তার সীমা নেই।আপনার একজন
মানুষের জন্যে খারাপ লাগে, কিন্তু আপনি সেই খারাপ লাগাটাকে যুক্তিসংঘতভাবে
ব্যাখ্যা করতে পারছেনা ,তার মানে এই নয় যে আপনার খারাপ লাগছেনা!কোনোকিছু
যুক্তিসংঘতভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব না হলেই যে অবাস্তব তা একদম কাজের কথা নয়!অনেক
সময় আমরা বাস্তবতাকে লজিক্যালি এক্সপ্লেইন করতে পারিনা, কিন্তু তার মানে এই নয় যে
বাস্তবতার পেছনে লজিক্যাল কোনো ফাউন্ডেশন নেই।আবার মাইক্রোস্কোপিক ডায়মেনশন হলো
এমন একটি বাস্তবতা যেখানে যুক্তিবিদ্যাই কাজ করেনা, লজিক্যাল ফাউন্ডেশনই ভেঙে
যায়!লজিক ভেঙে যাওয়ার অর্থ ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিশ্চিত হয়ে যাওয়া নয়, যদিও অনেকে
এভাবেই চিন্তা করে। লজিক ভেঙে যাওয়ার অর্থ ভিন্ন মাত্রিক বাস্তবতায় প্রবেশ করা
যেখানে আমাদের থ্রিডি মস্তিষ্কের যুক্তিতর্কের অতীত কিছু ঘটনা ঘটছে!এ বিষয়ে আমরা
পরবর্তী অধ্যায়গুলিতে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
মাইক্রোস্কোপিক
পার্টিকেলগুলি কিভাবে লজিক ভেঙে ফেলে তার কিছু উদাহরণ দেয়া যায়।আপনাকে যদি দুটি গন্তব্যের উদ্দেশ্যে একইসাথে
একইসময় পথ চলতে বলা হয় আপনি কী পারবেন?লজিক্যালি কী এটি সম্ভব?কিন্তু
মাইক্রোস্কোফিক জগতে একটি পার্টিকেল একসাথে দুটি ছিদ্র দিয়ে ভ্রমণ করতে পারে, এবং
নিজের সাথে নিজে ইন্টারফেয়ারেন্স প্যাটার্ন তৈরি করে, যেনো এটি কোনো পার্টিকেলই নয় এটি পটেনশিয়াল
ওয়েভ!
আবার লাইট বাউন্সিং মিররের মাধ্যমে একটি বিশেষায়িত প্রকৃয়ায় বিজ্ঞানীরা ডাবল স্লিট এক্সপেরিমেন্ট পরিচালনা করে দেখেছিলেন, যখন তারা পার্টিকেলদের গতিপথ নির্ধারণ করে ফেলেছিলো তখন পার্টিকেলগুলি কোনো ছিদ্রের ভেতর দিয়েই ভ্রমণ করেনি, না বাম ছিদ্র পথে অথবা ডান ছিদ্র পথে, অথবা একাধিক ছিদ্র পথে কিন্তু তারা ডিটেক্টরে হিট করেছিলো।ইন্টারনেট, যেমন একটি মেসেজ সেন্ড করার জন্যে একজায়গা থেকে অন্য আর একটি জায়গায় জায়গায় যেতে হয়না ঠিক তেমনি ডাবল স্লিট এক্সপেরিমেন্টে পার্টিকেলগুলি এক জায়গা থেকে অন্য আর একটি জায়গায় যেতে কোনো পথ গ্রহণ করেনা, মনে হয় যেনো পার্টিকেলগুলি সর্বত্রই বিদ্যমান।কিন্তু কোনো মানুষের পক্ষে কী কখনোই সম্ভব রকেট,স্পেসশিপ অথবা ওয়ার্মহোল কোনোকিছু ব্যাবহার না করেই আলফা
