বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের ঈশ্বরে বিশ্বাস এবং বিশ্বাসের বায়োলজি! লিখেছেন- রিসাস, পার্ট-৮
বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের ঈশ্বরে বিশ্বাস এবং বিশ্বাসের বায়োলজি!
কেনো এভুলিউশন মানুষের মস্তিষ্কে ঈশ্বরের বিশ্বাসকে সংরক্ষণ
করে?আমরা
এই অধ্যায়ে আলোচনা করবো ঈশ্বরে বিশ্বাসের বায়োলজি।আমরা জেনেছি ,আমাদের
মস্তিষ্ক একটি শক্তিশালী সিমুলেটিং সফটওয়্যার।রোজার পেনরোজের ভাষায়- নিউরাল
কোয়ান্টাম কম্পিউটার।যে দূরের একটি তুচ্ছ পলিথিন ব্যাগকে ভয়ানক একটি প্রাণী হিসেবে
সিমুলেটেড করতে পারে।কিন্তু ঈশ্বরও কি আমাদের ব্রেন দ্বারা ইন্টার-প্রিটেডেট একটি
পলিথিন ব্যাগ?যারা
চোখের ম্যাকানিজম নিয়ে পড়াশুনা করেছেন তারা জানেন আমাদের চোখের রেটিনায় রয়েছে একটি
ব্লাইন্ড স্পোট বা অন্ধবিন্দু।এই অন্ধবিন্দু কোনো দৃশ্যকে ফিল করতে পারেনা।এটি
একদম ভয়েড।কিন্তু আমরা যখন কোনো সাদা কাগজের দিকে তাকাই তখন আমরা সাদা কাগজটির
মধ্যখানে কোনো ভয়েড বা শূন্যস্থান দেখিনা,ব্লাইন্ডস্পোট
ফেব্রিক অব রিয়েলিটিতে কোনো ফল্ট তৈরি করেনা।কারণ প্রতিটি দৃশ্য আমাদের রেটিনায়
প্রবেশ করে ইলেক্ট্রিক্যাল ইমপালসেশন হিসেবে কোনো সলিড ম্যাটার হিসেবে নয়।আমরা যখন
একটি আপেলের দিকে তাকাই তখন আমাদের মস্তিষ্কের সেরিব্রাল কর্টেক্সের ক্যাপটিভ
এরিয়ায় ইলেক্ট্রিক্যাল ইমপাসলেশন হিসেবে
আপেলের ইনফরমেশন প্রবেশ করে,
সেখান থেকে এই বিক্ষিপ্ত আনপ্রসেসড ডাটা গুলির ভিত্তিতে ক্যাপটিপ এরিয়ায়
একপ্রকার প্রাথমিক পারসেপশন তৈরি হয়,
তারপর সে এই প্রাইমারি পারসেপশন সেন্ড করে সেকেন্ডারি এরিয়ায় যেখানে এই
ইনফরমেশন গুলি রিফাইন হয়।আমাদের সকল সেনসরি পারসেপশন তারপর প্রবেশ করে এসোসিয়েশন
সেন্টারে ,যেখানে
সবচাইতে সোফিস্টিকেটেড প্রকৃয়াটি ঘটে,এই
এরিয়াকে এসোসিয়েশন সেন্টার বলা হয় কারণ এখানে মস্তিষ্কের বিভিন্ন নিউরাল
ইনফরমেশনকে ‘’একসাথে’’ এসোসিয়েট করা
হয়।তারপর এই হায়ার ডায়মেনশনে,
প্রতিটি সিঙ্গেল সেন্সের ইনফরমেশনকে অন্য সকল সেন্সের সাথে ইন্টেগ্রেটেড করা
হয় যা বিশ্বের একটি রিচ এবং মাল্ডি-ডায়মেনশনাল মডেল তৈরি করে যা কনসাসনেসের
বিল্ডিং ব্লক।আমাদের মস্তিষ্কে আপেল কোনো
ফিজিক্যাল অবজেক্ট নয়,
এটি আমাদের নিউরোলজিক্যাল ফাংশনে একটি ইলেক্ট্রিক্যাল ইমপালসেশন হিসেবেই কাজ
