সহানুভূতির বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা, লিখেছেন-রিসাস, পার্ট- ২৬
এমন অনেক
ব্যাতিক্রম রয়েছে সহানুভূতির যেখানে দেখা যায় আমরা এমন অনেক মানুষের প্রতি
সিম্পেথি প্রদর্শন করি যাদের সাথে আমাদের জেনেটিক্যাল কোনো রিলেশনই নেই।যেমন,
ইসলাম ধর্মে বলা হয়ে থাকে, তুমি এমনভাবে মানুষকে দান করো তোমার শরীরও যেনো তা টের না পায়।
যাদের সাথে আমাদের কোনো
জেনেটিক্যাল রিলেশন নেই, এবং যাদের সাথে আমাদের কখনো দেখা হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই
নেই, কেনো আমরা তাদের প্রতি সিম্পেথি অনুভব করি?WHYYY? এমনকি যদি ভিন্ন গ্রহ
থেকে অচেনা কোনো একটি প্রাণী আমাদের পৃথিবীতে উপস্থিত হয়, অসহায় ও বিপর্যস্ত
অবস্থায় , তবুও আমরা তার প্রতি সিম্পেথি অনুভব করবো।আমরা সিম্পেথি অনুভব করি
তখন যখন কাউকে আমাদের সামনে
নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করতে হয়, যাদের কাছ থেকে আমরা কখনো কোনো প্রতিদান পাবোনা,
এবং অত্যন্ত গোপনে, একা যাদের জন্যে কাজ করলে সমাজের কোনো মানুষের কাছে সুনাম অর্জনের
কোনো নিশ্চয়তা নেই কেনো আমরা তাদের প্রতিও সহনশীল হয়ে উঠি?আমাদের দেহের সেলগুলি
ইলেক্ট্রিক্যাল পালসেশনের মাধ্যমে একে অপরকে সিগনাল সেন্ড করে, এবং তাদের মাঝে
একটি হারমোনাইজড সম্পর্ক বিদ্যমান, তারা একে অপরের সাথে কোলাইড করছেনা, যদি কোলাইড
করতো তবে আমাদের দেহের হারমোনি নষ্ট হয়ে যেতো এবং আমরা বিলুপ্ত হয়ে যেতাম।আমাদের
দেহের প্রতিটি সেল একই জেনেটিক্যাল কোডেরই ক্লোন আর তাই তারা তাদের মাঝে একটি
জেনেটিক্যাল রিলেশন অনুভব করে, এবং নিজেদের ইনফরমেশনকে এভুলিউশনালি আপডেট করার
জন্যে কাজ করে যায়।অনেক সময় ভাইরাস অথবা ব্যাক্টেরিয়া যারা ভিন্ন জেনেটিক্যাল কোড
ম্যানটেইন করে তারা আমাদের দেহে কোলাইড করে নিজের
ডি এন এ প্রোফাইলকে
মহাবিশ্বে ক্লোন করার জন্যে।আমরা আমাদের সন্তান এবং প্রতিবেশিদের প্রতি সহযোগীতার
মানসিকতা রাখি কারণ তারা আমার জেনেটিক্যাল ইনফরমেশন কনটেইন করছে, অথবা তাদের সাথে
আমার রেসিপ্রকাল রিলেশনশিপ বিদ্যমান, আমি ভিন্ন কোনো সময় আমার কর্মের প্রতিফল
সমাজের মাঝে উদ্ভাসিত হতে দেখবো, আর সে জন্যেই আমার সিম্পেথি আমার সমাজ ও পরিবারের
জন্যে ন্যাচরাল!কিন্তু যারা আমার দেহের সেল নয়, যারা আমার ফ্যামলির কেউ নয় অথবা
সমাজের, শুধুমাত্র কয়েক মিনিট অথবা কয়েক সেকেন্ডের জন্যে এক জীবনে যার সাথে আমার
দেখা হয়েছে তার মর্মান্তিক পরিস্থিতি কেনো আমাকেও বিচলিত করবে?যখন জীবনকে আমরা
এভাবে দেখি তখন আমরা অনেক বেশি আধ্যান্তিক হয়ে উঠি এবং এসব অনুভূতির মাঝে ঈশ্বরের