আবার লাইট বাউন্সিং মিররের মাধ্যমে একটি বিশেষায়িত প্রকৃয়ায় বিজ্ঞানীরা ডাবল স্লিট এক্সপেরিমেন্ট পরিচালনা করে দেখেছিলেন, যখন তারা পার্টিকেলদের গতিপথ নির্ধারণ করে ফেলেছিলো তখন পার্টিকেলগুলি কোনো ছিদ্রের ভেতর দিয়েই ভ্রমণ করেনি, না বাম ছিদ্র পথে অথবা ডান ছিদ্র পথে, অথবা একাধিক ছিদ্র পথে কিন্তু তারা ডিটেক্টরে হিট করেছিলো।ইন্টারনেট, যেমন একটি মেসেজ সেন্ড করার জন্যে একজায়গা থেকে অন্য আর একটি জায়গায় জায়গায় যেতে হয়না ঠিক তেমনি ডাবল স্লিট এক্সপেরিমেন্টে পার্টিকেলগুলি এক জায়গা থেকে অন্য আর একটি জায়গায় যেতে কোনো পথ গ্রহণ করেনা, মনে হয় যেনো পার্টিকেলগুলি সর্বত্রই বিদ্যমান।কিন্তু কোনো মানুষের পক্ষে কী কখনোই সম্ভব রকেট,স্পেসশিপ অথবা ওয়ার্মহোল কোনোকিছু ব্যাবহার না করেই আলফা
সেন্টরি চলে যাওয়া?স্পেসশীপে
উঠার পূর্বেই মহাবিশ্বের অন্য কোনো গ্যালাক্সিতে পৌঁছে যাওয়া?আপনি কোনো গেট দিয়ে
প্রবেশ না করেই কী পার্লামেন্টের অধিবেশনে যোগ দিতে পারবেন?আমাদের মস্তিষ্কের বাইনারী
অপারেটিং কোনো পথে পথ না চলেই গন্তব্যে পৌছানোর
পদ্ধতিকে লজিক্যালি এক্সপ্লেইন করতে পারবেনা!কারণ আমাদের মস্তিষ্কের
বাইনারী অপারেটিং সিষ্টেম বৈপরিত্যের ভিত্তিতে বিশ্বের মডেল প্রস্তুত করে, ডানের
বিপরীতে বাম,বামের বিপরীতে ডান।আমরা ডান দিকে তাকালে বাম দিক অন্ধকার হয়ে যায়, আমরা উপরের
দিকে তাকালে নিচের দিক দেখিনা,আমরা যখন অতীত নিয়ে চিন্তা করি ঠিক সেই মুহূর্তে
ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করতে পারিনা, আমাদেরকে যুক্তিসংঘত ভাবেই যেকোনো একটি দিককে
নির্বাচন করতে হয়।কিন্তু ডাবল স্লিট এক্সপেরিমেন্টে দেখা গেছে, পার্টিকেলগুলি
আমাদের মস্তিষ্কের যুক্তির ফ্রেমওয়ার্কে কাজ করছেনা! তারা বাইনারী অপারেটিং
সিষ্টেম লঙ্গন করছে!আপনি ডান অথবা বাম কোনোদিকে না তাকিয়েই কী কোনোকিছু দেখতে
পারবেন?না সম্ভব নয়!একেবারেই অসম্ভব!ঠিক যেমনি অসম্ভব স্ক্রেপয়ার্ড থেকে এমনি এমনি
কোনো ডিজাইনার ছাড়াই একটি বোয়িং ৭৪৭ তৈরি হয়ে যাওয়া!
আপনি কোনো প্রজাপতিই
দেখেননি অথচ আপনি বলে ফেললেন যে আপনি ডান দিকে একটি প্রজাপতি দেখেছেন এবং অন্য
একজন পরীক্ষা করে দেখলো ঘটনা সত্য ঠিক তেমনি পার্টিকেলগুলি ডাবল স্লিট
এক্সপেরিমেন্টে কোনো ছিদ্রপথ দিয়ে প্রবেশ না করেই ডিটেক্টরে হিট করে এবং প্রমাণ করে তারা যতই অসম্ভব হোক, যতই
প্যারানরমাল হোক, যতই অযোক্তিক হোক ডিটেক্টরে তাদের যোক্তিক উপস্থিতি একেবারেই
সত্য!একটি পার্টিকেল কোনোদিকে না তাকিয়েও এমনভাবে সকল দিক সম্পর্কে বিবৃত্তি
প্রদান করতে শুরু করলো যেনো সে সকল দিকে একেবারে বাস্তবেই তাকিয়ে
আছে!মাইক্রোস্কোপিক ডায়মেনশনকে আমরা লজিক্যালি এনালাইসিস করতে পারিনা কিন্তু তবুও
আমরা ডিটেক্টরে তাদের উপস্থিতিকে যোক্তিকভাবেই অস্বীকার করতে পারিনা।ঠিক তেমনি
ঈশ্বর ব্যাতীত আমরা মহাবিশ্বকে হয়তোবা লজিক্যালি ব্যাখ্যা করতে পারিনা কিন্তু
ঈশ্বর ছাড়াই যে আমরা মহাবিশ্বে আছি,আমরা আমাদের সেই ম্যাজিক্যাল উপস্থিতিকে ডিটেক্টর
স্কিনের ইন্টারফেয়ারেন্স প্যাটার্নের মতোই লজিক্যালি অস্বীকার করতে পারিনা!