করে কিন্তু তার মানে কি এই যে আপেলের কোনো ফিজিক্যাল অস্তিত্ব নেই?না, এটি মোটেও
সত্য নয়! আপেল আমাদের মস্তিষ্কের নিউরোলজিক্যাল ফাংশনে একটি ইলেক্ট্রিক্যাল
ইমপালসেশন হিসেবে তার ফিজিক্যাল অস্তিত্ব প্রকাশ করলেও আপেল শুধুমাত্র
ইলেক্ট্রিক্যাল পালসেশন নয়,
এটি ফিজিক্যালি রিয়েল।এন্ড্র নিউবার্গ
তার ‘’ব্রেন
সাইন্স এন্ড দ্যা বায়োলজি অব ব্রেইন’’
গ্রন্থে ঈশ্বরের অস্তিত্বের সাপেক্ষে রিজন প্রদর্শন করেছিলেন যে, এক্সট্রারনাল
ইউনিভার্স আমাদের মস্তিষ্কের নিউরাল ফাংশনে ইমপালসেশন হিসেবে কাজ করলেও আমরা যেমন
মহাবিশ্বকে ফিজিক্যালি অনুভব করতে পারি ঠিক তেমনিভাবে ঈশ্বর এবং প্যারানরমাল
ফিলিংসগুলিও শুধুমাত্র আমাদের ব্রেনের ইলেক্ট্রিক্যাল ইমপালসেশন নয়,ঈশ্বর আমাদের
নিউরোলজিক্যাল ফাংশন ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারেন না,আর সেজন্যেই আমরা আমাদের মস্তিষ্কের লিম্বিক সিষ্টেম, টেম্পোরাল
লোব এবং অটোনোমিক নার্ভাস সিষ্টেমের বিভিন্ন প্যারা-নরমাল ফিলিংসের মাধ্যমে ঈশরের
নিউরোলজিক্যাল উপস্থিতি উপলব্দি করতে পারি।সাদা চোখে এটি ঈশ্বরের অস্তিত্বের
সাপেক্ষে অনেক উন্নত এবং শক্ত মাপের একটি যুক্তি।
আমাদের অটোনোমিক নার্ভাস সিষ্টেম বিভিন্ন প্যারানরমাল
ফিলিংস তৈরি করতে পারে,হাইপারকুইসেন্স
এবং হাইপার-এরোজাল এক্সপেরিয়েন্স যার মধ্যে অন্যতম।
হাইপারকুইসেন্স স্টেটে আমাদের মাইন্ড দেহের উপলব্দিকে
অতিক্রম করে যাকে বুদ্বরা বলেন সমাধি।এবং হাইপার-এরোজাল স্টেটে কোনোপ্রকার কষ্ট
ছাড়াই একজন ব্যাক্তি শুধুমাত্র তার কনসাসনেসের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ শক্তি সংগ্রহ
করতে পারে।মূলত সিম্পেথেটিক নার্ভাস সিষ্টেম এবং প্যারাসিম্পেথিটিক নার্ভাস
সিষ্টেম যা আমাদের ঘুম এবং জাগরণ নিয়ন্ত্রণ করে সেগুলিকে স্টিমুলেট করে এই সকল
মানসিক অবস্থা প্রস্তুত করা হয়।কিন্তু এই প্রস্তাব কতটুকু যুক্তিসঙ্গত?কোনো কিছু
আমাদের ব্রেনে ইমপালসেশন তৈরি করলেই কি তার ফিজিক্যাল এক্সিজটেন্স আমাদের স্বীকার
করে নিতে হবে?একটি
আপেল আমাদের মস্তিষ্কে ইমপালসেশন তৈরি করে আর ঈশ্বরের অস্তিত্বের উপলব্দিও আমাদের
ব্রেনের একটি ইলেক্ট্রিক্যাল ইমপালসেশন, তাই বলে কি
ঈশ্বর আপেলের মতোই মহাবিশ্বে ফিজিক্যালি অস্তিত্বশীল?একটু অপেক্ষা
করুন।ব্যাপারটি কিছুটা ব্যাখ্যা করি।
