ভালোবাসার বায়োলজি এবং মিসফায়ারিং, লিখেছেন- রিসাস, পার্ট-২৩
বিখ্যাত মনবিজ্ঞানী
পল ব্লম মনে করেন, ধর্ম একটি বিবর্তনীয় বাই-প্রোডাক্ট, যার জন্মের জন্যে শিশু
মস্তিষ্কের ডুয়ালিস্টিক তত্ব দায়বদ্ধ।শিশুদের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক একটি বৈশিষ্ট্য
হলো তারা দেহ এবং মনকে আলাদা করে দেখার একটি প্রবণতা রাখে।বিবর্তনীয়ভাবেই তাদের
মধ্যে এমন একটি জেনেটিক্যাল টেন্ডেন্সি সংরক্ষিত।তার মতে শিশুদের মস্তিষ্ক
জন্মগতভাবেই দ্বৈতবাদী।মোনিস্ট বা একত্ববাদীরা মনকে ম্যাটার থেকে পৃথক করে দেখেন
না, তাদের মতে মন হলো কম্পিউটারের প্রকাশ বা আমাদের মস্তিষ্কের নিউরোলজিক্যাল
এক্টিভিটিজই মন এটি পৃথক কোনো বাস্তবতা নয়।ডুয়ালিস্টরা মনে করে, মন দেহ থেকে
বিচ্ছিন্ন, এটি দেহকে অতিক্রম করতে পারে এবং একইসাথে অন্যান্য বাস্তবতায়ও ভ্রমণ
করতে পারে, তারা অসুখকে খুব সহযভাবে ব্যাখ্যা করে অশুভ শয়তানের প্রভাব, এই অশুভ
শয়তানগুলি যেহেতু আত্মা, অতএব দেহের মধ্যে এরা সবসময় স্থির থাকতে পারবেনা, এদেরকে
দেহ থেকে বিতাড়িত করাও সম্ভব।দ্বৈতবাদীরা তাই সুযোগ পেলেই ভৌত বস্তুকে পারসোনিফাই
করে, যেমন মেঘের মাঝে মিকাইলকে দেখে, মৃত্যুর মাঝে আজরাইল।এফ আন্সটে ১৮৮২ সালে
‘’ভাইস ভার্সা’’ নামক একটি উপন্যাস সৃষ্টি করেন তা যেকোনো দ্বৈতবাদীর কাছেই অর্থবহ
কিন্তু আমরা যারা ম্যাটার এবং মাইন্ডকে একই এন্টিটি মনে করি বা যারা মোনিস্ট তাদের
কাছে এর কোনো মিনিং নেই।সেই মুভিতে জনাব বাল্টিটুড এবং তার পুত্র একদিন রহস্যজনক
ভাবে লক্ষ্য করলো তাদের দুজনের দেহ অদল বদল হয়ে গেছে।পুত্র এ ভেবে খুশি হলো যে,
তার পিতা তার শরীর নিয়ে স্কুলে পড়তে যাচ্ছে এবং অন্যদিকে পুত্র তার অপরিপক্কতার
কারণে পিতার ব্যাবসায় বিপর্যয় সৃষ্টি করছে!
পি জি উডহাউস তার
‘’লাফিং গ্যাসে’’ ঠিক একই রকমের কল্পকাহীনি অনুসরণ করেছেন।এসব উপন্যাস
দ্বৈতবাদীদের নিকট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে!
একজন মোনিস্ট যিনি
দ্বৈতবাদে বিশ্বাস করেন না, তিনিও ‘’Loughing Gas’’ অথবা ‘’vice versus’’ এর মজা অনুভব করতে পারবেন কারণ ইন্টেলেকচুয়ালি যদিও
আমরা মোনিস্ট হতে পারি কিন্তু আমাদের নিউরোলজিক্যাল ফাংশনেই ডুয়ালিস্টিক ন্যাচার
এনকোডেট করা আছে!আর তাই আমার নিউরন সেলের ভেতর লুকায়িত সেই ডুয়ালিস্টিক আমি
বিশ্বাস করে, ইচ্ছে করলেই সে ‘’ভাইস ভার্সার’’ মতো অন্যের শরীরে প্রবেশ করতে পারে
এবং তার এই ট্যান্ডেন্সি আমার নিয়ন্ত্রণের অতীত।কারণ এই ডুয়ালিস্টিক ন্যাচার
এভিলিউশনাল ম্যাকানিজম , এতে আমার কোনো সচেতন ভূমিকা নেই।প্রাকৃতিক নির্বাচন
জন্মগতভাবেই আমাদের মস্তিষ্কে সৃষ্টিবাদী হওয়ার একটি প্রাথমিক পরিস্থিতি তৈরি করে
রাখে।প্রাকৃতিক নির্বাচন সহযাতভাবেই একটি শিশুর নিকট অর্থবহ হয়না কারণ শিশুরা
সবকিছুর উপর কারণ এবং উদ্দেশ্য আরোপ করে।এ প্রসঙ্গে একটি গল্প বলি, আমি ছোটবেলায়
একবার ঢাকা টঙ্গি বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেছিলাম, আমাকে নিয়ে গিয়েছিলো আমাদের
এলাকার এক ধর্মপ্রাণ মুসলিম।তখন ছিলো প্রচন্ড শীত, ইজতেমা মাঠে শীতের প্রকোপ সহ্য
করতে না পেরে আমি উনাকে প্রশ্ন করেছিলাম, আমাদের হাত পা গুলি যদি যন্ত্রের মত হতো তবে সেগুলিকে গাড়ীর পার্টসের মতো খুলে
প্যাকেট করে ফেলতাম, আর ছোট একটি কম্বল জড়িয়ে এত কষ্ট করে আমাদের থাকতে
হতোনা।লোকটা খিলখিল করে হেসে বলল- সকাল বেলায় যদি কোনো প্যারালাইজড ব্যাক্তি
প্যাকেটটি নিয়ে যেতো তবে তুমি কী করতে বাছা ?ঈশ্বর তোমাকে রোবটের মতো করে তৈরি
করেনি কারণ রোবটের মতো করে যদি তোমাকে তৈরি করা হতো তবে তোমার হাত,পা,নাক,চোখ সব
চুরি হয়ে যেতো!
