মনোক্সাইড ব্রেন, মুন্না মাইকেল, গবেষক হেলিক্স ইউনিভার্সিটি













অজ্ঞতা কুসংস্কারের জন্ম দেয়।আর সেই কুসংস্কারগুলোকে মানুষ থিওরির মতো বিশ্বাস করে।আর গনহিস্টোরিয়া অবশ্যই মানসিক ব্যাধি।



চক্ষু বিশেষজ্ঞ ‘উইলিয়াম ভিলমার (WilliamWilmer)’ ১৯২১ সালে ‘আমেরিকান জার্নাল অব অফথালমোলজি’তে একটা আজব ধরণের গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন। সেই গবেষণাপত্রে তিনি একটা পরিবারের ভেতরে ঘটে যাওয়া ঘটনা উল্লেখ করেছিলেন। সঙ্গত কারণেই তিনি পরিবারটির নাম প্রকাশ করেননি। তিনি তাদের পরিবারকে সম্বোধন করেছিলেন ‘এইচ (H)’ আদ্যাক্ষর দিয়ে। তো আমাদের এই ‘এইচ’ পরিবার যে বাড়িতে বসবাস করছিলেন সেই বাড়ি কিভাবে কিভাবে যেন ভূতের আড্ডাখানা হয়ে গিয়েছিলো। তাদের বাড়িতে দরজা-জানালা অযথাই ধড়াম ধড়াম শব্দ করে বন্ধ হয়ে যেত। রুমের আসবাবপত্রগুলো নড়াচড়া করতো। আর সবচেয়ে বড় এবং বিরক্তিকর ব্যাপার যেটা সেটা হলো বাড়ির খালি কক্ষগুলোতে কারো হাঁটাচলার এবং দৌড়াদৌড়ির শব্দ পাওয়া যেত। ঐ পরিবারের এক শিশু একবার স্পষ্ট অনুভব করেছিলো তার কোলের উপর কে যেন বসে আছে। আরেকবার এক প্রাপ্তবয়স্ক সদস্য দেখলেন অপরিচিত কে যেন তাকে মারতে তেড়ে আসছে! এক রাতে ঐ বাড়িরই এক মহিলা সদস্য দেখলেন তার বিছানার পাশে একজন পুরুষ এবং আরেকজন মহিলা যুগলবন্দী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু খানিকবাদেই তারা অদৃশ্য হয়ে গেলো।


haunted-house (1)



মানুষ যেরকম একটা হাসির ব্যাপার দেখে শুরুতে খুব হাসলেও এক পর্যায়ে ব্যাপারটা একঘেয়ে হয়ে
দাঁড়ায়, ভয় কিংবা আতংকের ব্যাপারটাও তেমনি। আপনি কোন একটা জিনিস দেখে যতই ভয় পাননা কেন, ঘন ঘন দেখতে দেখতে এক পর্যায়ে সেটাও বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু এইক্ষেত্রে সাথে বোনাস হিসেবে পাবেন হতাশা এবং বিষন্নতা। আমাদের সেই ‘এইচ’ পরিবারের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিলো। এক পর্যায়ে পুরো পরিবার বিষন্ন এবং হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলো। কিন্তু তারা এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যেতেও পারছিলো না। ঠিক এমন সময় তাদের হতাশাগ্রস্ত জীবনে আলো হয়ে এলো একটা ছোট্ট আবিষ্কার। পরিবারের একজন দেখলো তাদের বাড়ির ফার্নেসটাতে মারাত্মক ত্রুটি আছে। ফার্নেসটার কাজ ছিলো বাড়ির ভেতরের সব বিষাক্ত গ্যাসকে চিমনি দিয়ে বাইরে বের করে দেয়া। কিন্তু এর বদলে সে গ্যাসকে ছড়িয়ে দিচ্ছিলো সারা বাড়ি। দেখা গেলো আমাদের পুরো ‘এইচ’ পরিবার কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়ার শিকার! কার্বন মনোক্সাইড (CO) হচ্ছে গন্ধবিহীণ, বর্ণবিহীন বিষাক্ত গ্যাসীয় পদার্থ।