আপনারা যারা মোনালিসার ছবি দেখেছেন তারা নিশ্চয় একটা
ব্যাপার খেয়াল করেছেন যে আপনি যেদিকেই মুভ করেন না কেনো মোনালিসার চোখ আপনাকে
অনুসরণ করছে।এবং ছোটবেলায় আমরা যখন দেখতাম যে আমরা যেদিকে হাঁটি চাঁদও আমাদের সাথে
ঠিক সেদিকেই হেঁটে বেড়ায় আমরা বিষ্মিত হতাম।কিন্তু আসলেই কি একটি স্থির চিত্র
আপনার দিকে জীবন্ত মানুষের মতো তাকিয়ে থাকে অথবা চাঁদ আপনাকে অনুসরণ করে হেঁটে
বেড়ায়?না!তা
নয়।এটি একটি আই ইলুশন।মূলত আমাদের মস্তিষ্কের সিমুলেটিং সফটওয়্যার বাস্তবতার মডেল
তৈরি করে নিরবিচ্ছন্ন ভাবে আপডেটেড ইলেক্ট্রিক্যাল ইমপালসেশন থেকে।আমরা যখন রাতের
বেলায় নির্জন কোনো ঘরে শুয়ে থাকি তখন ঘরের টিনে অনেক অপ্রাসঙ্গিক শব্দ শুনি।মনে হয়
উদ্দেশ্যমূলকভাবে কেউ আমাদের ঘরের ছাদে ঢিল ছুড়ে মারছে।এবং আমাদের মস্তিষ্কের
সিমুলেটিং সফটওয়্যার খুব শীঘ্রই ঘরের ভেতর অনেক ভূতুড়ে বাস্তবতা সিমুলেটিং করতে
থাকে, দেয়ালে
অংকিত একটি সাধারণ ড্রাগনের চোখ ভয়ানক থেকে ভয়ানক হয়ে উঠে,আমাদের
মস্তিষ্ক থেকে এড্রেনালিন হরমোন নিসৃত হয়,সিম্পেথেটিক
নার্ভাস সিষ্টেম আমাদের রক্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি করে,ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলে।অন্ধকারে একটি সাধারণ কাচের বোতল
আমাদের দিকে হিংস্র পশুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।এগুলি আমাদের বাস্তব জীবনের
অভিজ্ঞতা।এই অভিজ্ঞতাগুলি আমাদের মস্তিষ্কের নিও কর্টেক্সেই সংঘঠিত হয়,ইলেক্ট্রিক্যাল
ইমপালসেশন গুলিকে আমাদের মস্তিষ্কের এসোসিয়েশন সেন্টার এসোসিয়েট করে আমাদের
মস্তিষ্কে একটি মাল্টি-ডায়মেনশনাল রিয়েলিটি প্রস্তুত করে যা আমাদের কনসাসনেসের
বিল্ডিং ব্লক।কিন্তু প্রশ্ন হলো-কাল্পনিক ঢিল গুলি যার ফিজিক্যালি কোনো এক্সিজস্টেন্স
নেই তা কোথায় থেকে ছুটে এসেছিলো?কিভাবে
একটা কাচের পাত্র পশুর প্রতিকৃতি ধারণ করলো?কেনো
আমাদের এসোসিয়েশন সেন্টার পালসেশনগুলিকে ভুলভাবে এসোসিয়েট করলো?আর কেনোই
বা আমাদের সিম্পেথেটিক নার্ভাস সিষ্টেম
এক্সট্রারনাল ওয়াল্ড থেকে প্রাপ্ত ইলেক্ট্রিক্যাল ইমপালসেশন গুলি দ্বারা বিভ্রান্ত
হলো?তার
মানে কোনোকিছু আমাদের মস্তিষ্কে ইলেক্ট্রিক্যাল ইমপালসেশন তৈরি করলেও তার
ফিজিক্যাল এক্সিস্টেন্স থাকতে হবে এমন কোনো যোক্তিকতা নেই।আমাদের মস্তিষ্ককে