উপস্থিতিকে টের পাই, হার্টবিটের মতো।
কিন্তু রিচার্ড
ডকিন্স, ভালোবাসা এবং ধর্মের মতোই এ ধরণের
সহানুভূতিকেও এভুলিউশনাল মিসফারারিং মনে করেন।মূলত, বিবর্তন আমাদের মাঝে ভালো-মন্দ
এ ধরণের কোনো বোধ সৃষ্টি করেনা সে যা করে তা হলো আমাদের মস্তিষ্কে কিছু নিয়ম আপডেট
করা যা আমাদের প্রজাতিকে সংরক্ষণ করতে সহযোগীতা করে।অনেক ক্ষেত্রে এ নিয়ম কনফিউজড
হতে পারে যার থেকে জন্ম নিতে পারে এমন কিছু যা আপাত দৃষ্টিতে মনে হবে ব্যাখ্যার
অতীত।একটি এক্সাম্পল দিলে বিষয়টি পরিস্কার হবে, গাছ একপ্রকার মলিকিউলার ক্লক
ম্যানটেইন করে সূর্যের আলোকে উপলব্দি করার জন্যে, এবং সূর্যের আলোকে বিশ্লেষণ করে
তারা তাদের বায়োলজিক্যাল ম্যাকানিজম পরিচালনা করে, কখন ফুল ফোটাতে হবে অথবা কখন
পাতা ঝরাতে হবে!এটা তারা করে আসছে কোটি কোটি বছর ধরে, আকষ্মিক পৃথিবীতে বৈদ্যুতিক
আলোর অনুপ্রবেশ ঘটলো, এবং তারা তাদের নিয়মেই মলিকিউলার ক্লক দ্বারা আলোক তরঙ্গকে
পড়তে লাগলো, কিন্তু রাতের অন্ধকারে নতুন আলোর উপস্থিতি তারা আলাদা করে নির্ণয় করতে
পারেনি, তারা তাদের পূর্বের নিয়মেই পথ চলতে লাগলো আর এতে করে ক্রমে তারা তাদের
লাইফ সাইকেল চেঞ্জ করে ফেললো এবং সম্পূর্ণ নিজের অজান্তে, বছরে যখন ফুল ফোটা
প্রয়োজন ছিলো, তখন ফুল ফুটছেনা , যদিও তাদের নিকট পরিস্থিতির পার্থক্য অভিন্নই ছিলো।এটি একটি মিসফায়ারিং, মথ
অথবা ফ্লাইং সং বার্ডদের মতোই।
ত
মতো ঠিক তেমনি কোটি
কোটি বছর ধরে বিবর্তন একটি বিশেষ প্রজাতির মাঝে তার জেনেটিক্যাল ইনফরমেশন আপডেট
করার জন্যে একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম পোগ্রাম করলো এবং তারা তাদের জেনেটিক্যাল
রিলেটিভদের স্নেহ,ভালোবাসা এবং সহযোগীতার মাধ্যমে প্রতিরক্ষা করে যাচ্ছিলো।এ
ভালোবাসা আসলে এ জন্যেই নয় যে তারা তাদের প্রজন্মের প্রতি সহানুভূতিশীল, এ
ভালোবাসার কারণ ছিলো তাদের মস্তিষ্কে একটি নিষ্কাম ‘’নিয়ম’’ পোগ্রামড, তারা শুধু
রোবটের মতো সেই নিষ্কাম নিয়মকেই অনুসরণ করছিলো, এবং গাছরা যেমন অজান্তে তাদের লাইফ
স্টাইল পরিবর্তন করে ফেলেছিলো, ঠিক তেমনি একই রোবটিক নিয়ম মিসফায়ারড হয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রজাতির মাঝে সিম্পেথি
জাগাতে শুরু করলো সে সকল মানুষের প্রতি যারা তাদের কেউ নয়।মানবতার একটি বৃহৎ অংশ
অন্ধ রোবটিক নিয়মের
মিসফায়ারিং এটা শুনে অনেকে প্রতিবাদ করতে পারেন,
অনেক মানবতাবাদীর
মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে আমার এ প্রবন্ধের প্রতি।কিন্তু তার মানে এই
নয় যে তারা অমানবিক হয়ে উঠবেন!