আল্লাহর মস্তিষ্ক কী
তোমার মতো প্লাস্টিক?আমিও ফিক করে হেসে দিলাম।অনেক মজা পেয়েছিলাম উনার কথা শুনে,
তারপর, তিনি আমাকে আর একটি গল্প শুনালেন।এক ব্যাক্তির মনে একদা প্রশ্ন জেগেছিলো,
ঈশ্বর কেনো তরমুজ গাছের মতো অতি ক্ষুদ্র একটি গাছের কান্ডে এত বিরাট বিরাট ফল
ফুটালো!কেনো তিনি, এত বিরাট সুবিস্তৃত বট বৃক্ষের কান্ডের বুকে জাগিয়ে দিলো
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অতি নগন্য কিছু লাল বট?ঠিক তখনই ঐ ব্যাক্তির মাথায় একটি বট পড়লো
এবং লোকটির মস্তিষ্ক খুলে গেলো, সে ঈশ্বরের নিকট পরিতাপ করলো এবং তাকে ধন্যবাদ
জানালো এ জন্যেই যে তার মাথায় কোনো তরমুজ পড়েনি!ঈশ্বর যা কিছু করেন সবকিছুর পেছনেই
কারণ এবং উদ্দেশ্য নিহিত, তিনি মহা বিজ্ঞানী, মহাবিশ্বের শ্রেষ্ঠতম
আইনস্টাইন!তারপর লোকটি আবার অত্যন্ত বিশ্রি ভাবে হেসে উঠলো!আমি একটু বিষ্মিত হলাম,
এবং প্রশ্ন করলাম, নিরাকার ঈশ্বরকে আপনি আইনস্টাইনের সাথে কম্পেয়ার করলেন
কেনো?ঈশ্বরের তো কোনো ওজন বা আয়তন নেই, আইনস্টাইন একটি পদার্থ!লোকটি কিছু বললোনা,
কী যেনো বুঝে সেদিন নিস্তব্দ হয়ে গিয়েছিলো।সেই ছোটবেলায় আমি এমন অজস্র গল্প
শুনেছি, আর বিষ্ময়ে হতবাক হয়েছি!ঈশ্বরের নিপুণতা, তার নিখুত ম্যাকানিজম, তার চোখে
ভবিষ্যতের পরিচ্ছন্নতা দেখে আমার ক্রমশ ঈশ্বরের প্রতি আকর্ষণ বেড়েই চলছিলো।কিন্তু
ঝামেলা বেঁধে গিয়েছিলো অন্যদিকে, একদিকে তারা ঈশ্বরকে দৈর্ঘ,প্রস্থ,উচ্চতা এবং সময়
শূন্য একটি নিমাত্রিক সম্ভাবনা হিসেবে প্রচার করতো এবং অন্যদিকে তারা বলতো,
মহাকাশের সপ্তম স্তরে ঈশ্বর আরশে বসে আছেন।আমার মন তখনই ঈশ্বরকে মানুষের মতো করে কল্পনা
করতে শুরু করলো,সাব-কনসাস
মাইন্ড ঈশ্বরের পেনিসের আয়তন চিন্তা করতো, তার মস্তিষ্কের চিন্তা এবং কল্পনাগুলি
বুঝার চেষ্টা করতো এবং আরশে আসীন সে ঈশ্বরের প্রতি মাঝেমাঝে সম্পূর্ণ অযোক্তিকভাবে
আমার বিরক্তি,ক্ষোভ এবং অনেক সময় সেক্স কাজ করতো, সে হিসেবে ঈশ্বরই ছিলো আমার
প্রথম গার্লফ্রেন্ড।কারণ এগ্রিফার পঞ্চ তত্বের এক তত্ব অনুযায়ী, আমার মস্তিষ্ক
ঈশ্বরকে আমার নিজস্ব তথ্য এবং উপাত্ত দিয়ে কল্পনা করে যাচ্ছিলো, আমি ঈশ্বরকে নয়,
আমি মহাকাশের সপ্তম স্তরে আমারই প্রতিমূর্তি অংকন করেছিলাম,
আমার নিজের প্রতিই
আমার গ্রেভিটি কাজ করেছিলো, যাকে বলা যায় সাইকোলজিক্যাল সমকামীতা!যাইহোক,
মনোবিজ্ঞানী ডেবোরাহ কোলেমান তার প্রবন্ধ ‘’Are
Children Intuitive thiests’’ এ প্রমাণ করেছিলেন শিশুরা সবকিছুর উপর
কিভাবে কারণ এবং উদ্দেশ্য আরোপ করে।এই প্রবণতাকে মনবিজ্ঞানে ‘’টেলিওলোজি’’ বলা
হয়।টেলিওলোজি এবং ডুয়ালিজমই জন্মগতভাবে একটি শিশুর মস্তিষ্কে ঈশ্বরবাদী হওয়ার
পূর্বপ্রস্তুতি বা প্রাক-পরিবেশ সৃষ্টি করে রাখে!