অবশ্যই চিন্তা করা উচিত একটি সিমুলেটিং সফটওয়্যার হিসেবে।আর এই সফটওয়্যার সবসময়
রিয়েলিটিকে অপেক্ষাকৃত সহয আর সরলভাবে এক্সপ্লেইন করতে পছন্দ করে।
কারণ এভুলিউশন সময় এবং শক্তি অপচয়ের ক্ষেত্রে অত্যন্ত
কৃপন।আর তাই আমাদের ব্রেন তার পূর্ব থেকে প্রাপ্ত ইনফরমেশন অনুযায়ী ইলেক্ট্রিক্যাল
পালসেশন গুলিকে ইন্টারপ্রিট করতে চায়।যাতে করে কোনো রকমে এবং খুব সহযে আমরা
রিয়েলিটির একটি মডেল তৈরি করতে পারি।আমাদের প্রযুক্তি সবসময় সময় আর শক্তির অপচয়
রোধ করতে চায় আর সেজন্যেই আমরা সবসময় অপেক্ষাকৃত উন্নত প্রযুক্তির জন্যে অপেক্ষা
করি।প্রাচীন সকল ট্যাকনোলজি আমরা পরিত্যাগ করেছি এবং অনেক
যন্ত্রপাতি আজ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত হয়েছে কারণ এভুলিউশন এমন কোনো প্রযুক্তিকে
নির্বাচন করেনা যা আমাদের সময়ের দৈর্ঘ বৃদ্বি করে এবং শক্তিকে বিপুলভাবে অপচয় করে
এবং যা আমাদের প্রজাতি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করে!সে প্রত্যাশা করে এমন
একটি প্রযুক্তি যে প্রযুক্তি স্থান এবং কালের কমপ্লেক্সিটি শূন্য।আমরা এখন হাতের
তালুকেই স্কিনটাচ হিসেবে ব্যাবহার করতে পারি।প্রাচীন কম্পিউটার জেনারেশন গুলিকে
অতিক্রম করে আমরা[বিজ্ঞান] কোয়ান্টাম
কম্পিউটারের দিকে এগিয়ে চলছি যা স্পিড অব লাইট থেকেও দ্রুত গতিতে কমিউনিকেশন করতে
পারবে, কোয়ান্টাম
কম্পিউটারের সময়ের উপলব্দি একদম শূন্য,প্লাঙ্ক
টাইম যাকে বলে।নিউটন যে ম্যাথমেটিক্যাল ফর্মুলা সামাধান করতে চার বছর সময়
অপচয় করেছেন আমাদের আধুনিক কম্পিউটার জেনারেশন গুলি সে সকল প্রবলেম সামাধান করতে
পারে এক নিশ্বাসে!মিসিও কাকুর ‘’
দ্যা ফিজিক্স অব দ্যা ইম্পসিবল’’
গ্রন্থে এমন অনেক সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে।একটা সময় আসবে, যখন আমরা
আমাদের মস্তিষ্কের স্বপ্নকে ভিডিও ফুটেজ হিসেবে কম্পিউটারাইজড করতে
পারবো।টেলিপোর্টেশনের মাধ্যমে আমরা স্পিড অব লাইট থেকেও দ্রুত গতিতে সম্ভবত একটি
অবজেক্টকে মহাবিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য আর একটি প্রান্তে সেন্ড করে দিতে
পারবো।যদি আর্থ ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ডকে আমরা ব্যাবহার করতে পারতাম, নিকোলা
টেসলা যেমন বলেছিলেন; তাহলে আমরা মহাকাশকেই রোড হিসেবে ব্যাবহার করতে
