প্রাইম নাম্বার এবং ঈশ্বরের অস্তিত্বের অসম্ভাব্যতা!, লিখেছেন- রিসাস, পার্ট- ৫
প্রাইম নাম্বার এবং ঈশ্বরের অস্তিত্বের অসম্ভাব্যতা
রেডিও কসমোলজিস্ট জোসেলিন রেডিও টেলিস্কোপের মাধ্যমে
১৯৬৭ সালে পালসার তারকা আবিষ্কার করেন এবং পালসারটির প্রতি ১.৩৩ সেকেন্ডের নিয়মিত
পর্যায়ক্রমটি দেখে তিনি অনুমান করে নিয়েছিলেন যে সম্ভবত পালসারটির এই নিয়মিত
পালসিং কোনো মহাজাগতিক ইন্টালেক্টের তৈরি।আমরা ছাড়াও ইউনিভার্সে সেন্টিয়েন্ট আছে
যারা পালসারের মেট্রোফনিক পালসিং ক্রিয়েট করতে পারে। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি আরো
এমন অনেক অসংখ্য পালসিং আবিষ্কার করেন যার ছন্দ মেট্রোফনিক নয়।আর তখনই জোসেলিনের
এল জি এম হাইপোথেসিস চুরমার হয়ে যায় এবং প্রমাণিত হয় পালসার কোনো ইন্টিলিজেন্ট
প্রাণীর তৈরি সংকেত নয়,
এটি একটি তারকা।ফিজিক্সের অতি-সাধারণ একটি ঘটনা।
তাই শুধু পালসিং দ্বারাই আমরা অপেক্ষামান কোনো গ্রহ
নক্ষত্রের নিকট আমাদের ইন্টালেকচুয়ালিটির সংকেত প্রেরণ করতে পারিনা আর এটি উন্নত
কোনো সিষ্টেমও নয়।রিচার্ড ডকিন্সের মতে, এক্ষেত্রে প্রাইম সংখ্যা অনেকেরই পছন্দের
ব্যাপার হতে পারে[5, 11, 17, 23, 29, 35, 41,]।কারণ
কোনো ভৌত উপায়ে এই সংখ্যাটি কখনোই প্রস্তুত করা সম্ভব নয়।মহাশূণ্যে মহাকর্ষ শক্তির
অদৃশ্য নেটওয়ার্কে ঝুলন্ত দ্যা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির অন্য কোনো প্রাণী আমাদের
গ্রহ থেকে পাঠানো এই প্রাইম সংখ্যাটি শনাক্ত করতে না পারলেও অন্তত কল্পনা করুন যে
যেকোনো উপায়ে তারা আমাদের গ্রহের সিগনালটি পাঠ করতে সক্ষম হলো।তারা নিশ্চিত হলো যে
মহাকাশে তারা ছাড়াও ইন্টালেকচুয়াল প্রাণীর এক্সিজটেন্স আছে।এবং আন্তঃমহাজাগতিক
শূন্যস্থান অতিক্রম করে বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে আমাদের গ্রহের সাথে অনেক ইনফরমেশন
বিনিময় করছে ।কোয়ান্টাম টানেলিং এর মতো আমাদের গ্রহের তথ্যগুলি তাদের
ব্রেন কপিপেস্ট করলো।ফ্রেড হয়েলের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ‘’এ ফর
এন্ড্রোমিডা’’ এবং
কার্ল স্যাগানের ‘’কন্টাক্ট’’ মুভিতে আমরা
যেমনটি দেখেছি।
কিন্তু আমরা কিভাবে তাদের রেসপন্স করবো?রিচার্ড
ডকিন্স বলেছেন, যে সভ্যতার ক্ষমতা আছে কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূর থেকে প্রাইম নাম্বার
সেন্ড করার মধ্য দিয়ে দূরবর্তী একটি গ্রহের সাথে কমিউনিকেট করার তারা অবশ্যই
আমাদের চেয়ে ক্ষমতা আর ইন্টালেক্টের দিক থেকে উন্নততর।তাদের নিকট আমাদের কমিউনিকেশনটা