উন্মুক্ত পরিবেশে এই গ্যাসকে সহজে শনাক্ত করা যায় না। আমাদের মানবশরীরের রক্ত যত সহজে অক্সিজেন শোষণ করতে পারে ঠিক তত সহজেই কার্বন মনোক্সাইডও শোষণ করে ফেলতে পারে। এর ফলে দেখা দেয় শারিরীক দূর্বলতা, বমি বমি ভাব, দুশ্চিন্তা, মানসিক অস্থিরতা ইত্যাদির মত উপসর্গ। রক্তে এই বিষক্রিয়ার মাত্রা সামান্য একটু বেশি হলে মানুষ মারাও যেতে পারে।তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপার যেটা সেটা হলো মৃত্যুর দিকে আগানোর সাথে সাথে এই বিষক্রিয়ায় আপনার ভেতরে হ্যালুসিনেশানের মাত্রাও বাড়তে থাকবে। ১৯২১ সালে কোন একটা জার্নালে কার্বন মনোক্সাইডের বিষক্রিয়াজনিত ক্ষমতা প্রকাশ পাওয়া আর ২০১৫ সালে মঙ্গলে বহমান পানির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া একইরকম চমকপ্রদ ঘটনা। কারণ রোগীর পশ্চাৎদেশ দিয়ে তামাকের ধোঁয়া প্রবেশ করানো সেই আমলের ডাক্তারদের নিকট খুবই জনপ্রিয় চিকিৎসা ছিলো! অনেক ডাক্তার রোগীদের ধূমপানের ব্যাপারেও উৎসাহ দিতেন। যাই হোক, রসিকতা ছেড়ে মূল বক্তব্যে ফিরে যাই। এখন প্রশ্ন হল-কার্বন মনোক্সাইডের উৎস কি কি হতে পারে? উপরেতো একটা পেলেন যে ত্রুটিপূর্ণ ফার্নেস হতে কার্বন মনোক্সাইডের বিষক্রিয়া ছড়াতে পারে। আরেকটা হচ্ছে সিগারেট। এছাড়াও আরো হতে পারে ডিজেল এবং পেট্রোলচালিত গাড়ি ও যন্ত্রপাতি, গ্যাসের চুলা এবং লাকড়ির চুলা। একটা দরকারী তথ্য হচ্ছে-যে চুলায় আগুনের শিখা নীল সেই চুলার থেকে হলুদ আগুনের শিখাবিশিষ্ট চুলা সাধারণত বেশি কার্বন মনোক্সাইড উৎপন্ন করে থাকে। এর মানে এই নয় যে নীল শিখার চুলায় কার্বন মনোক্সাইড উৎপন্ন হয় না। অবশ্যই হয়, কিন্তু পরিমাণে কম। ২০০৫ সালে একজন মহিলা ৯১১ তে ফোন দিয়ে বললেন তার বাথরুমে নাকি তিনি ভূত দেখতে পাচ্ছেন। পরে খুঁজে দেখা গেলো বাথরুমের ওয়াটার হিটারে লিক আছে যেটার মাধ্যমে পুরো ঘর কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসে ভরে যাচ্ছিলো। সুতরাং এরপরে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে কিংবা কোন খালি বাড়িতে কৌতূহলবশত উঁকি মেরে দেখতে গিয়ে যদি ধুপধাপ লাফালাফির শব্দ, প্রেতাত্মাদের রক কনসার্টের বাদ্য-বাজনার শব্দ শুনতে পান আর ছুরি হাতে কাউকে তেড়ে আসতে দেখেন, তাহলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবার আগে সেখানে কার্বন মনোক্সাইড জাতীয় বিষাক্ত গ্যাসের অস্তিত্ব আছে কিনা সেটা নিশ্চিত হয়ে নিন। আর জেনে রাখুন- “ধুমপান জ্বিন-ভূত দেখার জন্যে উপকারী”!







লিখেছেনঃ মুন্না মাইকেল, বিজ্ঞান গবেষক এবং মডারেটর হেলিক্স ইউনিভার্সিটি।



Comments

Popular posts from this blog

হিগস ফিল্ড ফিবোনিশি,গোল্ডেন রেশিও সাপেক্ষে ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনার একটি পরিসংখ্যান!, লিখেছেন- রিসাস, পার্ট-১০

I am Planck

টাইম প্যারাডক্স এবং ঈশ্বরের অস্তিত্বের অসম্ভাব্যতা!, লিখেছেন-রিসাস, পার্ট- ২১