পারবো।ট্রাফিকজ্যামে আমাদেরকে ঘন্টার পর ঘণ্টা সময় অপচয় করতে হবেনা।যেদিন আমরা লুক
স্কাই ওয়াকার মুভির মতো আকাশ পথেই শর্টকাট পথ চলতে পারবো সেদিন কি আমরা সেই ঢাকার
ট্রাফিকজ্যামেই ঘণ্টার পর ঘন্টা নিজেদের
জীবনকে অপচয় করবো?সম্ভবত
তখন আমাদের প্রাচীন যন্ত্রপাতিগুলি রাস্তায়ই পড়ে থাকতো কিন্তু সেখানে কোনো মানুষ
থাকতোনা।কারণ মানুষের ব্রেনে কাজ করে ব্লাইন্ড ওয়াচমেকার এভুলিউশন যার অযথা সময় আর
শক্তি অপচয় করার কোনো মানসিকতাই নেই।যদি একটি গ্যালাক্সি থেকে অন্য আর একটি
গ্যালাক্সিতে আমরা ওয়ার্মহোলের ভেতর দিয়ে কফি পান করতে করতেই ট্রাভেল করতে পারতাম
তবে কি আমরা স্পেসশিপে ভ্রমণ করে বিশাল ইন্টারস্টেলার দূরত্ব ক্রস করতে চাইতাম?না!চাইতাম
না!কারণ এভুলিশন টাইম চয়েজ করেনা এবং এভুলিউশন স্পেসও চয়েজ করেনা সে চায় মানুষ
ট্যাকনোলজিক্যালি এমন একটি অবস্থায় পরিণত হোক যা স্পেস এন্ড টাইমলেস!আর সে জন্যেই
এভুলিউশন মানুষের মস্তিষ্কে ঈশ্বর নামক একটি ইলেক্ট্রিক্যাল পালসেশন তৈরি করেছে, সেই ঈশ্বরও
নাকি টাইম এন্ড স্পেসলেস!যার মানে তাকে ভেবে সময় আর শক্তি অপচয় করার প্রয়োজন নেই,তাকে বিশ্বাস
করেও নাও!মেক্সিমাম স্প্রিচুয়ালিস্ট- ব্লাইন্ড ওয়াচ মেকারের মতো কথা বলে,তাদের মতে
ঈশ্বর একটি আধ্যান্তিক ‘’শূন্য’’!যাকে দিয়ে
কোয়ান্টাম কম্পিউটার অথবা ওয়ার্মহোলের মতোই কোনো সময় আর শক্তি অপচয় না করেই
মহাবিশ্বের একটি ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে ফেলা যায়!এক প্রশ্নেই- আমরা মহাবিশ্বের
অস্তিত্বের কারণ জেনে যেতে পারি আর তা হলো- ঈশ্বরই এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি
করেছেন!ঈশ্বরের ব্যাপারে কোনো প্রশ্নই করা যাবেনা!তিনি প্রশ্নাতীত!তিনি
কল্পনাতীত!তিনি স্বপ্নতীত!চমৎকার একটি ব্যাখ্যা সৃষ্টি হয়েছে মানব সমাজে!যেই ব্যাখ্যা
সৃষ্টি করেছেন স্বয়ং এভুলিউশন ‘’দ্যা
ব্লাইন্ড ওয়াচ মেকার’’!কোনো
ভাবেই মানুষকে ঈশ্বরের ব্যাপারে প্রশ্ন,
স্বপ্ন বা কল্পনা সৃষ্টি করতে দিচ্ছেনা সে! কারণ এতে সময় নষ্ট হবে,শক্তি নিষ্ট
হবে!তার চেয়ে বরং এভুলিউশন চায় আমরা টিকে থাকি,ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সংরক্ষণ করি!মহাবিশ্বকে বৈজ্ঞানিক ভাবে ব্যাখ্যা
করাটা ইন্টালেকচুয়ালি অনেক কঠিন।এটি অনেক সময় আর শক্তির কাজ!
