কারেন ওয়ানেসের ঐশ্বরিক কবিতা এবং ঈশ্বরের অস্তিত্বের অসম্ভাব্যতা, লিখেছেন- রিসাস, পার্ট-৬
কারেন ওয়ানেসের
ঐশ্বরিক কবিতা এবং ঈশ্বরের অস্তিত্বের অসম্ভাব্যতা!
একজন ঈশ্বর যিনি সর্বজ্ঞ বা মহাবিশ্বের সকল ইনফরমেশন জানেন
তিনি অবশ্যই জানেন ভবিষ্যৎ মহাবিশ্বের সম্ভাব্য ইতিহাসগুলিতে তিনি কিভাবে
হস্তক্ষেপ করবেন। আর যিনি জানেন যে তিনি কিভাবে মহাবিশ্বের ভবিষ্যতে ইন্টারফেয়ার
করবেন তিনি কখনোই তার অসীম শক্তিমত্তা দিয়ে ইতিহাসের গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।অতএব যুক্তিবিদরা
সিদ্বান্তে এসেছিলেন যেঃ একজন সর্বজ্ঞ ঈশ্বরের পক্ষে কখনোই সর্বশক্তিমান হওয়া
সম্ভব না।আমরা সর্বজ্ঞ বলতে বুঝি যিনি ইউনিভার্সের সকল নিউজ জানেন।কিন্তু প্রশ্ন
হলো, যিনি
সকল ইনফরমেশন জানেন তাকে কি ঈশ্বর হতেই হবে?অমনিসিয়েন্সি
বা সর্বজ্ঞতাই কি ঈশ্বরের মানদন্ড?আমরা
জানি, শ্রডিঙ্গারের
কেটস থিওরির কথা।কোয়ান্টাম ফিজিক্সের কোপেন হেগেন ইন্টারপ্রিটেশন অনুসারে,সাব-এটমিক
ডায়মেনশনে পার্টিকেল গুলিতে একইসাথে এবং একইসময় ওয়েভ এন্ড পার্টিকেল ডুয়ালিটি কাজ
করে, যদি না পর্যবেক্ষক পার্টিকেলের মেজারমেন্ট ক্রিয়েট
না করে, এটাকেই
বলা হয় কোয়ান্টাম সুপারপজিশন।কোয়ান্টাম সুপারপজিশনকে বুঝতে শ্রডিঙ্গারের বিখ্যাত
কেটস থিওরিটি আমরা ব্যাবহার করে থাকি।যা আমরা আলোচনা করেছি।আপনি যদি একটি কেটসকে কোনো রেডিও
একটিভ বাক্সে রাখেন যে বাক্সের ভেতর দশমিনিট পরই রেডিও এক্টিভ এক্সপ্লোশন ঘটবে তবে
৫০ ভাগ সম্ভাবনা আছে যে আপনি বাক্সের ডোরটি যখন ওপেন করবেন তখন কেটসটিকে দেখবেন
হয়তোবা সে জীবিত অথবা মৃত।কিন্তু বাক্সের ডোরটি ওপেন করার পূর্বে যদি আপনাকে
কেটসটির পজিশন সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয় তবে আপনি তার নির্দিষ্ট কোনো উত্তর করতে
পারবেন না।কারণ আপনার মস্তিষ্কে কেটসটি একইসাথে ও একইসময় দুটি ইতিহাসেই বিদ্যমান
থাকার সমান পসিবিলিটি রাখে।কোপেনহেগেনের ইন্টারপ্রিটেশন অনুসারে, পর্যবেক্ষক
যদি মেজারমেন্ট ক্রিয়েট না করে তবে পার্টিকেলগুলিও একইসাথে ও একইসময় একাধিক
মহাবিশ্বের স্পেস এন্ড টাইমে উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা রাখে।কারণ সুপারপজিশনে একটি
সাব-এটম একইসাথে ও একইসময় ওয়েভ এন্ড পার্টিকেল দুটোই।আর তাই একটি
পার্টিকেলের স্পেস এন্ড টাইম নির্দিষ্ট হলেও তার ওয়েভ ফাংশনের স্পেস এন্ড টাইম
সুনির্দিষ্ট নয়।অতএব একটি কোয়ান্টাম সুপারপজিশনাল পার্টিকেল একইসাথে এবং একইসময়
ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন প্যারালাল মহাবিশ্বে সম্ভাবনার দিক থেকে প্রেজেন্ট থাকতে
পারে।তার নিকট অসীম বিলিয়ন মহাবিশ্বকে একটি কোয়ার্ক থেকেও মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন
মিলিয়ন্থ গুণ ক্ষুদ্র মনে হতে পারে অথবা অসীম মেটা মহাবিশ্ব তার নখদর্পণে, থিওরিটিক্যালি একটি সুপারপজিশনাল পার্টিকেলও সো-কল্ড
ঈশ্বরের মতোই অমনিসিয়েন্ট বা সর্বজ্ঞ!তাই বলে কি আমরা একটি সুপারপজিশনাল কেটসকে
তার অমসিয়েন্সির জন্যে ঈশ্বর বলবো?
কারেন ওয়ানেস ঈশ্বরের সর্বজ্ঞতা সংক্রান্ত প্যারাডক্সটিকে তার কবিতায় অত্যন্ত
সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন,
সর্বজ্ঞ ঈশ্বর কি পারেন,যিনি ভবিষ্যৎ জানেন,
অসীম শক্তি দিয়ে,তার
ভবিষ্যৎ মনকে বদলাতে?