কি ঈশ্বরের নিকট তার ক্রিয়েশনের উপাসনার মতো হয়ে যাবেনা?এমনকি যদিও
সেই সভ্যতা সংকেত পাঠানোর সময় খুব বেশি উন্নত নাও হয়ে থাকে এই অতি-বিশাল দূরত্ব
আমাদের ভাবতে বাধ্য করায় যে তারা বর্তমানে অনেক দূর এগিয়ে গেছে।*
সম্ভবত অনেকেই এ বক্তব্যের তাৎপর্য এখনো বুঝেন নি!একটু অপেক্ষা
করুন বুঝিয়ে বলছি।আমরা জানি স্পিড অব লাইট থেকে দ্রুত গতিতে মহাবিশ্বের একটি প্লেস
থেকে অন্য কোনো প্লেসে কোনো ইনফরমেশন সেন্ড করা সম্ভব নয়।
কারণ থিওরি অব রিলেটিভিটি অনুসারে স্পিড অব লাইট
কনস্ট্যান্ট বা ধ্রুব।সূর্য থেকে লাইট অব ওয়েভ যদি প্রতি পারসেকেন্ডে ৩ লক্ষ মাইল
বেগেও পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে তবুও আমাদের নিকট তার তথ্য আসতে সময় প্রয়োজন হবে আট
মিনিট আঠার সেকেন্ড।আলোকবর্ষ হিসেবে সূর্যের দূরত্ব পৃথিবী থেকে আট মিনিট আঠার
সেকেন্ড।সূর্যের কক্ষপথ যদি এই মুহূর্তে পরিবর্তন হয়ে যায় তাহলে তার
নিউজ পেতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আট মিনিট আঠার সেকেন্ড।ভয়েজার নভৌযানের
ক্ষেত্রে ইন্টারস্টেলার স্পেস হচ্ছে সূর্য ও তার নিকটতম নক্ষত্র আলফা সেন্টরির
মধ্যকার পথ, যে
পথের দূরত্ব ৪০,০০০,০০০,০০০,০০০
কিলোমিটার।সূর্যের কাছাকাছি গ্রহ পৃথিবী
থেকে যদি আলফা সেন্টরি নক্ষত্রের
কাছাকাছি কোনো গ্রহে আলোর গতিতেও কোন সিগনাল ট্রাভেল করে তবুও সময় প্রয়োজন হবে ৪.৪
আলোকবর্ষ।যার মানে আমি যদি আজ এই মুহূর্তে আলফা সেন্টরির নিকটতর কোনো গ্রহে একটি সিগনাল সেন্ড করি তবে সেই
সিগনালটি ইন্টারস্টেলারস্পেস ভ্রমণ করে সেই গ্রহে যেতে সময় প্রয়োজন হবে সাড়ে চার
বছর, যেই
সাড়ে চার বছর সময়ে হয়তোবা আমরা পৃথিবীতে কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করে ফেলতে
পুরোপুরিভাবে সক্ষম হয়ে উঠবো।আমাদের পৃথিবী থেকে সাড়ে বিশ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরের
এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিকে উদ্দেশ্যে করে আমরা যদি একটি সিগনাল সেন্ড করি এবং সেটি
যদি প্রতি পারসেকেন্ডে তিন লক্ষ মাইল বেগেও ছুড়ে চলে তবুও কোন একটি ইন্টেলেকচুয়াল
প্রাণী আমাদের পৃথিবী থেকে ভ্রমণরত সেই সিগনালটি পাঠ করার জন্যে সাড়ে বিশ লক্ষ বছর
অপেক্ষা করবে যেই সাড়ে বিশ লক্ষ বছর সময়ে আমরা ট্যাকনোলজিক্যালি আরো মিলিয়ন্থ গুণ
সমৃদ্ব হয়ে উঠবো।আর এ জন্যেই ডকিন্স বলেছিলেন,ইন্টারস্টেলার স্পেস থেকে কোনো ইন্টালেকচুয়াল প্রাণী
পৃথিবীতে সিগনাল সেন্ড করার সময় যদিও খুব একটা উন্নত অবস্থায় নাও থাকে কিন্তু
তাদের সাথে পৃথিবীর বিশাল দূরত্ব তাদেরকে আরো উন্নততর পজিশনে নিয়ে যাবে।