অনেক ধৈর্য আর সহ্য থাকতে হয় এ পথে, নিষ্কাম
পদার্থ বিজ্ঞানের সুত্রের মতো নিরপেক্ষ করে তুলতে হয় মস্তিষ্ককে কিন্তু প্রশ্ন আসে
যদি মহাবিশ্বকে একমাত্র বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করা শিখলেই ‘’গড ভাইরাস’’ থেকে মুক্তি
পাওয়া যায় তাহলে কেনো নিউটন ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিলিফ করতেন?কেনো
ফ্যারাডে ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করতেন?আমরা
তো তাদের তুলনায় কিছুই নয়,একেবারেই
নগন্য, একেবারেই
তুচ্ছ, একেবারেই
‘’নাথিং’’। যাইহোক
প্রচলিত ঈশ্বরের ব্যাপারে আমাদের কোনো কথা বলারই অধিকার নেই,তিনি এতটাই
অসীম ও মহৎ যে তার সম্পর্কে আমরা কিছুই বলতে পারিনা একদম ‘’নাথিং’’ থাকতে
হয়।কিন্তু সেই ঈশ্বরকে নিয়েই যেহেতু এত কথা তখন অবশ্যই বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের ঈশ্বরে
বিশ্বাসের বায়োলজি নিয়ে আমাদের মতো নগন্যের কিছু কথা বলার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়।
একজন ব্যাক্তি কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মতো ইন্টেলেকচুয়াল
হলেই যে তার মস্তিষ্কে ভাইরাস সংক্রমিত হবেনা তা ততটাই অযোক্তিক যতটা অযোক্তিক এটা
বলা যে কোয়ান্টাম কম্পিউটার কখনোই ভাইরাস সংক্রমিত হবেনা।বুদ্ধি মত্তাই ঈশ্বরের
অস্তিত্বে অবিশ্বাসের একমাত্র মানদন্ড নয়।বিখ্যাত ব্যাক্তিদের বিশ্বাসের বায়োলজি
আলোচনা করার পূর্বে আমরা আবার প্রবেশ করবো মানুষের মাথার খুলির ভেতরে, আমরা মাইক্রোস্কোপিক্যালি
দেখবো মানুষের নিউরালোজিক্যাল
ফাংশন যা বিশ্বের মডেল প্রস্তুত করছে।
একটি ভিজুয়াল ইমেজ যা ইলেক্ট্রোক্যামিক্যাল ইমপালসেশন থেকে
ক্রিয়েট হয় তা প্রবেশ করে আমাদের অপটিক নার্ভ এর ভেতর প্রবাহিত হওয়ার মধ্য দিয়ে।এই
ইমপালসের প্রথম স্টপ হলো সেরিব্রাল কর্টেক্সের প্রাইমারি ভিজুয়াল এরিয়া যেখানে
সেটি অশোধিত ভিজুয়াল এলিমেন্ট হিসেবে ট্রান্সলেটেড হয় এবং তৈরি হয় তার এবস্ট্রাক্ট
লাইন, সাইজ
এবং সেইফ।কিন্তু প্রমাণ রয়েছে যে আমরা প্রাইমারি ভিজুয়াল এরিয়াকে সচেতনভাবে অনুভব
করতে না পারলেও সাব-কনসাসলি আমরা একে অনুভব করতে পারি।ব্লাইন্ডসাইট এর একটি
ইন্টারেস্টিং দৃষ্টান্ত।ব্লাইন্ড সাইট সৃষ্টি হয় তখন যখন প্রাইমারি ভিজুয়াল
এরিয়া মর্মান্তিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় যা ভিজুয়াল ইনপুটকে সেকেন্ডারি লেবেলে প্রবেশ
করতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যেখানে সাধারণ পরিস্থিতিতে ভিজুয়াল ইমেজটিকে রিফাইন
করা হয় এবং যার ফলশ্রুতিতে ইমেজটি কনসাসনেসে প্রবেশ করে। যাদের সেইব্রাল
কর্টেক্সের প্রাইমারি এরিয়া এভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় তারা পুরোপুরিভাবে অন্ধ হয়ে যায়, যদিও তাদের
রেটিনা অথবা কর্নিয়া তখনও একদম ঠিক থাকে।অতএব অন্ধত্বের মূল কারণ চক্ষু নষ্ট হয়ে
