উইগনারস ফ্রেন্ড এবং ঈশ্বরের অস্তিত্বের অসম্ভাব্যতা!, লিখেছেন- রিসাস, পার্ট-২২


       
Rewriting Wigner's Friend - YouTube





উইগনার ১৯৬১ সালে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার পরিমাপসংক্রান্ত একটা চিন্তা পরীক্ষার রূপরেখা দেন, সেটাই উইগনারস ফ্রেন্ডনামে পরিচিত।উইগনার ফ্রেন্ড থিওরিটি প্রয়োগের মধ্যে দিয়ে আমরা ঈশ্বরের অস্তিত্বের অসম্ভাব্যতা প্রমাণ করার প্রচেষ্ঠা করবো।উইগনার ফ্রেন্ড থিওরি ব্যাবহার করে বাংলাদেশের তথাকথিত উপন্যাসিক হুমায়ুন আহাম্মদ কসমিক অবজার্ভারের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন, যদিও প্যারালাল ইউনিভার্স তত্বটির মাধ্যমে আমরা কসমিক অবজারভার ব্যাতীতই মহাবিশ্বকে এক্সপ্লেইন করতে পারবোযাইহোক, এ প্রসঙ্গে শ্রডিঙ্গারের বেড়ালের গল্পটিই বলা যাক,



উইগনারের একটি বিড়াল ছিলো যাকে তিনি খুব ভালোবাসতেন।কিন্তু তার তত্বকে প্রমাণ করতে হলে বিড়ালটিকে শ্রডিঙ্গারের বাক্সে রাখতে হবে।শ্রডিঙ্গারের বাক্সটি ছিলো অত্যন্ত ভয়াভহ।সেই বাক্সে থাকবে একটি তেজস্ক্রিয় পদার্থ যেটি একটিভ হলে বিড়ালটি মারা যেতে পারে আর যদি না হয় তবে বিড়ালটি  বেঁচে থাকবে।মনে করুন, তেজস্ক্রিয় পদার্থটি অ্যাকটিভ হওয়ার পসিবিলিটি ৫০ ভাগ।তার মানে বেড়ালটির জীবিত থাকা এবং না থাকার সম্ভাবনায় কাজ করবে অনিশ্চয়তা।প্রশ্ন হলো বেড়ালটি জীবিত অথবা মৃত?



উইগনার এত বিরাট অনিশ্চয়তা সহ্য করতে পারবেন বলে মনে হয়নি তার।তার এত ভালোবাসার বিড়ালকে তিনি অনিশ্চয়তার দোলনায় দোদুল্যমান রাখবেন এবং তাও তার চোখের সামনে, এটা কী করে হয়?যাইহোক, উইগনার তার বন্ধুর সাথে আলোচনা করে একটি সুন্দর সিদ্ধান্ত নিলেন।তিনি তার বন্ধুকে বললেন, সে যেনো তার বিড়ালটকে নিয়ে এক মিনিট অতীতের জগতে চলে যায় এবং এক মিনিট অতীতে গিয়ে এক্সপেরিমেন্টটি করে।তার বন্ধু বিড়ালটিকে নিয়ে ওয়ার্মহোলের ভেতর দিয়ে এক মিনিট পূর্বে চলে গেলো। এবং বিড়ালটিকে শ্রডিঙ্গারের সেই সায়েন্টিফিক বাক্সে রেখে তার শাটার অফ করে দিলো।এক মিনিট পূর্বের জগতে তার বন্ধু এখনো এক্সপেরিমেন্টটি শুরু করেছে কীনা উইগনার  তা জানেন না, অথবা তার বন্ধু আসলেই সেখানে যেতে পেরেছে কীনা, বিড়ালটার কী অবস্থা?সেটি কী জীবিত নাকি মৃত!উইগনারের মস্তিষ্কে তখন সম্ভাব্য সকল বিকল্পই কাজ করছিলো, এক মিনিট পরের জগত থেকে তিনি যেহেতু এক মিনিট পূর্বের জগতকে জানতে পারছিলেন না অতএব তার মস্তিষ্কে সম্ভাব্য সবকিছুই ঘটছিলো বা ইনফিনিটি ইতিহাস তার মস্তিষ্কে দোদুল্যমান হয়ে উঠলো।উইগনারের কাছে একইসাথে এবং একইসময় তার বন্ধুর ইতিহাস এবং বাক্সের ভেতরে বিড়ালটির ইতিহাস ছিলো সম্ভাবনাময় বা বিমিশ্র, কমপ্লেক্স।