ব্যাপারটা একটু
ক্লিয়ার করি, মনে করুন একজন ব্যাক্তি তার ইউনিভার্সিটির কোনো একজন বন্ধুর প্রেমে
উন্মাদ।তাকে নিয়ে সে অজস্র কবিতা, উপন্যাস এমনকি চলচিত্রও নির্মান করেছেন, ঠিক যেমনঃ
দান্তের প্যারালাক্স
অথবা শেক্সফিয়রের
রোমিও জুলিয়েট!সে উন্মাদ ব্যাক্তিটি আমার প্রবন্ধটি পাঠ করে জানতে পারলো, প্রেম
আমাদের জেনেটিক্যাল ইনফরমেশনকে টিকিয়ে রাখার এক বিবর্তনীয় প্রেসার, বিবর্তন বংশগতির ধারাকে
অব্যাহত রাখার জন্যেই মানুষের মস্তিষ্কে রাসায়নিক বিক্রিয়া তৈরি করে, যা একজন মানুষকে উন্মাদ ও অযোক্তিক করে তোলে , যেকোনো ভাবে
সে তার ভালোবাসার মানুষকে কাছাকাছি রাখতে চায়, তার নিকট তখন তার গার্ল ফ্রেন্ডই
হয়ে উঠে ইউনিভার্স!কী হবে তখন?রোমিও কী তার গার্লফ্রেন্ডের প্রতি সেক্স ফিল
করবেনা?ভালোবাসা ফিল করবেনা?ভালোবাসার ব্রেন ম্যাকানিজম জেনে গেলেই কী নারীর প্রতি
একজন পুরুষের আকর্ষণ ধবংস হয়ে যাবে?মানুষের মৃত্যুর কারণ থার্মোডিনামিক্সের
সেকেন্ড ‘’ল’’, এ তথ্য কেউ জেনে যাওয়ার পর
কী সে অনন্তকাল বেঁচে থাকবে, তার কী মৃত্যু হবেনা?নিউটনের তৃতীয় সুত্র
সম্পূর্ণভাবে জানার পর যদি কেউ দেয়ালে ঘুসি মারে সে কী ব্যাথা ফিল করবেনা?নিউটনের
‘’ল’’ নিউটনের ‘’ল’’ ,কামনা কামনাই, ক্ষুদা ক্ষুদাই। একজন ব্যাক্তি সেক্সের
বায়োলজিক্যাল ব্যাখ্যা জেনে গেলেও যেমন তার সেক্স কাজ করবে ঠিক একইভাবে একজন
ব্যাক্তি সহানুভূতি,দয়াশীলতা অথবা করুণার এভুলিউশনাল ব্যাখ্যা জেনে গেলেও সেক্সুয়াল ফিলিংসের মতোই বিদেশীদের প্রতি সহানুভূতি
অনুভব করবে, এতে করে সহানুভূতির মাহত্ম্য নষ্ট হয়না!আমরা দেখেছি, যে নারী সন্তান
জন্ম দিতে অক্ষম অথবা মেডিক্যালি যিনি সন্তান জন্ম দেয়ার ম্যাকানিজম নষ্ট করে
ফেলেছেন তাদের মাঝেও যৌন অনুভূতি কাজ করে, বিবর্তন বংশবিস্তার করার জন্যে যে
নিয়মগুলি মানুষের মস্তিষ্কে পোগ্রাম করেছে সেই পোগ্রামগুলিই তার মাঝে কাজ করছে,
তার ব্যাক্তিগত পছন্দ বা অপছন্দ নয়, বিবর্তন পছন্দ অপছন্দ নির্ধারণ করছেনা, সে
শুধু কাজ করছে।
অনেকেই আমাকে প্রশ্ন
করে, এতকিছু জেনে কী হবে?সকলকিছু জানার পর কী মহাবিশ্ব চেঞ্জ হয়ে যাবে?ফিজিক্সের
সুত্রগুলি জানার পর কী ফিজিক্সের সুত্র গুলি চেঞ্জ হয়ে যাবে? ‘’ল’’ অফ গ্রেভিটি কী