আমরা যদি রোবটের মতো
হতাম তবে আমাদের মাঝে হয়তোবা জেনেটিক্যাল পাওয়ার থাকতোনা আর ঈশ্বর ফিউচার জানেন,
তিনি জানেন আমরা যদি যন্ত্র হই তবে আমাদের দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলি রাতের
অন্ধকারে ছিনতাই হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই ঈশ্বর আমাদের মানুষ হিসেবেই সৃষ্টি
করেছেন, রোবট না করে, আমরা এখানে যেমন ঈশ্বরের মহান উদ্দেশ্যে আবিষ্কার করছি ঠিক
তেমনি আমরা ঈশ্বরের চিন্তার সুক্ষতার প্রমাণ পাই তখন যখন আমরা দেখি মহাবিশ্বের ফান্ডামেন্টাল
৩৭ টি কনস্ট্যান্ট ঈশ্বর এমনভাবে এটিউন করেছেন যাদের যেকোনো একটি যদি এখনকার চাইতে
এক মিলিয়ন ভাগের এক ভাগও তারতম্য করতো তবে মানব সভ্যতার বিবির্তনই সম্ভব
ছিলোনা।অতএব পৃথিবীর মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করলো, ঈশ্বর মহাবিশ্বকে ডিজাইন
করেছেন এমন একটি পদ্ধতিতে যেনো আমরা এখানে আসবো সেটা তিনি জানতেন, বা মহাবিশ্ব
মানুষের।অনেক বিজ্ঞানী, আমার ছেলেবেলার সেই ধর্মগুরুর মতোই, বিশ্বাস করেন, বটগাছে
তরমুজ জন্মায়না কারণ ঈশ্বর জানতেন আমি বটবৃক্ষের নিচে কোন একদিন হাঁটবো!স্ট্রং
এনথ্রেইপিক প্রিন্সিপ্যাল এবং উইক এনথ্রেইপিক প্রিন্সিপাল অনুসারে, ফিজিক্সের
সুত্রগুলি এমন একটি ম্যাকানিজমে কাজ করছে, ফান্ডামেন্টাল কনস্ট্যান্টগুলি এমন
পদ্ধতিতে রেগুলেট করা হয়েছে যা আমার অস্তিত্ব ব্যাতীত মহাবিশ্বের অস্তিত্বকেই
অসম্ভব করে তোলে!গ্রামের সাধারণ ধর্মগুরুরা বলে, মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব!এমনকি
আজকের বিজ্ঞানও ধর্মীয়বোধ থেকে বেরিয়ে চিন্তা করতে পারছেন না, তারাও মহাবিশ্বের
জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করার চেষ্টা করছে, তারাও ঈশ্বরের ডেস্টিনেশন বুঝার চেষ্টা
করছে, অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, আমরাই ঈশ্বরের এইম ইন লাইফ!!হোয়াট দ্যা ফাক!সহয
কথায়, এটা বিজ্ঞানীদের অন্যায় নয়, এটা তাদের জেনেটিক্যাল পলিউশন,
এটি আমাদের
জেনেটিক্যাল টেন্ডেন্সি, আমরা সবকিছুর মধ্যেই ডেস্টিনেশন খুঁজি এবং জেনেটিক্যালি
প্রত্যেকটি শিশুই ডুয়ালিস্ট আর সে জন্যেই ‘’ভাইস ভার্সা’’ মুভির মতোই সে মনে করে
তার ভেতরে এমন একটি পাওয়ার আছে যার মাধ্যমে সে পৃথিবীর অন্যান্য স্থানগুলিতেও
থাকতে পারে!
বলা হয়ে থাকে, ঈশ্বর
সকল স্থানে উপস্থিত, মহাবিশ্বের এমন কনো স্থান নেই যেখানে ঈশ্বর নেই, ঈশ্বরের
মাল্টিপল ডায়মেনশনে প্রেজেন্ট থাকার সম্ভাবনা শিশুদের ডুয়ালিস্টিক মাইন্ড খুব
সহযেই বিশ্বাস করে নেয়, কারণ প্রকৃতি স্বয়ং নিজেই আমাদের মাঝে ঈশ্বরকে গ্রহণ করার
বায়লোজিক্যাল ম্যাকানিজম তৈরি করে রেখেছে!
রাতের অন্ধকারে
কৃত্রিম আলোর উপস্থিতি খুবই সাম্প্রতিক, অজস্র গানের পাখি আছে যারা মথদের মতো
কৃত্রিম আলো দ্বারা বিভ্রান্ত হয় এবং বাল্বের চারদিকে প্রচন্ড গতিতে ঘুরতে থাকে
এবং একে অপরের সাথে ধাক্কা লেগে মৃত্যুবরণ করে!
দেখলে মনে হয় যেনো, এটি
তাদের ঐচ্ছিক মৃত্যু, সাম্প্রদায়িক যুদ্ধ কিন্তু আমরা পুর্বের অধ্যায়ে দেখেছি এর
সত্যিকার কারণ কী।
এটি ছিল মূলত
মিসফায়ারিং।ঠিক তেমনি, শিশুদের মস্তিষ্কের প্রাকৃতিক ডুয়ালিজম মিসফায়ারড হয়েই
ঈশ্বর হাইপোথেসিস তৈরি হয়েছে!