time machine gifs | WiffleGif


উইগনারের বন্ধু বাক্সের দরজা ওপেন করেনি এখনো, আর মাত্র দু-মিনিট পর তিনি শাটার অন করবেন।তার কাছে মনে হচ্ছিলো, হয়তো বিড়ালটি জীবিত অথবা মৃত কিন্তু তিনি নিশ্চিত নন।তার মস্তিষ্কে একটি সম্ভাবনাময় কমপ্লেক্স সিচুয়েশন কাজ করছিল।একটা সময় তিনি দরজাটি ওপেন করলেন এবং বেড়ালটির একটি ইতিহাস তিনি কনফার্ম হলেন, আর ঠিক সে মুহূর্তে উইগনার ওয়ার্মহোলের ভেতর দিয়ে একমিনিট পূর্বে চলে এলো, উইগনারের ব্রেন কিন্তু তখনও বিড়ালটির ইতিহাস সম্পর্কে অনিশ্চিত, তিনি তার বন্ধুকে জিজ্ঞেস করার পূর্বে কখনোই নিশ্চিত হতে পারবেন না যে বিড়ালটির সাথে কী হয়েছে, হয়তোবা তিনি যখন শাটার ওপেন করতেন তখন তিনি বিড়ালটির যেকোনো একটি ইতিহাস নিশ্চিত হতেন।হয়তোবা সেটি হতো অন্যরকম।আর যদি আমরা মনে করে নেই, বাক্সের ভেতরের প্রতিটি এটমও পর্যবেক্ষক, তাহলে তাদের পর্যবেক্ষণেও হয়তো বিড়ালটির ভিন্ন ভিন্ন কোয়ান্টাম ইতিহাস দেখা দিতো। আর এভাবেই আমরা একইস্থানে একইসময় বিলিয়ন বিলিয়ন ডায়মেনশনের মহাবিশ্বের অস্তিত্বের নির্দেশনা পেয়ে থাকি যাকে বলা হয়, মেনি ওয়ার্ল্ড ইন্টারপ্রিটেশন।কিন্তু ইউগনার বলেছিলেন, যদি  উগনারের ফ্রেন্ড উইগনারকে তার পর্যবেক্ষণের রেজাল্টেন্ট জানিয়ে দেয় তবে সেই ইনফরমেশন উইগনারকেও প্রভাবিত করবে এবং তার পর্যবেক্ষণেও ঠিক একই রকম ইউনিভার্স ধরা পড়বে, আর এভাবেই দুজন স্বতন্ত্র পর্যবেক্ষকের পর্যবেক্ষিত বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন না হয়ে মোটামুটি একইরকম হয়!





এদিকে উইগনারের বোন, বিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী পল ডিরাকের স্ত্রী, মরগিত, উইগনারকে সব জায়গায় তন্ন তন্ন করেও খুঁজেও কোথাও পেলোনা।তিনি শুনেছিলেন উইগনারে ফ্রেন্ড তাদের বিড়ালটি নিয়ে অতীতে চলে গেছেন।কিন্তু কত কোটি বছর অতীতে অথবা কত মিনিট তিনি সেটা জানতেন না।তিনি সম্ভাব্য কয়েকটি অতীতে তার রোবটগুলিকে সেন্ড করে দিলেন, কারণ তিনি নিশ্চিত করে সঠিক সময়টি নির্দিষ্ট করতে পারছিলেন না।কিছুকিছু রোবট সময় ভ্রমণ করে কোটি বছর অতীতে চলে যায় এবং কিছু কিছু এক মাইক্রোসেকেন্ড অতীত অথবা মেগাসেকেন্ড, কেউ কেউ কয়েক বিলিয়ন বছর অতীতে চলে যায়।মরগীতের কাছে মনে হচ্ছিলো, বিগব্যাং এর পর থেকে মহাবিশ্বে সম্ভাব্য যত জিলিয়ন মাইক্রোসেকেন্ড সময় অতিবাহিত হয়েছে প্রতিটি মাইক্রোসেকেন্ডে যদি রোবট সেন্ড করে দেয়া যেতো তথা তার মস্তিষ্ক ছিলো হাইপার পসিবিলিস্টিক।যাইহোক, একটা সময় মর্গিত এক মিনিট অতীতে গিয়ে আকষ্মিক ইউগনারকে খুজে পান কিন্তু উইগনার বলার পূর্বে তার কাছেও বেড়ালটি এখনো ওয়েভ ফাংশন কলাফস করেনি।এদিকে ডিরাক বাসায় এসে মরগিতকে কোথাও খুজে পাচ্ছিলেন না, এবং তার মস্তিষ্কে ঠিক একইভাবে  হাইপার পসিবিলিটি একটিভেট হয়।এভাবে অনন্ত সংখ্যক অবজার্ভারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।হুমায়ুন আহাম্মদ মনে করতেন আল্টিমেট পর্যবেক্ষক ছিলেন ঈশ্বরকিন্ত অনন্তে আল্টিমেট কোনো বাস্তবতার অস্তিত্ব নেই, আল্টিমেট পর্যবেক্ষকের অস্তিত্ব আমরা কখনোই আবিষ্কার করতে পারবোনা, আমাদের মস্তিষ্কে আল্টিমেট পর্যবেক্ষকের লোকেশনটি সবসময় শূন্যই থাকবে, তথা আল্টমেটলি একটি সুপারপজিশনাল পার্টিকেলকে,  কে অবজার্ভ করছে তা আমাদের পক্ষে জানা ইম্পসিবল, আমরা অন্তিম পর্যবেক্ষকের ‘’শূন্যতাকেই’’ জানি।অতএব মহাবিশ্ব শূন্যের পর্যবেক্ষণে রয়েছে।এটি কোনো ঈশ্বরের সৃষ্টি নয়।স্প্রিচুয়ালিস্টরা বলেন, যেহেতু শূন্যতাকে অস্তিত্বশীল হতেও আমার অস্তিত্বের প্রয়োজন হয় অতএব আমার অস্তিত্ব ছাড়া শূন্যতার অস্তিত্বও অসম্ভবআমরা একে একে প্রতিটি ডায়মেনশন পরবর্তী অধ্যায়গুলিতে সময়ানুক্রমিকভাবে উপস্থাপন করবো।আমরা জানবো ঈশ্বরের অস্তিত্বের একটি যোক্তিক অসম্ভাব্যতা কিন্তু যদি আমাদের সামনে কোনো ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম উপস্থিত হয় তবে আমরা আমাদের যোক্তিক মন দ্বারা সেগুলি যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করবো।আমরা পরবর্তী অধ্যায়ে আলোচনা করবো কিভাবে শিশুরা ডুয়ালিস্টিক চিন্তা করে?কেনো ডুয়ালিস্টিক মাইন্ড গড ভাইরাস সৃষ্টির জন্যে দায়বদ্ধ।আমরা জানবো, কেনো আমরা ঈশ্বরকে দিয়েই মহাবিশ্বকে এক্সপ্লেইন করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করছি! 