আমরা ঈশ্বরের
অস্তিত্বকে তখনই সমর্থন করতাম যখন আমরা দেখতাম যে আমাদের দেহের পার্টিকেলগুলি একটি
নির্দিষ্ট সময় শুধু একটি লোকেশনেই সীমাবদ্ধ থাকে, কিন্তু ডাবল স্লিট এক্সপেরিমেন্ট
থেকে প্রমাণিত হয়েছে আমাদের দেহের পার্টিকেলগুলি একইসাথে ওয়েভ এবং পার্টিকেল, তারা
একইসাথে এবং একইসময় মহাবিশ্বের বিভিন্ন স্থানে উপস্থিত থাকতে পারে, তাদের মাঝে
যুক্তিতর্কের অতীত একটি সম্পর্ক বিদ্যমান, অতএব ঈশ্বরের মতোই আমরা আমাদের কাছে
নিজেরাই যুক্তির অতীত অসাম্ভ্যতার মধ্যে বাস করি, আমরা কোনো হায়ার ডায়মেনশনাল বাস্তবতার সাথেই সম্পৃক্ত।মহাবিশ্ব সত্যিকার
অর্থেই আল্টিমেট বোয়িং ৭৪৭!
যাইহোক, কোয়ান্টাম
ফিজিক্সের উইগনার ফ্রেন্ডস থিওরি বিশ্লেষণের ভেতর দিয়ে আমরা ঈশ্বরের অস্তিত্বের
অসম্ভাব্যতার একটি চিত্র অংকন করবো কিন্তু তার আগে কিছুক্ষণের জন্যে আমরা আবার
অবিশ্বাসের ফিলসফি আলোচনা করবো।এমন একটি গ্যালাক্টিক সোসাইটির কথা চিন্তা করুন
যারা কোনোপ্রকার সন্দেহ ছাড়া সবকিছু বিশ্বাস করে নেয়।তাদের মনে কোনো অবিশ্বাস নেই,
কখনো এক মাইক্রোসেকেন্ডের জন্যেও তারা তাদের মনে কোনোপ্রকার অবিশ্বাসকে স্থান
দেয়নি, কী হবে সে গ্যালাক্টিক সম্প্রদায়টির সাথে?অন্যকোনো গ্রহ থেকে যদি
ষড়যন্ত্রমূলকভাবে একটি আর্টিফিশিয়াল
ইন্টিলিজেন্ট সেন্ড করা হয় তাদের কাছে এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্টটি যদি
প্রতারণামূলকভাবে তাদের বলে আর মাত্র তিনদিনের মাঝেই তাদের গ্রহটি ধবংস হয়ে যাবে
তবে অবশ্যই এ মিথ্যা তথ্যটি সেই সম্প্রদায়টি বিশ্বাস করে নেবে কারণ এদের
মস্তিষ্কের কজাল অপারেটিং সিষ্টেম যুক্তিসংগতভাবে কোনো একটি তথ্যকে বিশ্লেষণ করে
তার সত্য মিথ্যা নির্ণয় করতে পোগ্রামড নয়, সরল বিশ্বাসই এদের নীতি।এবং এ সরল
বিশ্বাসী সম্প্রদায়টিকে যদি আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্ট প্লানেটারি সুইসাইড করতে
পরামর্শ দেয় তথা একযোগে সবাইকে যদি সহয উপায়ে মৃত্যুবরণ করার মেডিক্যাল পরামর্শ
প্রদান করে তবে নিশ্চই তারা কোনোপ্রকার শব্দ ছাড়াই রোবটটির প্রস্তাব গ্রহণ করে
নেবে!আর এতে করে খুব সহযেই একটি সম্প্রদায় গ্যালাক্সি থেকে চিরতরে নিশিহ্ন হয়ে
যেতে পারে!এজন্যে বিবর্তন মানুষের মস্তিষ্কে বিশ্বাসের বিপরীতে অবিশ্বাসকেও
সংরক্ষণ করেছে, কারণ মানুষের মস্তিষ্কের সফটওয়ারগুলি পুরোপুরিভাবে এবসলিউট
বাস্তবতাকে ক্যালকুলেট করতে পারেনা আর তাই সুনিশ্চিত করে মহাবিশ্ব এবং জীবনকে এবসলিউট
যথার্থতার সাথে তারা পরিমাপ করতে পারেবেনা, যার জন্যে মানুষের জীবনে অনিশ্চয়তার
উপদ্রব থেকেই যাবে, আর অনিশ্চিত একটি জীবনকে সুনিশ্চিত কোনো তথ্যের ভিত্তিতে
বিশ্বাস করলে মানব সভ্যতার ধবংস অনিবার্য।ঠিক একই এনালোজিটি সত্য এবং মিথ্যার
ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।সত্য এবং মিথ্যা দুটোই ইনফরমেশন।কোনোকিছু থ্রিডি রিয়েলিটিতে
যখন সময়ের স্থায়িত্বে বাস্তবতা অর্জন করে তখন আমরা সেই ঘটনাকে সত্য বলি, আর মিথ্যা
হলো সে সকল ইনফরমেশন যা থ্রিডিস্পেসে ঘটেনি কিন্তু সম্ভাবনা থেকে আনুমানিক
ভাবে বাস্তব বলে ধরে
নেয়া হয়েছে।মনে করুন, একটি গ্যালাক্সিতে এমন একটি সম্প্রদায় আছে যার নাম সত্যবাদী
সম্প্রদায়।তাদের মনে মিথ্যার কোনো অস্তিত্বই নেই।তারা মিথ্যা কী সেটা জানেই না।
এমন এক সোসাইটিতে কোনো একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্ট যদি মানুষের ভূগোল ধারণ করে
প্রবেশ করে এবং বলে, আমি ঈশ্বরের গ্যালাক্টিক দূত।এবং আমার মস্তিষ্কে ঈশ্বর ইলেক্ট্রিক্যাল সিগনাল
সেন্ড করে, তোমরা শুনে রাখো যে, ঈশ্বর এক আর আমিই তার প্রেরিত সর্বশ্রেষ্ঠ
প্রতিনিধি!তবে সেই সত্যবাদী সম্প্রদায় এই জলজ্যন্ত মিথ্যাকে খুব সহযেই সত্য বলে
গ্রহণ করে নেবে, এবং সাইকোলজিক্যালি সেই
মিথ্যাবাদী আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্টটির ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক চিন্তার দাসে
রুপান্তরিত হবে!এতে করে সেই সম্প্রদায়ের নিকট থেকে আপনি মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আদায়
করে নিতে পারবেন কারণ আপনি যাই বলুন না কেনো তারা সেটাকে অস্বীকার করবেনা!অতএব
অসীম সত্যবাদী একটি সমাজব্যাবস্থ্যা মানসিকভাবে অসুস্থ্য এবং ঠিক একইভাবে প্রতিটি
সম্প্রদায়ের আলাদা আলাদা প্রতিটি ঈশ্বর এবং ফিলসফির
প্রতি অসীম বিশ্বাসও
অসুস্থ্যতা!
বলা হয়ে থাকে,
স্বর্গ অখন্ড এবং নিরবিচ্ছিন্ন এক সুখের স্থান সেখানে কোনো দুখ্য নেই।যদি পৃথিবীতে
এমন একটি স্বর্গ বৈজ্ঞানিকভাবে প্রস্তুত করে পরীক্ষা করে দেখা সম্ভব হয় যে, স্বর্গ
আসলে কতটা কার্যকরী তাহলে সম্ভবত ঈশ্বর অসন্তুষ্ঠ হবেন না!এমন একটি শহরের কথা
ইমাজিন করুন যে শহরের প্রতিটি মানুষকে কেমিক্যাল রি-একশনের মাধ্যমে সুখে রাখা হয়,
নাইট্রাস অক্সাইড দিয়ে তাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে দেয়া হয়।হলোগ্রাফিক এয়ারফোন দিয়ে
নারীদের মস্তিষ্কে ভার্চুয়াল সেক্স ফিলিংস
ক্রিয়েট করা হয় এবং অবিচ্ছিন্নভাবে।কল্পনা করুন, স্বর্গের এমন একজন মৃত্যুহীন
নারীকে যার মস্তিষ্কের নিউরোলজিক্যাল ফাংশন এমনভাবে এস্টাবলিসড করা হয়েছে যে সে
সবসময় সেক্সের চুড়ান্ত মাত্রা অনুভব করে।শত শত বছর ধরে একজন নারী অবিচ্ছিন্নভাবে
শীৎকার করে যাচ্ছে –ফাক মি!তার পিতাকে তার সামনে কেটে টুকরো টুকরো করে দেয়া হলো
কিন্তু তার কন্ঠস্বর থেকে নিঃসৃত হচ্ছে- ফাক মি!সে ড্রিংক্স করতে করতে শীৎকার করে,
সে শাওয়ার নিতে গিয়েও শীৎকার করে!একজন অসীম সুখী মানুষ কী আসলেই সুস্থ্য?প্রশ্ন
থেকে যায়!