টমাস আকোয়াইনাসের যুক্তি
খন্ডন
ডিগ্রি বা ডায়মেনশন থেকে যুক্তি বা আর্গুমেন্ট ফ্রম লজিকঃ
আমরা লক্ষ্য করেছি যে,পৃথিবীর
সবকিছু ভিন্ন।আমরা জানি যে,
একটি মাত্রা আছে সবকিছুর যেমন ভালোত্ব এবং উৎকর্ষতার।কিন্তু আমরা এই ডায়মেনশন বা
মাত্রাকে বিচার করি এই বৈশিষ্টগুলির অন্তিম একটি ডায়মেনশনকে আদর্শ হিসেবে চিন্তা
করে।মানুষ ভালো এবং মন্দ দুটো হওয়ারই পসিবিলিটি রাখে।আর তাই মানুষের পক্ষে এই
সম্ভাবনাকে অতিক্রম করে কখনোই পরম ডায়মেনশনের ভালোত্ব অর্জন করা সম্ভব নয়।এতএব উৎকৃষ্টতার
এমন একটি মাত্রা থাকার সম্ভাবনা আছে যে মাত্রা ভালোর একটি চুড়ান্ত মানদণ্ড তৈরি
করে সেই চুড়ান্ত ডায়মেনশনকে আমরা নামকরণ করতে পারি ঈশ্বর।
কিন্তু ডকিন্সের মতে এটা কোনো যুক্তিই হতে পারেনা কারণ
দুর্গন্ধেরও একটি আদর্শ মাত্রা আছে যে মাত্রার সাথে কম্পেয়ার করে আমরা গন্ধকে
সনাক্ত করতে পারি কিন্তু সেই চুড়ান্ত দুর্গন্ধকে আমরা কখনোই স্পর্শ করতে
পারিনা।শূন্য এতটাই বৃহৎ একটি সংখ্যা যে সংখ্যাকে কোনো সংখ্যা দ্বারাই স্পর্শ করা সম্ভব
নয়।যদি ভালোত্বের চুড়ান্ত একটি মাত্রা থাকে এবং সেই মাত্রাকে আমরা ঈশ্বর বলি তবে বিপরীতক্রমে দুর্গন্ধের সেই চুড়ান্ত মাত্রাও কি ঈশ্বর হওয়ার
উপযুক্ত নয়?
অতএব এভাবে আর্গুমেন্ট ফ্রম লজিক অবশেষে ফাঁকা এবং নির্বোধ
একটি যুক্তিতে পর্যবসিত হয়।
দ্যা টেলিওলজিক্যাল আর্গুমেন্টঃ একুইনাস মনে করতেন মহাবিশ্বকে দেখলে মনে হয় যে একে
ডিজাইন করা হয়েছে যদি মহাবিশ্বকে দেখলে মনে হতো যে এর ডিজাইন করা হয়নি তাহলে আমরা
কখনোই তার নকশার পেছনে কোনো ডিজাইনারকে
কল্পনা করতাম না কিন্তু যেহেতু আমাদের মনে হচ্ছে যে এ মহাবিশ্ব ওয়েল ডিজাইন্ড অতএব
এর একজন ডিজাইনার আছে।আর্গুমেন্ট ফ্রম ডিজাইন একটি মাত্র যুক্তি যা আজো ঈশ্বরের
অস্তিত্ব প্রমাণে মানুষ ব্যাবহার করে
থাকে।কিন্তু এভুলিউশন কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদকে ডিজাইন করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত
নয়।এভুলিউশনের চোখে স্পেসিফিক কোনো পারপোস
নেই। এভুলিউশনের পারপোজ শূন্য।আর ‘’শূন্য’’ সবসময়
সম্ভাবনাকে নির্দেশ করে।এভুলিউশনের চোখে মহাবিশ্বে কোনোকিছুই নেই,মহাবিশ্ব
একটি নাথিং,একেবারেই
ভয়েড,এটি
একটি প্রবাবিলিটি।কিন্তু তবুও এটি প্রাণী এবং উদ্ভিদের মধ্যে জটিল থেকে জটিলতর
ডিজাইন প্রস্তুতের সম্ভাবনা রাখে।সম্ভাবনা রাখে প্রাণীদের মস্তিষ্কে স্পেসিফিক
পারপোস টিউন করতে যা দেখে যে কারো মনে হতে পারে এটি নিছক কোনো উদ্দেশ্যহীনতার
ফলাফল নয়।এটি স্রেফ ইন্টেলেকচুয়ালিটির স্মৃতিসোধ।এভুলিউশনাল প্রসেসের বিখ্যাত কিছু
সিউডো ডিজাইনের মধ্যে রয়েছে স্নায়ুতন্ত্র,
যে তন্ত্রের সামান্যকিছু অর্জনের মধ্যে রয়েছে গোলসিকিং।গোলসিকিং হলো
উদ্দেশ্যমূলত কিছু আচরণ যা ক্ষুদ্র ইনসেক্টদের মধ্যে দেখা যায় তীর অপেক্ষা উন্নত
এবং জটিল হিট সিকিং ক্ষেপনাস্ত্রের মতো।
Comments
Post a Comment