তথ্যস্যত্রঃ 

  1. ^ Jump up to: a b c d e f g h E. P. Wigner (1961), "Remarks on the mind-body question", in: I. J. Good, "The Scientist Speculates", London, Heinemann
  2. ^ Jump up to: a b Deutsch, D. (1985). "Quantum theory as a universal physical theory". International Journal of Theoretical Physics. 24 (1): 1–41. Bibcode:1985IJTP...24....1D. doi:10.1007/BF00670071.
  3. ^ R. Penrose, The Road to Reality, section 29.8.
  4. ^ Everett, Hugh III. (1957). "'Relative State' Formulation of Quantum Mechanics". Reviews of Modern Physics. 29 (3): 454–462. Bibcode:1957RvMP...29..454E. doi:10.1103/RevModPhys.29.454.
  5. ^ Jump up to: a b Barrett, J. A., and Byrne, P. (eds.). (2012). The Everett interpretation of quantum mechanics: Collected works 1955–1980 with commentary. Princeton University Press.
  6. ^ Barrett, Jeffrey (2016-10-10). "Everett's Relative-State Formulation of Quantum Mechanics". Stanford Encyclopedia of Philosophy.
  7. ^ Jump up to: a b Brukner, Časlav (2017). "On the quantum measurement problem". Quantum [Un]Speakables II: 50 Years of Bell’s Theorem. Springer. arXiv:1507.05255. doi:10.1007/978-3-319-38987-5. ISBN 978-3-319-38985-1. OCLC 1042356376.
  8. ^ Healey, Richard (2016-12-22). "Quantum-Bayesian and Pragmatist Views of Quantum Theory". Stanford Encyclopedia of Philosophy.
  9. ^ von Baeyer, Hans Christian (2016). QBism: The Future of Quantum Physics. Harvard University Press. ISBN 9780674504646. OCLC 946907398.
  10. ^ Pusey, Matthew F. (2018-09-18). "An inconsistent friend". Nature Physics. 14 (10): 977–978. doi:10.1038/s41567-018-0293-7. ISSN 1745-2473.
  11. ^ Jump up to: a b c d Frauchiger, Daniela; Renner, Renato (2018). "Quantum theory cannot consistently describe the use of itself". Nature Communications. 9 (1): 3711. arXiv:1604.07422. Bibcode:2016arXiv160407422F. doi:10.1038/s41467-018-05739-8. PMC 6143649. PMID 30228272.




Comments

Popular posts from this blog

হিগস ফিল্ড ফিবোনিশি,গোল্ডেন রেশিও সাপেক্ষে ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনার একটি পরিসংখ্যান!, লিখেছেন- রিসাস, পার্ট-১০

I am Planck

টাইম প্যারাডক্স এবং ঈশ্বরের অস্তিত্বের অসম্ভাব্যতা!, লিখেছেন-রিসাস, পার্ট- ২১