ভিন্নগ্রহের প্রাণীদের আমরা শনাক্ত করতে পারি বা না পারি, সম্ভাবনা
রয়েছে তারা আমাদের নিকট অনেক দিক থেকে অতি-মানবিক, দেবতুল্য যা ধার্মিকদের নিকট কল্পনাতীত।তাদের
ট্যাকনোলজিক্যাল অগ্রগতি আমাদের নিকট অতি-প্রাকৃত মনে হতে পারে।অন্ধকার যুগের কোন
এক নাগরিক যদি একুশ শতাব্দীতে প্রবেশ করে তবে সে যেমন কোয়ান্টাম কম্পিউটার, সুপারকম্পিউটার, ল্যাপটপ এবং
এন্ড্রোয়েড দেখে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করবে
ঠিক তেমনি আমাদের নিকট সেটি* সংকেত দ্বারা উদ্ভাবিত সেই সভ্যতাকে ঐশ্বরীক সভ্যতা
মনে হতে পারে।আর্থার সি ক্লার্ক বলেছিলেন,যথার্থ
উন্নত কোনো প্রযুক্তি ম্যাজিক থেকে আলাদা কোনোকিছু নয়।আমাদের সভ্যতা যে প্রযুক্তির
তৈরি, আমাদের
রকেট অথবা হলোগ্রাফিক প্রোজেকশন অন্ধকার যুগের মানুষদের নিকট মোসেজের সাগর দুই ভাগ
করা অথবা যিশুর পানির উপর দিয়ে হেঁটে চলে যাওয়ার চেয়ে কম বিষ্ময়কর মনে হবেনা।
সার্চ ফর এক্সট্রাটেরিস্টিয়াল এক্সিজটেন্স বা সেটি সংকেতের মাধ্যমে নিশ্চিত
এক্সট্রা-টেরিস্টিয়াল প্রাণীদের আমাদের নিকট ঠিক ততটাই দেবতা সমতূল্য মনে হতে পারে
যেমন করে মিশনারীদের মনে করেছিলো প্রস্তর যুগীয় মানুষরা যখন তাদের নিকট অস্র,টেলিস্কোপ,দিয়াশলাই এবং
শেষ চন্দ্রগ্রহণের তারিখ এবং সেকেন্ডের পঞ্জিকাসহ সঙ্গে করে তাদের নিকট এসেছিলো।
কিন্তু কোন অর্থে ভীন্নগ্রহের প্রাণীরা দেবতা হবেনা?অন্ধকার
যুগের মানুষ যদি টাইম ট্রাভেল করে কোন একভাবে একুশ শতকে প্রবেশ করে তবে তার নিকট
আমাদের সভ্যতার গুণাবলী দেখে এই সভ্যতাকে
একটি সুপারন্যাচরাল রিয়েলিটি মনে হতে পারে এবং আমাদেরকে মনে হতে পারে
সুপারম্যান,ঈশ্বর।
কিন্তু গুণ আর উৎস দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বাস্তবতা।গুণগতভাবে একটি
সভ্যতার মাঝে সুপারন্যাচরাল বা অতি-মানবিকতার একটি স্পর্শ থাকলেও উৎপত্তি বা উৎসের
দিক থেকে তাদের দুজনের মধ্যে ঐক্য থাকতে পারে।অন্ধকার যুগ এবং আধুনিক যুগের
মানুষের মাঝে গুণগত তারতম্য থাকলেও তারা একই এভুলিউশনাল প্রসেসের ফলাফল।তাদের দেহ
একই থার্মডিনামিক্সের সেকেন্ড ‘’ল’’ অনুসরণ করে
কাজ করে,’’ল’’ অব গ্রেভিটি
তাদের সকলকেই আকৃষ্ট করে,
তারা প্রত্যেকেই মেডিক্যালি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক সত্তা।গুণগত তারতম্য কোনোকিছুকে
মানব মস্তিষ্কে অতি-মানবিক রিয়েল্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতেই পারে; তার মানে এই
নয় যে ভীন্নগ্রহের প্রাণীরা আসলেই অতি-মানবিক অথবা ঐশ্বরিক।আমরা সম্ভবত এভুলিউশনাল