যাওয়া নয়,অন্ধত্বের
‘’রিজন’’ মস্তিষ্কের
ভেতরের সেরিব্রাল কর্টেক্সের প্রাইমারি জিজুয়াল এরিয়া অথবা সেকেন্ডারি ভিজুয়াল
এরিয়াতেও গোপন থাকতে পারে।ঠিক তেমনিভাবে একজন ব্যাক্তি মহাবিশ্বকে বিজ্ঞান ভিত্তিক
ভাবে জানলে তার পক্ষে ঈশ্বর ভাইরাস মুক্ত হওয়া তুলনামূলকভাবে সহয ঠিকই কিন্তু কারো
মস্তিষ্কের নিও কর্টেক্সের প্রাইমারি ভিজুয়াল এরিয়া নষ্ট হয়ে গেলে যেমনিভাবে [ তার
চোখে বায়োলজিক্যালি যতই উন্নত হোক ] তার পক্ষে কখনোই মহাবিশ্বের ভিজুয়াল মডেল প্রস্তুত করা সম্ভব হবেনা ঠিক
একইভাবে নিউটন,মাইকেল
ফ্যারাডে,লর্ড
ক্যালভিন, গ্যালিলিওর
পক্ষেও বিজ্ঞানভিত্তিক ভাবে ঈশ্বর শূন্য মহাবিশ্বকে পুরোপুরিভাবে দেখা সম্ভব
হয়নি।এতে আমাদের আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই।জনৈক লেডি হোপ- স্যার ডারউইনকে ঈশ্বর
বিশ্বাসী হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন।ডারউইন নাকি মৃত্যুশয্যায় ওল্ড
টেস্টামেন্টের পাতা উলটচ্ছিলেন আর স্বীকারোক্তি করছেন- থিওরি অব এভুলিউশন সম্পূর্ণ
মিথ্যা।এটা সবার একটি দৃষ্টি আকর্ষণের বিষয় যে, ধার্মিকরা সবসময় বিজ্ঞানীদেরকেই কেনো ঈশ্বর বিশ্বাসী হিসেবে
প্রমাণ করার চেষ্টা করেন?
নিউটন যেমন নিজেকে ঈশ্বরে বিশ্বাসী হিসেবে প্রকাশ করেছিলেন
ঠিক একইভাবে উনবিংশ শতাব্দীর পূর্বে প্রায় প্রত্যেকেই ঠিক একই কাজটি করেছেন।
কারো মস্তিষ্কের প্রাইমারী ভিজুয়াল কর্টেক্স নষ্ট হয়ে গেলে
সে হয়তো বিশ্বকে দেখেনা কিন্তু তাদের মধ্যে ব্লাইন্ডসাইট নামক একপ্রকার ক্ষমতা
জন্ম হয় যা দ্বারা তারা এবস্ট্রাক্টলি প্রকৃত অবজেক্টকে চিনতে পারে এবং সঠিক
ডিরেকশনে পথ চলতে পারে।উনবিংশ শতাব্দীর সময়ে মহাবিশ্ব সম্পর্কে স্বাধীন মত
প্রকাশের ক্ষেত্রে অনেক রকমের
প্রতিবন্ধকতা ছিলো।যেমন-গ্যালেলিওকে স্বাধীন মত প্রকাশের অপরাধে কারাদণ্ড দেয়া
হয়েছিলো, ব্রুনোকে
আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিলো।উনবিংশ শতাব্দীর সময়কালের সামাজিক প্রতিবন্ধকতার
কারণেই হোক অথবা হোক এভুলিউশনাল প্রেসারে সেই সকল প্রখ্যাত বিজ্ঞানীরা স্বাধীনভাবে
তাদের মত প্রকাশ নাও করতে পারে,
ঈশ্বরের প্রতি তাদের অবিশ্বাসের সত্যতা নাও স্বীকার করতে পারে , অথবা অনেকে
সত্যি সত্যিই ঈশ্বরে বিশ্বাস স্থাপন করতেও পারে কিন্তু তাদের এই এক্সটারনাল
অন্ধত্ব আমাদেরকে এটা নিশ্চিত করতে পারেনা যে আসলেই তারা ব্লাইন্ডসাইট সম্পূর্ণ
ব্যাক্তিদের মতো প্রকৃত বাস্তবতাকে এবস্ট্রাক্টলি
জানতোনা, সেই
এবস্ট্রাক্ট বাস্তবতা হলো এই যে ঈশ্বর অস্তিত্বহীন,মহাবিশ্ব ব্যাখ্যায় কোনো ঈশ্বরের প্রয়োজন নেই,মহাবিশ্ব
সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে ‘’ল’’ অব ফিজিক্স
অনুসরণ করেই অস্তিত্বশীল হয়েছে।
তথ্যসুত্র- বাইন্ড ওয়াচমেকার,বায়লোজি অব দ্যা বিলিফ, গড ডিলুশন,
ব্রেন
সাইন্স এন্ড দ্যা বায়োলজি অব ব্রেইন
Comments
Post a Comment