কিন্তু কেনো মানুষের
মস্তিষ্কে এ ডুয়ালিজম তৈরি হয়?কে তৈরি করে? ফিজিক্সের সুত্রগুলো কী এক্ষেত্রে কোনো
সহযোগীতা করে?এভুলিউশন কী ফিজিক্সের সুত্র নিরপেক্ষ?যদি বিবর্তন প্রকৃয়ায় ‘’ল’’ অব
ফিজিক্স এবসেন্ট থাকতো তবে তো প্রকৃতিতে কোনো ডিজাইনই প্রস্তুত হতোনা।‘’ল’’ অব
গ্রেভিটির আকর্ষণেই আমাদের মাথার স্নায়ুতন্ত্রগুলি সুক্ষ্ম এবং খুবই চিকন
হয়।পাহাড়ী এলাকার মানুষগুলি বয়সের একটা পর্যায়ে কুজো হয়ে পড়ে।প্রতিটি বস্তুর
ডিজাইনের পেছনে ফিজিক্সের সুত্রগুলির অবদান রয়েছে।ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক আবেশের
কারণেই সূর্যমূখী ফুলের ডিজাইন প্রস্তুত করতে পারে বিবর্তন।
কোয়ান্টাম
ফিজিসিস্টদের মতে, আমাদের মস্তিষ্কের নিউরাল কানেক্টিভিটি এতটাই সুক্ষ্ম যে,
সেখানে অতি-পরমাণবিক বাস্তবতা শক্তিশালী হয়ে উঠে, আমাদের মস্তিষ্কের নিউরন সেল
গুলি শ্রডিঙ্গারের বিড়াল অথবা একটি সুপারপজিশনাল পার্টিকেলের মতো মাল্টিপল
ডায়মেনশনে বাউন্স করতে পারে,
আমরা সেখানে
ডিটারমাইন করতে পারিনা আমাদের নিউরন সেল ফায়ার হচ্ছে কী হচ্ছেনা বরং সুপারপজিশনে
আমাদের মস্তিষ্কে উভয় সম্ভাবনাই সমানভাবে সক্রিয় থাকে, যাকে বলে কিউবিট!প্রফেসর
রোজার পেনরোজের মতে, আমাদের মস্তিষ্ক একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার।অতএব রিয়েলিটির
গভীর পর্যায়ে আমাদের মস্তিষ্ক হাইসেনের অনিশ্চয়তায় দোদুল্যমান যা একটি শিশুর
মস্তিষ্কে প্রাকৃতিক ডুয়ালিজম প্রস্তুতের জন্য দায়ী।কিন্তু এ ডুয়ালিজম গড ভাইরাস
ক্রিয়েট করতে পারে, অথবা সৃষ্টি করতে পারে তেত্রিশ কোটি দেবতা , যাদেরকে মানুষ
পারসোনিফাই করে এবং এই ডুয়ালিজমের উপর ভিত্তি করে প্রস্তুত হবে জঙ্গি সম্প্রদায়,
মৃত্যুবরণ করবে মাল্টি থাউজেন্ড মানুষ সেটা ‘’ল’’ অব ফিজিক্সের জানা ছিলোনা!কারণ
‘’ল’’ অব ফিজিক্স কোন লক্ষ বা উদ্দেশ্য দ্বারা প্রভাবিত নয়, মানব সভ্যতা তার এইম
ইন লাইফ নয়।লাইট বাল্বের চারপাশে গানের পাখি,বাদুড় অথবা মথরা আবর্তিত
হতে থাকবে, অকাতরে সুইসাইড করবে এ ধারণা থেকে তো আর টমাস আলভা এডিসন লাইট বাল্ব
প্রস্তুত করেন নি!মানুষ তার টেলিওলজিক্যাল ব্রেন ম্যাকানিজমের কারণেই ‘’ল’’ অব ফিজিক্সের
উপর লক্ষ্য,উদ্দেশ্য এবং তাদের ব্যাক্তিগত পছন্দ এবং অপছন্দ আরোপ করে!
বিখ্যাত দার্শনিক
ডেনিয়েল ডেনেট, টেলিওলজি এবং ডুয়ালিজমকে ইন্টেনশনাল স্ট্যান্স হাইপোথেসিস দ্বারা
ব্যাখ্যা করেছিলেন।ডেনেট স্ট্যান্সকে তিনটি মাত্রায় বিভক্ত করেছেন, ফিজিক্যাল
স্ট্যান্স, ডিজাইন স্ট্যান্স এবং ইনটেনশনাল স্ট্যান্স।
আমি আলোচনার সুবিধার্থে
সর্বপ্রথম ইনটেনশনাল স্ট্যান্সটিই এক্সপ্লেইন করবো।অনুভূতিবাদী দার্শনিক ডেভিট
হিউম বলেছিলেন, আমার আঙুলের ঢগা চুলকানীর অপেক্ষা মহাবিশ্বের কোনোকিছুই আমার কাছে
গুরুত্বপূর্ণ নয়।একজন গর্ভবতী নারী, যিনি প্রসব বেদনায় আর্তনাদ করছেন, তার নিকট
সন্তানের জেনেটিক্যাল ম্যাকানিজম আবিষ্কার করার চিন্তা প্রত্যাশা করাটাই তো
অবান্তর!মনে করুন, তিনি একজন পদার্থ বিজ্ঞানী, বিকট যন্ত্রণায় তিনি চুরমার হয়ে
যাচ্ছেন, এমতাবস্থায় তিনি কী সন্তান জন্মের পেছনে ‘’ল’’ অব ফিজিক্সের ভূমিকাকে
স্মরণ করবেন?ঠিক ঐ মুহূর্তে তার জন্যে কোনটি জরুরী?
অস্তিত্ববাদী
দার্শনিক সাত্রে এবং বুদ্ধ ঈশ্বরের অস্তিত্ব অথবা মানব জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে কখনো
চিন্তা করতেন না, এ মহাবিশ্বকে ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন কী করেন নি তাতে তাদের কিছু
আসে যায়না, তারা ভাবতেন, অস্তিত্বের উপস্থিতি নিয়ে, যেটাকে তারা উপেক্ষা করতে
পারছেন না।বুদ্ধের নিকট একবার একজন ব্যাক্তি জানতে এসেছিলেন, ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে
কীনা!বুদ্ধ বলেছিলেন, যদি তোমার দেহে একটি বিষাক্ত তীরবিদ্ধ হয় তবে ঐ মুহূর্তে
তোমার জন্যে কোনটি জরুরী?সেই ব্যাক্তির অনুসন্ধান করা যে তোমার দিকে তীর ছুড়েছে
অথবা নাকি সেই তীরের বিষক্রিয়া থেকে নিজেকে মুক্ত করা!আমরা আলোচনা করছিলাম ডেনিয়েল
ডেনেটের ইনটেনশনাল স্ট্যান্স নিয়ে, মনে করুন আপনার সম্মুখে একটি হিংস্র বাঘ
দাঁড়িয়ে আছে তখন আপনার কী করা উচিত, বাঘের শরীরের ডিজাইন নিয়ে চিন্তা করা, তার
শরীরের কালার, তার চোখ,কান এবং নাকের ডিজাইন গুলি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা ?আপনার
কী ঐ মুহূর্তে বাঘের শরীরের ডিজাইন বুঝার
জন্য নিজেকে যথেষ্ঠ মনযোগী করে তোলার মানসিকতা তৈরি হবে?অথবা আরো গভীরে প্রবেশ করে