প্রসেস ভ্রমণ করে অন্ধকার যুগের মানুষদের মতোই মহাশূন্য থেকে ট্যাকনোলজিক্যালি
আপডেট এমন একটি মহাবিশ্বে জেনেটিক্যালি এভুলিউটেড হয়েছি , আমাদের নিকট
মনে হয় এই মহাবিশ্বটি আমাদের জন্যেই মেটা মহাবিশ্ব থেকে মেটা ইউনিভার্সাল ওয়েভ
ফাংশন কলাফস করে এটিউন করা হয়েছে,
এবং এমন কিছু প্যারোমিটার দ্বারা ‘’ল’’ অব ফিজিক্স
এই মহাবিশ্বকে ডোমেইন করছে যা অবশ্যম্ভাবী ভাবে মানব সভ্যতার অস্তিত্বের জন্যে
ফাইন টিউন, যারা
প্রশ্ন করতে পারে আমরা কারা?আমরা
কোথায় থেকে এসেছি?এবং
কেনো?এবং
অন্ধকার যুগের মানুষদের মতোই আমরা গ্রহ নক্ষত্রের মহাকর্ষীয় আন্তঃমহাজাগতিক
শৃঙ্খলা দেখে বিষ্মিত হই এবং প্রাণী জগতের জটিল গঠন প্রকৃতি আমাদের নিকট এই বিশ্বব্রহ্মান্ডকে
সুপারন্যাচরাল এক্সিস্টেন্সের অস্তিত্বের সাপেক্ষে একটি জোরালো গর্জন হিসেবে তুলে
ধরে।কিন্তু সেটি* সিগনাল দ্বারা সনাক্ত কোনো এক গ্যালাক্টিক সভ্যতাকে যেমন আমাদের
নিকট ঈশ্বর বা দেবতুল্য মনে হয় ঠিক তেমনি মহাবিশ্বের এভুলিউশনাল প্রসেসকে! এ মহাবিশ্ব
আমাদের নিকট ঠিক তেমন বিষ্ময়কর ঠিক যতটা বিষ্ময়কর মনে হয়েছিলো প্রাচীন মানুষদের
চোখে যখন মোজেস মহাসাগরকে করেছিলো দ্বিখণ্ডিত।
বৈজ্ঞানিক কল্পকাহীনির লেখক ডেনিয়েল এফ গলোউয়ে ‘’কাউন্টারফিট
ওয়াল্ড’’ নামক
একটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে এমন একটি প্রস্তাব করেছেন যে আমরা কম্পিউটার সৃষ্ট
ভারচুয়াল জগতে বাস করছি যা ডোমেইন করছে আরো উন্নততর কোনো সভ্যতা।[ যদিও কোয়ান্টাম
আনসারটেইনটিটি এবং কোপেনহেগেনের ইন্ট্রাপ্রিটেশন আক্ষরিক অর্থেই আমাদের মহাবিশ্বকে
কম্পিউটার সৃষ্ট ভারচুয়াল রিয়েলিটির মতোই মনে করে।]কিন্তু কম্পিউটারে যারা এই জগতটি
তৈরি করেছেন তারাও তো কোথাও থেকে এসেছেন,কোথায়
থেকে এসেছেন তারা,কোন
স্থান থেকে?’’ল’’ অব
প্রবাবিলিটি অনুযায়ী,
সরল এবং স্বাভাবিক পূর্বসূরি ব্যাতীত তাদের অস্তিত্বের ধারণার সকল সম্ভাবনা
নাকচ হয়ে যায়।তারাও সম্ভবত এভুলিউশনের জন্যে কোন এক ডারউইনের কাছে কৃতজ্ঞ।প্রাকৃতিক
বিবর্তনই কেবল সরল থেকে জটিলতম জীবন সৃষ্টির সুন্দরতম একমাত্র ক্রেইন।কম্পিউটার
সৃষ্ট একটি ভারচুয়াল রিয়েলিটি অবশ্যই ম্যাজিক্যাল কিন্তু তাদের ঈশ্বর খুব একটা
ম্যাজিক্যাল নয় বরং তাদের ঈশ্বর সহয এবং সরল উপায়ে প্রাণের আদিমতম কোষ
সায়ানোব্যাক্টেরিয়া থেকেই বিলিয়ন বিলিয়ন বছর ধরে বিবর্তিত হয়ে আসছে।
(তথ্যসুত্র- গুগল
এনসাইক্লোপিডিয়া, গড ডিলুশন, কোয়ান্টাম গড, দ্যা হলোগ্রাফিক ইউনিভার্স,
দ্যা গ্রেন্ড ডিজাইন।)
Comments
Post a Comment