একটি সম্প্রদায়ের
মানুষ যদি কোনোপ্রকার সন্দেহ ছাড়াই যেকোনো ইনফরমেশনকে বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করে তবে
সে সমাজ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।মনে করুন,একজন পাইলটের বা স্পেসারের মস্তিষ্কে সন্দেহ কাজ করেনা, তার
মস্তিষ্কের কজাল অপারেটিং সিষ্টেম ডি-একটিভেট হয়ে গেছে!পৃথিবী থেকে তাকে বারবার
তার নভযানের ডিরেকশন চেঞ্জ করার জন্যে সিগনাল প্রেরণ করা হচ্ছে কিন্তু সে ডিরেকশন
চেঞ্জ করছেনা কারণ তার বিশ্বাস তার নভযান সঠিক ডিরেকশনেই আছে, আর এ সন্দেহহীনতার
কারণেই নভোযানটি ক্রাশ হতে পারে।ঠিক একইভাবে যদি বহুবছর ধরে কোনো নভ যানে পৃথিবী
থেকে সিগনাল না আসার পরেও তারা সন্দেহাতীতভাবে এটাকে স্বাভাবিক অবস্থায় মেনে নেয় তবে তারা
কখনোই বুঝতে পারবেনা তারা এমন কোনো আন্তঃনাক্ষত্রিক শূন্যস্থানে হারিয়ে গেছে যেখান
থেকে হয়তোবা কখনোই তাদের পক্ষে আর পৃথিবীতে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়!
বিশ্বাস এবং
অবিশ্বাস এ শব্দ দুটি আপেক্ষিক বাস্তবতার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।আজ থেকে পনের বিলিয়ন
বছর পূর্বে মহাবিশ্বের স্পেস-টাইম বিগব্যাং পয়েন্টে ছিলো কিন্তু এখন নেই।ছিলো এবং
নেই এর মাঝখানে কাজ করছে সময়, পনের বিলিয়ন বছর সময়।থাকা এবং না থাকাকে তৈরি করতে
স্পেস এন্ড টাইমের প্রয়োজন হয়।আমি এখন পৃথিবীতে আছি কিন্তু মহাবিশ্বের অন্য কোনো
গ্রহ নক্ষত্রে নেই।এখানে স্থান বা স্পেসই আমার থাকা এবং না থাকাকে ডিফাইন করছে।
জায়গাই বলে দিচ্ছে
আমি কোন জায়গায় আছি আর কোনো জায়গায় নেই।ঠিক একইভাবে একটা সময় আমি ডি এন এ ছিলাম
কিন্তু এখন আমি মানুষ, পঁচিশ বছর বয়সী
একজন তরুণ।পঁচিশ বছর পূর্বে আমি ডি এন এ ছিলাম কিন্তু পঁচিশ বছর পর আমি আর শুধুই
ক্ষুদ্র একটি ডি এন এ হয়ে নেই। এখানে ‘’থাকা’’ আর ‘’না থাকার’’ ক্রিয়েটর টাইম।সময়
নিজেই বলে দিচ্ছে আমি কোন সময় কোন অবস্থায় ‘’আছি’’ এবং কখন কোন অবস্থায়
‘’নেই।মহাবিশ্বের বিবর্তনীয় প্রকৃয়ার এক একটি অবস্থাকে ডিফাইন করার জন্যেই মূলত
সময় ‘’থাকা’’ এবং ‘’না থাকা’’ নামক আপেক্ষিক অবস্থাগুলি তৈরি করছে।আমি বিশ্বাস
করিনা যে এখন আমি শুধুই একটি পিটাস।হ্যা!আমি একসময় পিটাস ছিলাম কিন্তু এখন তো নেই!
ধার্মিকরা বলে ঈশ্বর আছেন এবং তার অস্তিত্বকে বিশ্বাস করে নিতে হয়।ঈশ্বর যদি
স্পেস-টাইম ফ্রেমওয়ার্কের অতীত হয় তবে তার উপর থাকা বা না থাকার শর্ত আরোপ করা
যায়না আর যে বিবর্তনের
নির্দিষ্ট সিকোয়েন্সগুলির
মাঝে সীমাবদ্ধ নয় তার প্রতি বিশ্বাস এবং অবিশ্বাস দুটোই ভিত্তিহীন।
( তথ্যসুত্রঃ বায়োলজি অব বিলিফ, কোয়ান্টাম গড, গড ডিলুশন, ব্লাইন্ড ওয়াচমেকার, ফ্রেব্রিক অব দ্যা কসমস )
Comments
Post a Comment