আপনি কী গবেষণা করবেন, বাঘের শরীরের পরমাণু গুলি নিয়ে, সেগুলি কিভাবে ‘’ল’’ অব
ফিজিক্স ম্যানটেইন করে কাজ করে যাচ্ছে!আপনি কী চিন্তা করবেন তার দেহের
ম্যাথমেটিক্স!নাকি ঐ বিশেষ মুহূর্তে বুদ্ধিমানের কাজ হলে অতিদ্রুত বাঘের ইনটেনশন
অনুমান করে নেয়া?হ্যা!পৃথিবীর প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ মহাবিশ্বকে ইনট্যান্সশনাল
স্ট্যান্স থেকে দেখছে তাদের কাছে আর কোনো বিকল্প নেই এবং থাকলেও সেটা তারা গ্রহণ
করতে পারবেনা!ইনটেনশনাল বা উদ্দেশ্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির একটি বিরাট গুরুত্ব আছে কারণ
এই ইনটেনশনাল দৃষ্টিকোণের কারণেই আমাদের মস্তিষ্ক যেকোনো বিপদজ্জনক পরিস্থিতিতে
অনেক দ্রুততার সাথে ডিসিশন গ্রহণ করতে পারে যা তার সময় এবং শক্তির অপচয় রোধ করে,
এবং টিকে থাকার ক্ষেত্রে আরো অধিক সম্ভাবনা তৈরি করে দেয়।আমাদের মস্তিষ্কের
ডুয়ালিস্টিক ন্যাচারই এই ইনটেনশনাল স্ট্যান্সের কারণ যা আমরা পরবর্তিতে বিস্তারিত
আলোচনা করবো।
আমরা একটি
কম্পিউটারকে ফিজিক্যাল স্ট্যান্স হিসেবে দেখলে দেখবো এটি একটি জটিল যান্ত্রিক
ম্যাকানিজম , যেটি তৈরি হয়েছে ফিজিক্যাল অবজেক্ট দ্বারা ,
যে অবজেক্টগুলি
অনু-পরমাণুর তৈরি, পরমাণুগুলি ইলেক্ট্রন,প্রোটন এবং নিউট্রনের মেট্রিক্স যার রয়েছে
কক্ষপথ, কক্ষপথে নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ইলেক্ট্রনগুলি আবর্তিত হচ্ছে, এবং আরো
গভীরে রয়েছে ফান্ডামেন্টাল ফোর্স গুলি,যা ফিজিক্সের জটিল সুত্র দ্বারা পরিচালিত।কিন্তু
কী উপযোগীতা আছে একটি কম্পিউটারকে ফিজিক্যাল দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার মাঝে?সবচেয়ে সহয
হলো কম্পিউটারের ইনটেনশন বুঝা, এটি আমাদের জন্যে তৈরি এবং এ জন্যে আমাদের উচিত হবে
বরং কম্পিউটারের ডিজাইনের প্রতি মনযোগী হওয়া ,অদৃশ্য ফিজিক্স নিয়ে চিন্তা না করে
আমাদের জন্যে সবচেয়ে সহয হলো, কম্পিউটারের ম্যাকানিজম অথবা ডিজাইনকে সঠিকভাবে
বুঝার চেষ্টা করা যাতে করে আমরা নিজেরাও কম্পিউটার তৈরি করতে পারি।আর টিকে থাকার
ক্ষেত্রে এটিই আমাদের সর্বোচ্চ উপযোগ প্রদান করবে!বিবর্তন ঠিক এ জন্যেই আমাদের
মাঝে ইনটেনশনাল স্ট্যান্স এবং ডিজাইন স্ট্যান্সকে অত্যান্ত শক্তিশালীভাবে
প্রতিষ্ঠা করেছে!চার্লস ব্যাবেজ কম্পিউটার কিভাবে তৈরি করেছে, তিনি কম্পিউটার কোড
কিভাবে বুঝেছে!কম্পিউটার কোডের ফিলসফি কী!মহাবিশ্বে কোন কম্পিউটার কোড আছে কী না
তা জেনে কোন উন্মাদ তার জীবন অপচয় করবে?তারা কম্পিউটার পেয়েছে এবং তারা সেটাকে
তাদের নিজেদের উদ্দেশ্যে ব্যাবহার করবে এবং তারা ধরেই নিবে যে এটি তার, তথ্যকেন্দ্র
থেকে তথ্য সংগ্রহ করে, ইউটিউব ভিডিও দেখে আমি নিজেই বরং কম্পিউটার তৈরি করে নেবো,
প্রকৃতিকে গবেষণা করে, অথবা মেডিটেশন করে আমি কেনো মহাবিশ্বের ম্যাকানিজম বুঝতে
যাবো?কেনো আমি আমার মূল্যবান জীবনকে অপচয় করবো?বিবর্তন সৃষ্টির প্রকৃয়াকে গতিশীল
করার জন্যেই মানুষের মস্তিষ্ককে শটকার্ট করে তুলেছে।
যখন আমাদের সেলফোন
কাজ করেনা তখন আমরা সেটিকে আছাড় দেই, ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলি কারণ আমরা একটি
বস্তুকে পারসন হিসেবে কন্সিডার করি, সবকিছুর মধ্যে আমরা ইনটেনশকে প্রাধান্য দেই,
মোটামুটি সবার জীবনে এমন ঘটনা কোনো না কোন মাত্রায় ঘটেছে, ছোটবেলায় আমি গাছদের
পড়াতাম এবং বিভিন্নভাবে তাদের শাস্তি দিতাম, পেটাতাম, পাতা ছিড়ে ফেলতাম এবং আমি
মনে করতাম যে তারা আমার আদেশ অমান্য করছে।আমি নিজে নিজেই ভাবতাম যদি আমি পানিতে
অনেক্ষণ ডুব দিয়ে সারভাইভ করতে পারি তবে আমি মেধাবি হয়ে উঠবো, যদি পাথরটিকে ছুড়ে
অনেক দূরে নিয়ে যাই তবে আমি অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠবো।সবকিছুকে ইনটেনশনাল দৃষ্টিকোণ
থেকে দেখার এক ভয়ানক অন্ধ প্রবণতা কাজ করতো আমার মাঝে।এর কারণ আমাদের ডুয়ালিস্টিক
মাইন্ড কারণ একটি শিশু সাব-কনসাসলি মনে করে যে আমাদের মন অতি-পরমাণবিক জগতের
কণিকাদের মতোই ওয়েভ এন্ড পার্টিকেল ডুয়ালিটি কাল্টিভেট করে, সে একইসাথে পার্টিকেল
এবং ওয়েভ, কখনো সে আমাদের দেহে থাকে এবং কখনো সে মহাবিশ্বের অন্য কোনো লোকেশনে
ভ্রমণ করে।আমাদের সাব-কনসাস মাইন্ড সবকিছুকে পারসনিফাই করে কারণ সে বিলিফ করে তার
মন দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে, এবং অন্যবস্তুর মাঝেও লোকেট করতে পারে, আর তাই সে
নিজের ইনটেনশনকে একটি জড় পদার্থের মাঝেও
দেখতে পায়!