জানে আমি তাকে জানি, যদি জানতো তবে সে কেনো আমাকে আকর্ষণ করছে?উত্তরটা এখানেই।ল অব
গ্রেভিটি জানেনা যে নিউটন তাকে জেনেছে কিন্তু তবুও গ্রেভিটি নিউটনকে আমাদের মতোই
কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করেছে , ঠিক তেমনি তুমি যদিও জানো যে মহাবিশ্বকে জানলেও
মহাবিশ্ব চেঞ্জ হবেনা কিন্তু তবুও তোমাকে মহাবিশ্ব সম্পর্কে জানতে হবে কারণ
মহাবিশ্ব সম্পর্কে যদি না জেনেই তুমি থাকতে পারতে তবে এখন তুমি যা জানো তা কিভাবে
জানলে?না জানতে চাইলেও তোমার উপায় নেই জানার পথ থেকে সরে আসার!ঠিক যেমনি বন্ধ্যা
জেনেও উপায় নেই কোনো নারীর প্রতি কামনা সংযত করার!কার্ল স্যাগান বলেছেন,
মহাবিশ্বকে আমরা জানি কারণ গ্রহ নক্ষত্রগুলি স্থির মধ্যাকর্ষের নিয়ম মেনে চলে, যদি
তারা একেবারেই অস্থির হতো, যদি তারা সুশৃংখল কোনো নিয়ম শৃংখলাকে অনুসরণ না করতো,
তবে আমরা মহাকাশ সম্পর্কে অনিশ্চিত থাকতাম, সূর্য প্রতিদিন পূর্ব দিকে উঠে বলেই
আমরা জানতে পেরেছি সূর্য পূর্ব দিকে উদিত হয়।কিন্তু যদি সে এ নিয়মের মাঝে স্থির না
থাকতো, যদি সমস্ত মহাবিশ্বই অনিয়মতান্ত্রিক হতো, যদি মহাবিশ্বে
সমস্ত নিয়মই ভেঙে
যেতো, তবে কোনোকিছুর মধ্যেই স্থিরতা থাকতোনা,নিশ্চয়তা থাকতোনা, আর আমরা জানতে
পারতাম না কিছুই।তার মানে আমরা নিজে থেকে কোনোকিছু জানছিনা, এবং আমরা জানতে বাধ্যও
না, থার্মোডিনামিক্সের সেকেন্ড ‘’ল’’ যেমন মহাবিশ্বে অনিযার্য ঠিক তেমনি আমরা
মহাবিশ্বকে জানবো, এটিও অনিবার্য!
যাইহোক।প্রাকৃতিক
নির্বাচন কিছু পখিদের মস্তিষ্কে এমন একটি নিয়ম গড়ে তোলে যেনো, তাদের
বাসায়,চিৎকাররত, হা করে থাকা লাল গর্তেই খাদ্য ফেলে,
অনেকক্ষেত্রে দেখা
যায়, সে বাসায় কোকিল ডিম পাড়ে এবং কোকিলের বাচ্ছাকেই তারা অবিরাম খাবার পরিবেশন
করে যায়, যার জন্যে অমানবিক পরিশ্রম করতে হয় তাদেরকে।হতে পারে, অপরিচিত এবং ভিন্ন
সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি আমাদের সিম্পেথি পাখিদের মতোই একটি বিবর্তনীয়
মিসফেলিং!
( তথ্যসুত্র- গড ডিলুশন,ব্লাইন্ড ওয়াচমেকার, বায়োলজি অব বিলিফ, হাও দ্যা মাইন্ড ওয়ার্ক, সেলফিশ জিন )
Comments
Post a Comment