নৃতত্ববিদ হেলেন
ফিশার তার ‘’হোয়াই উই লাভ’’ গ্রন্থে রোমান্টিক ভালোবাসার উন্মুত্ততাকে ব্যাখ্যা
করেছেন।কেনো আমরা প্রেমে পড়ি?কেনো যাকে ভালোবাসি তাকে পৃথিবীর ৩.৮ বিলিয়ন নারীর
চেয়ে আলাদা করে চিন্তা করি, তাকে নিয়ে আমরা অজস্র কবিতা লিখি, কখনো রচিত হয় মহাকাব্য?তোমার
নাম আমি পোস্টারে পোস্টারে সমস্ত শহরে ছড়িয়ে দেবো, মহাবিশ্বের প্রতিটি গ্রহ
নক্ষত্রকে জানিয়ে দেবো! কেনো? পৃথিবীতে কী তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো নারী নেই?
আমি এমনও কবিতা
লিখতে দেখেছি, আমার ইচ্ছে করে তোমাকে নিয়ে অসীম ক্ষুদ্র একটি জগতে চলে যাই যে জগতকে
ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফ্রিকোয়েন্সি দিয়ে দেখা যায়না, এমনকি মাইক্রস্কোপ অথবা লার্জ
হেড্রন কোলাইডর দিয়েও নয়, চলো আমরা দুজন সে মহাবিশ্বে চলে যাই যে মহাবিশ্বে কেউ
নেই, শুধু তুমি আর আমি, বিন্দুর মতো একা!কিন্তু কেনো?এত বিলিয়ন নারীর মাঝে কেনো
একটি নারীকে নিয়েই আমাদের গোপন কোনো সময়ে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে জাফর ইকবালের
সায়েন্স ফিকশনের মতো!আমরা সাধারণ ভালোবাসার ক্ষেত্রে মা,বাবা,ভাই, বোন এবং
প্রতিবেশি সবাইকে ভালোবাসতে পারি কিন্তু ঠিক একই থিওরিটি কেনো আমরা ব্যাক্তিগত
সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারিনা, ভালোবাসার ক্ষেত্রে বহুগামীতা আছে অথচ
প্রেমের জন্য এমনও মানুষ আছে যারা সুইসাইড করেন?কেনো এই অযোক্তিক ইমোশন?কেনো এ
অতি-রঞ্জিত অনুভূতি?কেনো শক্তি আর জীবনের এ নিরর্থক অপচয়?কেনো এত কোটি কবিতা!কেনো
প্রেম নিয়ে অসীম সাহিত্যের অবতারণা!
হেলেন ফিশার এবং
অন্যকিছু জীববিজ্ঞানী দেখিয়েছেন, প্রেমে পড়ার সাথে জড়িত রয়েছে আমাদের মস্তিষ্কের
এমন কিছু স্নায়ুবিক উদ্দীপনা যা তৈরি করার জন্যে কিছু রাসয়নিক পদার্থ দায়ী যা এক
ধরণের মাদক দ্রব্যের মতোই, একজন প্রেমিক বায়োলজিক্যাল দৃষ্টিকোণ থেকে মাদকাসক্ত,
আর এ মাদকাসক্ততাই এমন কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দায়ী।কিন্তু কেনো?কারণ
তো অবশ্যই আছে, যদি এ অযোক্তিক প্রেম এবং দূর্বার আকর্ষণ বা উন্মুত্ততা তৈরি না
হতো তবে কখনোই পরিবার গঠন হতোনা, অন্তত সন্তান জন্মদান এবং তাকে লালন পালন করার জন্য
দুজন মানুষের মাঝে গভীর আকর্ষণ বজায়
থাকাটা খুবই কার্যকরী।বিবর্তন মানুষের মস্তিষ্কে বংশগতিরক্ষার প্রবণতাকে এতটাই
মারাত্মক এবং শক্তিশালী করে তুলেছে অনেকে প্রেমিকাকে ঈশ্বর মনে করে, তাকে রক্ষা
করার জন্য অন্যদের সাথে লড়াই করে, এমনকি নিজের জীবন দিয়ে দিতেও
বিচলিত হয়না, আর যার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে এর
নেগেটিভ ইফেক্টিভিটি, এভুলিউশনাল মিসফায়ারিং।বিবর্তন প্রয়োজনীয় একটি দিককে সংরক্ষণ
করতে গিয়ে ভয়ানক একটি ভাইরাস জন্ম দিয়েছে, লাভ ভাইরাস, ধর্মের মতোই এটি একটি
এভুলিউশনাল এরর।
একজন নারী নিশ্চয়
পৃথিবীর ৩.৮ বিলিয়ন নারী অপেক্ষা সর্বোত্তম নয়, ঠিক তেমনি কোনো একটি বিশেষ ধর্মের
ঈশ্বরও অন্যান্য ধর্মের ঈশ্বদের চেয়ে কোনো অংশে গুরুত্বপূর্ণ নয় কিন্তু এভুলিউশন
লাভ ভাইরাসের মতোই এক ধর্মীয় মহামারী সৃষ্টি করেছে যেখানে নিজেদের ঈশ্বর এবং
ধর্মকে তারা অযোক্তিকভাবেই রক্ষা করতে চায়।ঈশ্বরের মহিমা বর্ণনা করার জন্য
কোরান,পুরাণ,বেদ এবং বাইবেল রচিত হয়, প্রতিটি ধর্মের ঈশ্বর প্রেমিকার মতোই অন্য
সকল ঈশ্বর থেকে শ্রেষ্ঠতর!
রিচার্ড ডকিন্স
বলেছিলেন, ভাষাগুলি ন্যাচরাল সিলেকশনের মাধ্যমেই বিবর্তিত হয়েছে, প্রথম অবস্থায়
যথেষ্ঠ র্যান্ডমভাবে, এ বিবর্তন প্রকৃয়া ভাষাগুলির মাঝে দৃশ্যমান পার্থক্য তৈরি
করার পূর্ব পর্যন্ত তাদের মধ্যে দৃশ্যমান কোনো তারতম্য ছিলোনা।ইংরেজী ভাষার জন্ম
হয়েছে পঞ্চাদশ থেকে অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে।র্যান্ডম জেনেটিক ড্রিপটের কোনো
সাংস্কৃতিক সমরুপ প্রকৃয়ায়, ল্যাটিন ভাষা বদলে গেছে স্প্যানিশ,পর্তুগীজ,ইতালীয়,ফরাসী,রোমান
এবং এ ভাষাগুলির নানান ডায়ালেক্টে।ঠিক তেমনি ধর্মগুলিও বিবর্তিত হয়েছে যথেষ্ঠ র্যান্ডম
এবং কাল্পনিক প্রকৃয়ায় যা একটা সময় ধর্মগুলির মাঝে পার্থক্য তৈরি করে কিন্তু একটু
গভীরভাবে দেখলে আমরা দেখবো ধর্মগুলির ক্রোমোটিক কোড একই, প্রতিটি ধর্মেই ঈশ্বর
আছে,স্বর্গ-নরক আছে, অমরত্বের ধারণা আছে।ধর্মগুলির মোলিকত্বে ধর্মে একপ্রকার
সাদৃশ্যতা তৈরি হয়েছে ঠিক যেমনি লাভ ভাইরাসের ক্ষেত্রে , যেখানে বংশ রক্ষার
বিবর্তনীয় প্রেসার থেকে দুটি মানব মানবী একত্রিত হয়ে অনন্তকাল থাকতে চায় , এবং
এক্ষেত্রে পৃথিবীর সকল দেশের মানুষের সাদৃশ্যতা থাকলেও তাদের ভালোবাসার সংস্কৃতি
আলাদা!
জীববিজ্ঞানী লুইস ওলপার্ট
তার ‘’Six Impossible things Before Brekfast’’ নামক গ্রন্থে অযোক্তিক বিশ্বাসের
সাপেক্ষে বলেছিলেন, এটিকে সাধারণীকরণ করা যেতে পারে।তার মতে প্রচন্ডভাবে আকড়ে ধরা
অযোক্তিক বিশ্বাসগুলি দ্রুত মাইন্ড সুইপ করার বিপক্ষে কাজ করে।আদিম মানুষগুলি যেসব
বিশ্বাসকে শক্তি করে তখনকার পরিস্থিতিতে সারভাইভ করেছিলো যদি তারা তখন তা না করতো
তবে সেটি আদিম মানুষের বিবর্তনের জন্য অনুকূল হতোনা।এছাড়া শিকার করার সময় যদি
দ্রুত তাদের মুড সুইং করতো তবে তারা দৃঢ় সংকল্প হয়ে শিকার করতে পারতোনা!অতএব
ওলপার্ট যুক্তি দেখিয়েছিলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে দোদুল্যমান অনিশ্চয়তা অথবা সংশয়
থেকে অযোক্তিক বিশ্বাসই টিকে থাকার জন্য অথবা মনকে সেন্ট্রালাইজ রাখার জন্য শ্রেয়।
‘’Social Evolution’’ নামক একটি গ্রন্থে রবার্ট
টিভার্স ১৯৭৬ সালে আত্ম-প্রবঞ্চনার তত্ব আলোচনা করেন।সেলফ হিপোক্রেসি হলো একটি
সত্য ইনফরমেশনকে নিজের সচেতন মন থেকে আড়াল করে রাখা এমনকি অন্যদের কাছ থেকেও আর
এটি করতে গিয়ে সে অন্যদের কাছ থেকে নিজের চোখকে আড়াল করার চেষ্টা করে, হাত ঘেমে
যায়, গলা ফেটে যায় কিন্তু যখন একজন ব্যাক্তি এসব আচরণ সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠে তখন
সে অত্যন্ত সচেতন এবং সতর্কভাবে কোনোপ্রকার অস্তিরতা ছাড়াই মিথ্যা কথা বলতে পারে!
‘’Optimism; the biology of
Hope’’ গ্রন্থে নৃতত্ত্ববিদ
লায়োনেল টাইগার বলেছিলেন, মানুষ জীবনের নেগেটিভ ডায়মেনশগুলি দেখতে অত্যন্ত কষ্ট
অনুভব করে যা তাদের মানসিকভাবে দূর্বল করে তোলে, এটি টিকে থাকার ক্ষেত্রে ভয়ানক
একটি প্রতিবন্ধকতা।আর মানুষ সবসময় সেসব বিষয় নিয়েই চিন্তা করতে চায় যা তাদের
মস্তিষ্কে কোন ভয়ানক প্রেসার তৈরি করেনা, তাদের মানসিকভাবে অত্যাচার করেনা, তাদের
মনকে বিক্ষিপ্ত করে তোলেনা এবং যা কিছু তাদের জীবনকে দূর্বিসহ করে তোলেনা।মৃত্যুর
পর কোনো জীবনের অস্তিত্ব নেই; এটি মানুষের জন্য ভাবাটা ভয়াভহ কষ্টের, তাই তারা এ
ভাবনা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে থাকতে চায়, বিবর্তন নিজেই তার মস্তিষ্ককে প্রেসার
করে সে যেনো মৃত্যুর পরে জীবনের অস্তিত্বহীনতাকে অস্বীকার করে ।যেনো সে অনন্ত জীবনকে চিন্তা এবং কল্পনা করে, মনের মধ্যে
গভীর অযোক্তিক বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করে যা তার মাঝে শক্তি সাহস এবং টিকে থাকার
অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করবে।আর এভাবে মানুষ তার জীবনের অসম্পূর্ণতা, অতৃপ্তি এবং শূন্যতাকে
নিরাময় করার জন্য নিজের জীবন সম্পর্কে পজেটিভ থাকার চেষ্টা করেছে, যেভাবেই হোক যে
কোনোভাবে, যখন সে নির্যাতিত হয়েছে তখন সে ঈশ্বরের আশ্রয় নিয়েছে, যদিও সে ঈশ্বরকে
কখনো দেখেনি, তবুও, এ বিশ্বাস তাকে জীবনে পথ চলার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা দিয়েছে,
মানসিক শক্তি যুগিয়েছে আর যে জন্য সে টিকে ছিলো, বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পরিবর্তে!
তথ্যসুত্রঃ গড ডিলুশন, হাউ দ্যা মাইন্ড ওয়ার্ক, সেলফিশ জিন, ভার্চুয়াল ব্যাংস্পেস, বায়োলজি অব বিলিফ।এছাড়াও অনুসরণ করতে পারেন-
Dunbar, R. I. M. (1992). Neocortex size as a constraint on group size in primates. Journal of Human Evolution, 22(6), 469–493.
Geher, G., Carmen, R., Guitar, A., Gangemi, B., Sancak Aydin, G., and Shimkus, A. (2015) The evolutionary psychology of small-scale versus large-scale politics: Ancestral conditions did not include large-scale politics. European Journal of Social Psychology, doi: 10.1002/ejsp.2158.
Gray, P. (2011). The special value of age-mixed play. American Journal of Play, 3, 500-522.
Harlow, H.F., & Suomi, S. J. (1971). Social Recovery by Isolation-Reared Monkeys, Proceedings of the National Academy of Science of the United States of America, 68,1534-1538.
Hrdy, S. B. (2009) Mothers and Others: The Evolutionary Origins of Mutual Understanding. Cambridge: Harvard University.
Srivastava, K. (2009). Urbanization and mental health, Industrial Psychiatry Journal, 18, 75-76.
Wolf, R. (2010). The Paleo Solution. Las Vegas, NV. Victory Belt Publishing.
Bell, G. (1982) The masterpiece of nature: The evolution and genetics of
sexuality. London: Croom Helm.
D'Arcy, M.C. (1952) The Mind and Heart of Love. 2nd ed. London: Faber and Faber.
Emde, R.M. and Harmon, R.J., eds. (1982) The Development of Attachment and Affiliation Systems. New York: Plenum.
Fisher, M. (1990) Personal Love. London: Duckworth.
Freud, S. (1962) Three Essays in the Theory of Sexuality. Trans. and ed. by J. Strachey. London: Hogarth Press.
Fromm, E. (1957) The Art of Loving. London: Allen and Unwin.
Hollingdale, R.J. (1970) Introduction to Schopenhauer: Essays and Aphorisms. Harmondsworth: Penguin.
Konner, M. (1982) Biological Aspects of the Mother-Infant Bond. In Emde, R.M. and Harmon, R.J., eds. The Development of Attachment and Affiliation Systems. New York: Plenum, pp. 137- 159.
Leach, P. (1979) Baby and Child. Harmondsworth: Penguin.
Lorenz, Konrad. (1966) On Aggression. Translated by Marjorie Latzke. London: Methuen.
Mellen, S.L.W. (1981) The Evolution of Love. Oxford and San Francisco: W.H. Freeman.
Mursten, B.L. 1988. "A Taxonomy of Love," in Sternberg, R.J. and Barnes, M.L. eds. (1988) Psychology of Love. New Haven: Yale University Press, pp. 13-37.
Pascal (1652/1866) "Discours sur les passions de l'amour," in Pensées. ed. with Introduction and Notes by E.Havet. Paris: Ch. Delagrave, pp. 251-263.
Ross, D. (1972) R. Stanley Hall: The Psychologist as Prophet. Chicago: University of Chicago Press.
Russell, B. (1929) Marriage and Morals. London: Allen and Unwin.
D'Arcy, M.C. (1952) The Mind and Heart of Love. 2nd ed. London: Faber and Faber.
Emde, R.M. and Harmon, R.J., eds. (1982) The Development of Attachment and Affiliation Systems. New York: Plenum.
Fisher, M. (1990) Personal Love. London: Duckworth.
Freud, S. (1962) Three Essays in the Theory of Sexuality. Trans. and ed. by J. Strachey. London: Hogarth Press.
Fromm, E. (1957) The Art of Loving. London: Allen and Unwin.
Hollingdale, R.J. (1970) Introduction to Schopenhauer: Essays and Aphorisms. Harmondsworth: Penguin.
Konner, M. (1982) Biological Aspects of the Mother-Infant Bond. In Emde, R.M. and Harmon, R.J., eds. The Development of Attachment and Affiliation Systems. New York: Plenum, pp. 137- 159.
Leach, P. (1979) Baby and Child. Harmondsworth: Penguin.
Lorenz, Konrad. (1966) On Aggression. Translated by Marjorie Latzke. London: Methuen.
Mellen, S.L.W. (1981) The Evolution of Love. Oxford and San Francisco: W.H. Freeman.
Mursten, B.L. 1988. "A Taxonomy of Love," in Sternberg, R.J. and Barnes, M.L. eds. (1988) Psychology of Love. New Haven: Yale University Press, pp. 13-37.
Pascal (1652/1866) "Discours sur les passions de l'amour," in Pensées. ed. with Introduction and Notes by E.Havet. Paris: Ch. Delagrave, pp. 251-263.
Ross, D. (1972) R. Stanley Hall: The Psychologist as Prophet. Chicago: University of Chicago Press.
Russell, B. (1929) Marriage and Morals. London: Allen and Unwin.
Comments
Post a Comment